এক বর্ষা মৌসুমেই নগরের সড়কগুলোর অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়ক। নগরের প্রধান সড়কের ১৭০ কিলোমিটার অংশই এখন খানাখন্দে ভরা। এর বাইরে ওয়ার্ড পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর অবস্থাও বেহাল। চলতি বর্ষা মৌসুমে এ ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার না করায় দুর্ভোগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। একইসঙ্গে যাত্রাপথ হয়ে উঠেছে অসহনীয়।
সবচেয়ে করুণ অবস্থা দেখা গেছে পোর্ট কানেকটিং রোডে। এছাড়া সদরঘাট স্ট্র্যান্ড রোডের পুরোটা বিশাল গর্তে রূপ নিয়েছে। এসব গর্তের কোথাও কোথাও পানি জমে আছে। অন্য জায়গা কাদা পানিতে একাকার হয়ে গেছে। ভাঙা সড়কটিতে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পাঁচলাইশ-অক্সিজেন সড়কের বিভিন্ন স্থানেও বেহাল অবস্থা। মির্জাপুলের সামনে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এছাড়া পাহাড়তলী ডিটি রোডের বিভিন্ন অংশে পানি জমে আছে। চকবাজার, বহদ্দারহাট, ঈদগাহ ও আরাকান সড়কেও গর্ত দেখা গেছে।
সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) দায়িত্বশীলদের দাবি, অনুকূল আবহাওয়া না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কারে বেগ পেতে হচ্ছে। তারা বলছেন, বেশ কিছুদিন আগেই ভাঙা সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল। প্রায় ৬০ ভাগ কাজ শেষও হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বর্ষণে সড়কগুলো আবারো পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের সংস্কার বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা প্রিলিমিনারি একটা অ্যাসেসমেন্ট করেছি। প্রধান সড়কের প্রায় ১৭০ কিলোমিটার ক্ষতি হয়েছে। ইন্টার্নাল (অভ্যন্তরীণ) সড়কের অ্যাসেসমেন্ট এখনো করা হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে রিপেয়ার কাজ করছি। অভ্যন্তরীণ সড়কে অক্টোবরে প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করব। বৃষ্টি শেষ না হওয়ায় এখন প্রকল্পের মাধ্যমে করছি না। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ১৭০ কিলোমিটার সড়কের কিছু অংশে শুধু কার্পেটিং করলে হবে। কিছু জায়গায় আরো বেশি কাজ করতে হবে। আপাতত আমরা বড় বড় গর্ত যেখানে আছে সেখানে রিপেয়ার করব।
এমন পরিস্থিতিতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি। পাশাপাশি পরিবহন মালিকরা দাবি করছেন, সড়কের নাজুক অবস্থার কারণে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ায় তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রতিবছর বর্ষা এলে পানির প্রভাবে সড়কের বিটুমিন উঠে যায়। বিটুমিন উঠে গেলেই বেরিয়ে আসে ইট-কংক্রিট। পরবর্তীতে গাড়ির ভারে তৈরি হয় গর্ত। সম্প্রতি নগরের সড়ক সংস্কারে ২০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক পত্রে চসিকের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, নগরীর রাস্তাঘাট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমে অতি দ্রুত মেরামত করে সচল রাখা অপরিহার্য। চসিক প্রশাসক বলেন, বৃষ্টির জন্য কাজ করতে পারছি না। একদিকে কাজ করি, অন্যদিকে বৃষ্টির কারণে তা আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। ইতোপূর্বে আমরা ৬০ ভাগ কাজ করেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তা আবারো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এই পরিস্থিতি প্রতিবছরই হয়। বিভিন্ন সেবা ও উন্নয়ন সংস্থার সড়ক খোঁড়াখুঁড়িও সড়ক দুর্ভোগের অন্যতম কারণ। বাংলাদেশে সড়কনির্মাণ ব্যয় বিশে^র অন্যান্য দেশের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। এরপরও সড়কগুলোর স্থায়িত্ব অত্যন্ত কম। এসব বিষয় নিয়ে বিস্তর কথা হয়েছে, দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। সড়ক সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে এর দুর্নীতি দূর করার উদ্যোগ না নিলে কাজের কাজ কিছু হবে না।
মতামত