গোপাল নাথ বাবুল »
ফ্লেক্সিলোড পাঠানোর পর ছোটোভাইয়ের কাছ থেকে উপহার পাওয়া নতুন সিম থেকে মিমি কল দিল ব্যাংক অফিসার মিলন সাহেবের মোবাইলে। সঙ্গে সঙ্গে মিলন সাহেব কলরিসিভ করে বললেন, হ্যালো, কে বলছেন?
মিমি তার কণ্ঠ একটু পরিবর্তন করে বলল, ভাইয়া, আমাকে আপনি চিনবেন না। একটা নাম্বার ভুল হওয়ায় আপনার মোবাইলে আমার ফ্লেক্সিলোডের ৫০ টাকা চলে গেছে। তাই আমার এই নাম্বারে যদি টাকাটা আবার লোড করে দেন, তাহলে কৃতজ্ঞ থাকব।
আচ্ছা, অফিস শেষে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
ওকে ভাইয়া, অপেক্ষায় থাকলাম। ভালো থাকবেন।
বিকেল পাঁচটার পরে মিমি দেখল, মিলন তার মোবাইলে ৫০০ টাকা পাঠিয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে কল দিয়ে বলল, ভাইয়া, ৫০ টাকার পরিবর্তে আপনি ৫০০ টাকা পাঠিয়েছেন কেন ?
সমস্যা নেই। ৫০০ কেন, ৫০০০ টাকা দিতেও রাজি আছি। ময়নাপাখির মতো যা সুন্দর কণ্ঠ আপনার! ইচ্ছে করছে সারাজীবন কথা বলি। তারপর জিগ্যেস করল, আচ্ছা আপু, আপনার পরিচয়টা দেবেন ?
জী ভাইয়া, আমার নাম সামিনা আক্তার। আমি একটা ইশকুলে ইংরেজি পড়াই। আমার বাড়ি চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট। তারপর মিলনকে জিগ্যেস করল, আপনার পরিচয়?
আমার নাম মিলন। আমি একটা ব্যাংকের অফিসার। বাড়ি মিরসরাই। থাকি চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায়। তারপর জিগ্যেস করল, আচ্ছা আপু, আপনি কী বিবাহিত?
হুঁ, বিবাহিত ছিলাম। এক বছর আগে বনিবনা না হওয়ায় আমি নিজেই তালাক দিয়েছি। আপনি?
আমারও একই অবস্থা। তবে তালাক নয়, বছরখানেক আগে প্রথম সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে বৌ মারা গেছে। মনের মতো মেয়ে পাচ্ছি না বলে দ্বিতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে বসিনি। তবে আপনার মিষ্টিকণ্ঠের কথাগুলো শুনতে খুব ভালো লাগছে। দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। যদি পারেন, একটা সিএনজি ট্যাক্সি নিয়ে চলে আসুন নিউমার্কেটের বিপরীতে জামান রেস্টুরেন্টে। নাশতা-পানি করতে করতে আলাপ করব।
না ভাইয়া, আজ পারব না। কালকে চেষ্টা করে দেখতে পারি। তবে খুশি হব যদি আপনার একটা ছবি পাঠান।
মিলন সেই ছবিটা পাঠিয়ে দিল, যে ছবিটা মিমিই মিলনকে বঙ্খাটে বসিয়ে তুলেছিল। মিমিও গুগল ঘেঁটে অপূর্ব সুন্দরী এক মেয়ের ছবি সেন্ট করল মিলনের মোবাইলে।
ছবি দেখে মিলন বলল, আপনি তো দারুণ সুন্দরী! একেবারে আমার মনের মতো। কাল তাহলে ঠিক পাঁচটায় জামান হোটেলে চলে আসবেন। ট্যাক্সি ভাড়া নিয়ে ভাববেন না। ভাড়া আমিই দেব।
ওকে। বলে মিমি ফোনটা বন্ধ করে ভাবতে লাগল, মিলনের চরিত্র সম্পর্কে তার বান্ধবীর কথা হুবহু মিলে গেল। মা-বাবার কথা অমান্য করে মিলনকে বিয়ে করেছিল মিমি। আজ বুঝল, মিমি কত বড় ভুল করেছে। ফুলের মত ফুটফুটে দুটো সন্তান হওয়ার পর মিলনের এ ব্যবহার সত্যি মিমিকে খুব পীড়া দিল। সিদ্ধান্ত নিল, মিলনকে কঠিন শাস্তি দেবে।
পরের দিন জামান হোটেলে পাশাপাশি বসে আলাপে মশগুল দুজন। দুজনই আপনি থেকে তুমিতে নেমে এল। সামিনা মুখঢাকা বোরকা পরে এসেছে। হাতে-পায়ে কালো মোজা। মিলন লক্ষ করল, সামিনার উচ্চতাসহ দেহের গড়ন প্রায় মিমির মতই। তাই রাখঢাক না রেখে বলল, জান, তোমার গড়ন প্রায় আমার প্রথম স্ত্রীর মত। তাই আমি আজ থেকে তোমাকে মিমি বলেই ডাকব। তাতে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো ?
না, আপত্তি থাকবে কেন। তুমিও হুবহু আমার ‘ওনার’ মতো। কিন্তু ওনার সঙ্গে আমার মনের মিল ছিল না। তাই তোমাকে আমি ‘মিলন’ নামেই ডাকব। কারণ, মিলন নামটা আমার খুবই প্রিয়।
মিমির কথা শুনে মিলন হেসে দিল। তারপর মিমির হাতটা টেনে ধরে বলল, তোমার হাতটা খুবই নরম। মোজাটা একটু খোল, ভাল করে দেখি।
মিমি হাতটা টান দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, না, তুমি এই মুহূর্তে আমার কাছে পরপুরুষ। বিয়ের পর যা চাও, তাই পাবে।
বিয়ের কথা শুনে মিলন চমকে ওঠে বলল, বিয়ের ব্যাপারটা পরে ভাবলে হয় না ?
তাহলে সবকিছু বিয়ের পরেই হোক।
মিলন ভাবল, এ মেয়েকে সহজে পটানো যাবে না। কৌশলে কাজ হাসিল করতে হবে। মিমির কথা শুনে মিলন বলল, কিন্তু আমি তো তোমাকে এখনই ঘরে তুলতে পারব না। মা-বাবাসহ আত্মীয়স্বজন সবাইকে বুঝিয়ে রাজি করাতে হবে, তারপর …
কথা শেষ করতে না দিয়ে মিমি বলল, তাতে কোনো সমস্যা নেই। পরে অনুষ্ঠান করে ঘরে তুলে নিও। এখন বিয়েটা হয়ে যাক।
মিমির কথা শুনে মিলনের চোখ খুশিতে চিকচিক করে ওঠে। মিলন বলল, তাহলে কালকেই বিয়েটা সেরে ফেলা যাক, কী বল?
মিমি আর একটু গা ঘেঁষে বসে বলল, অফ কোর্স। তাহলে এখন উঠি? মিলন বললো, ওকে।
কাজি অফিস। কাজি সাহেব নাম-ঠিকানা সম্পূর্ণ লেখার পর মিলনকে জিগ্যেস করল, এটা কি আপনার প্রথম বিয়ে নাকি দ্বিতীয়?
মিলন বলল, দ্বিতীয় বিয়ে।
প্রথম স্ত্রীর অনুমতি আছে তো?
প্রথম স্ত্রী এক বছর আগে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছে বলে মিলন একটু কান্নার অভিনয় করল এবং পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছে নিল।
তারপর মিমিকে জিগ্যেস করল, আপনার প্রথম বিয়ে নাকি দ্বিতীয়?
মিমি বলল, আমার দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম স্বামীকে কিছুক্ষণ আগেই মনে মনে তালাক দিয়েছি। আমার নাম আফসানা মিমি। বাবার নাম মোহাম্মদ রফিক। মায়ের নাম জেবুন্নেসা বেগম, পেশা গৃহিণী। বর্তমান ঠিকানা-৫৫/৪, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম।
মিমির কথাগুলো শুনে আঁতকে ওঠে মিলন বলল, কী বলছ তুমি? তুমি আসলে কে বল তো?
মিমি এক ঝটকায় নিজের মুখোশসহ হিজাব খুলে বলল, আমি সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে এক বছর আগে মারা যাওয়া মিমি। এই মাত্র কবর থেকে ওঠে এলাম, চিনতে পারছ? এতদিন বিভিন্ন জনের কাছে শুনে এসেছি, আজ নিজ চোখে দেখলাম, তোমার চরিত্র। কী করিনি তোমার জন্য? দু’টা ফুটফুটে সন্তান দিয়েছি। কী নেই আমার কাছে, যা তুমি মান-সম্মান বিসর্জন দিয়ে অন্য মেয়ের কাছে দিনের পর দিন খুঁজে বেড়াচ্ছ ? আজ যে চাকরি করছ, সেটাও আমার বাবার কল্যাণে পেয়েছ, অস্বীকার করতে পারবে? এত কিছুর পরেও তুমি …
হঠাৎ মিমির হাত দু’টো চেপে ধরে কাঁদতে-কাঁদতে মিলন বলল, তুমি আজ আমার চোখ খুলে দিয়েছ। আমাকে এবারের মতো ক্ষমা করে দাও মিমি। আমি আর কোনোদিন এই ভুল করব না, তোমার মাথায় হাত রেখে কথা দিলাম।
মিমিও জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। কাজি সাহেব এতক্ষণ হতবাক হয়ে দেখছিলেন তাদের কা-কারখানা। এবার সবকিছু বুঝতে পেরে বললেন, ও আচ্ছা এতক্ষণে ব্যাপারটা বুঝেছি। পরকীয়া। এত সুন্দর বউ থাকতে তুমি পরকীয়া করে বেড়াও। আসলে তুমি একটা দুর্ভাগা।