চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সেমিনার হলে রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচিউরিটি (আরওপি) বিষয়ক সেমিনার গতকাল সোমবার বেলা ১২টায় অনুষ্ঠিত হয়।
হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের উদ্যোগে ও অরবিস ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার। তিনি বলেন, আরওপি এমন একটি রোগ, যা অপরিণত নবজাতক শিশুদের রেটিনায় রক্তক্ষরণ ও ক্ষত সৃষ্টি করে। এর পরিণাম হয় আজীবনের জন্য অন্ধত্ব। তবে অপরিণত নবজাতক শিশুদের জন্মের এক মাসের মধ্যে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এবং কম খরচেই এই অন্ধত্ব মোকাবিলা সম্ভব।
স্বাগত বক্তব্যে অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর ডিরেক্টর অব প্রোগ্রামস মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অরবিস ইন্টারন্যাশনাল ১৯৮২ সালে তার যাত্রা শুরুর পর বাংলাদেশে ১৯৮৫ সাল থেকে কাজ করছে। অরবিস ২০১২ সালে ঢাকায় একটি হাসপাতালে আরওপি প্রকল্পের মাধ্যমে পরীক্ষা ও চিকিৎসাকেন্দ্র চালু করে। সব জেলায় আরওপি চিকিৎসাসেবা পৌঁছানো প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, আরওপি সেবা প্রদানে কয়েকটি জেলাতে মানবসম্পদ তৈরি করেছি। শিশুদের জন্য একটি সাজানো বাগান করতে চাই এবং এই বাগান তাদের দেখতে দিতে হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চমেক হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. উৎপল সেন। তিনি বলেন, আরওপি প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য জনসচেতনতা, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও দক্ষ জনশক্তি ও সমন্বিত নবজাতকের মানসম্মত সেবা খুব সীমিত সংখ্যক হাসপাতালে আছে। আরওপিজনিত অন্ধত্ব দূর করতে হলে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। এভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দৃষ্টি সুরক্ষা করার মাধ্যমে তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে একটি উৎপাদনশীল জীবন উপহার দিতে পারি।
বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অ্যাসোসিয়েট কনসালটেন্ট (রেটিনা) ডা. সাহেলা শারমিন। হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. তনুজা তানজিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন চমেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শর্মিলা বড়ুয়া, পেডিয়েট্রিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ, ডা. রাশেদা সামাদ, ডা. এস এম তারেক।
ডা. সৈয়দা ফারিয়া তুজ ফাতিমা ও ডা. অনিন্দিতা চৌধুরীর যৌথ উপস্থাপনায় বক্তারা বলেন, জন্মের মাত্র কয়েকদিন আগে অপরিণত শিশুর চোখও অপরিণত থাকে বিধায় নানা রোগ দেখা দেয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর জন্ম নেয়া ৩০ লাখ শিশুর মধ্যে প্রায় চার লাখ শিশু অপরিণত। এ সংখ্যা জন্ম নেওয়া শিশুর মোট সংখ্যার সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি। জন্মের ২০-৩০ দিনের মধ্যে চক্ষু পরীক্ষার মাধ্যমে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা না করালে শিশু পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইউনিসেফের সহায়তায় চমেক হাসপাতালে আরওপি নির্ণয়ে স্ক্যানিং শুরু হয়েছে।
সেমিনার শেষে ক্রেস্ট দিয়ে অতিথিদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি
দেশে বছরে জন্ম নেয় চার লাখ অপরিণত শিশু
চমেক হাসপাতালে সেমিনারে বক্তারা