এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
ভূঁইয়া নজরুল :
পতেঙ্গার কাটগড় এলাকার সিএনজিচালক বশির আহমেদ। গত সোমবার দুপুরে পতেঙ্গা থেকে ইপিজেড মোড়ে যাত্রী নিয়ে আসতে ১০ মিনিটের পথ লেগেছে এক ঘণ্টা। আবার যাওয়ার পথেও একই দুর্ভোগ। তাই বশির আহমেদের আক্ষেপ, ‘যতোদিন ফ্লাইওভারের কাজ চলবে ততোদিন আর এদিকে (ইপিজেডের) আসব না।’ তবে পিলার বসানোর পর যানজটের মাত্রা কমে আসে বলে জানান বশির আহমেদ। এখন যেহেতু ইপিজেড থেকে নেভি হাসপাতাল গেইট পর্যন্ত কাজ চলছে তাই এলাকায় দীর্ঘ যানজট দেখা যাচ্ছে।
সিএনজি চালক বশির আহমেদের সঙ্গে একমত পোষণ করে ইপিজেড মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ আবুল কালাম বলেন, ‘ফ্লাইওভারের কাজ যতোদিন ধরে চলছে ততোদিন এ যানজট দুর্ভোগ চলবে। কবে নাগাদ এ দুর্ভোগ শেষ হবে তা বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে গত সোমবার দুপুরে এক কিলোমিটার এলাকার ব্যারিস্টার সুলতান আহমেদ কলেজ থেকে নেভি গেইট পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট দেখা যায়। প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরত্ব পার হতে এক ঘণ্টার বেশি সময় যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে। আর যানজটকে আরো দীর্ঘায়িত করছে বন্দরটিলায় নেভি কলোনির সামনে গাড়ি ঘুরানোর ব্যবস্থা থাকায়। একে তো ফ্লাইওভারের কাজের জন্য রাস্তার মাঝখানে টিনের বেষ্টনি দিয়ে রাস্তার চওড়া কমানো হয়েছে। একইসাথে গাড়ি ঘুরতে যাওয়ার সময় রাস্তার উভয়পাশেই যানজট দীর্ঘায়িত হয়। তবে ইপিজেড থেকে পতেঙ্গার দিকে যেতে যানজট বেশি এবং আসার সময় কম দেখা যায়। কিন্তু নেভি হাসপাতালের পর পিলারের বসানোর কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় আর যানজট তেমন একটা নেই।
এ বিষয়ে পতেঙ্গার কাটগড় এলাকার বাসিন্দা ও লেখক মাজহারুল আলম তিতুমির বলেন, ‘ ফ্লাইওভারের কাজ করতে থাকায় আমরা দুর্ভোগের শিকার। এই দুর্ভোগের পর যদি স্বস্তি পাওয়া যায় তাহলে হয়তো এলাকার মানুষ সুফল পাবে। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো গতি নেই।’
একই কথা বলেন ইপিজেডের চাকরি করা মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘আমার বাসা বন্দরটিলা আকমল আলী রোডে। ফ্লাইওভারের কাজ চলতে থাকায় এখন হয়তো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, কিন্তু এর আগেও আমরা ইপিজেড, সল্টগোলা এলাকার জ্যামের কারণে নগর থেকে এক ধরনের বিচ্ছিন্ন ছিলাম। এখন ফ্লাইওভার হলে যদি এ দুর্ভোগ কমে আসে সেই অপেক্ষায় আছি।’
তবে এই ফ্লাইওভার তথা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে পতেঙ্গা এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কমে আসবে এবং শহরের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমও সহজ হবে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রকৌশলীরা।
এ বিষয়ে কথা হয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হবে। মূলত এটি হচ্ছে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের (মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার) বর্ধিত অংশ। এর মাধ্যমে শহর থেকে দ্রুত বিমানবন্দর ও পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে যাতায়াত করতে পারবে মানুষ।’
কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মানুষের যে দুর্ভোগ হচ্ছে- এ প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘মানুষের দুর্ভোগ কমানোর জন্যই আমরা খ- খ- করে কাজ করছি। পিলারের কাজ শেষ হলেই রাস্তার ব্যারিকেড উঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এজন্য বর্তমানে নেভি গেটের পর থেকে কাটগড় পর্যন্ত জ্যাম হয় না। তবে পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নের পর এলাকার মানুষ অনেক স্বস্তি পাবে।’
জানা যায়, লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত। এ অংশে পিলার বসানোর কাজ শেষ। এখন গার্ডার বসানোর প্রস্তুতি চলছে। দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে সল্টগোলা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত। এখন এ অংশে পিলার বসানোর কাজ চলছে। তৃতীয় ধাপে রয়েছে বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত। চতুর্থ ধাপে বারিক বিল্ডিং থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত। তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের কাজ এখনো শুরু হয়নি।
উল্লেখ্য, সরকারি অর্থায়নে ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স রেনকিন জেভি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম শহর থেকে বিমানবন্দরমুখী মানুষ দ্রুত যাতায়াত করতে পারবে। একইসাথে সাগরপাড়ে আউটার রিং রোড চালু হচ্ছে, সেই রোড দিয়েও মানুষ সহজে বিমানবন্দর যেতে পারবে। অর্থাৎ বিমানবন্দরমুখী যাতায়াতে আগে যেখানে মাত্র একটি রাস্তা ছিল এখন বিকল্প রাস্তাও তৈরি হচ্ছে। এতে চট্টগ্রাম মহানগরীর যাতায়াত ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসবে।