সুপ্রভাত ডেস্ক »
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন এবং অর্থ পাচারের দায়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে কয়েকটি ধারা মিলিয়ে মোট ২০ বছর এবং তার স্ত্রী চুমকি কারণকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সেই সঙ্গে অবৈধভাবে যে সম্পদের মালিক তারা হয়েছেন, তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছে আদালত। খবর বিডিনিউজের।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ বুধবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মাহমুদুল হক মাহমুদ বলেন, প্রদীপ একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে যে সম্পদ অর্জন করেছেন, তা স্ত্রী ও শ্বশুরের নামে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও ভোগ দখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন, এটা প্রমাণিত হয়েছে।
রায় ঘোষণার আগে সকালে প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। আদালত স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদের রায় ঘোষণা করে।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে এপিবিএন চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় সেসময়ের টেকনাফের ওসি প্রদীপ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তার অবৈধ সম্পদের খোঁজে তদন্তে নামে দুদক।
ওই বছর ২৩ অগাস্ট দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে মামলা করেন।
তাদের বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয় মামলায়।
তদন্তের পর টাকার অংকে কিছু পরিবর্তন হয়। ওসি প্রদীপ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে যে সম্পদ অর্জন করেছেন তা স্ত্রী ও শ্বশুরের নামে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও ভোগ দখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগপত্রে যে সব সম্পদের উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলো- নগরীর পাথরঘাটায় একটি ছয় তলা বাড়ি, ষোলশহরে সেমিপাকা ঘর, ৪৫ ভরি সোনা, একটি করে কার ও মাইক্রোবাস এবং কক্সবাজারে ফ্ল্যাট।
নগরীর কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা এলাকার একটি ছয়তলা বাড়ি প্রদীপ কুমার দাশ ‘ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে অর্জিত অর্থ গোপন করার জন্য শ্বশুরের নামে নির্মাণ করেন বলে উল্লেখ করা হয়। পরে ওই বাড়িটি প্রদীপ দাশের শ্বশুর তার স্ত্রী চুমকি কারণের নামে দান করেন।
আয়কর রির্টানে আসামি চুমকি কারণের কমিশন ব্যবসা এবং বোয়ালখালী উপজেলায় ১০ বছরের জন্য লিজ নেওয়া পাঁচটি পুকুরে মাছের ব্যবসার যে আয় দেখানো হয়েছে তাও স্বামী প্রদীপ দাশের জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জনের পর স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের উদ্যেশ্যে ভুয়া ব্যবসা প্রদর্শন করে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করে দুদক। মাছ চাষের ব্যবসার যে হিসেব দেখানো হয়েছে তার বাস্তবে অস্তিত্ব নেই বলে দুদকের তদন্তে উঠে আসে।
এর আগে গত বছরের ২৯ জুন দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারনের জব্দ করা সম্পত্তি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের জিম্মায় থাকবে বলে আদালত আদেশ দিয়েছিল। এখন তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হবে।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামল বিচারে আসে।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী করা হয়েছিল মোট ২৯ জনকে। তাদের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিনসহ ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।
মামলার শুরু থেকে চুমকি কারণ পলাতক থাকলেও গত ২৩ মে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের শেষদিন তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
সিনহা হত্যা মামলার রায়ে প্রদীপ কুমার দাশের সঙ্গে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকেও মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে কক্সবাজার জেলা আদালত।