খাগড়াছড়ি জেলার দুর্গম পাহাড়ি গ্রামগুলিতে বিশুদ্ধ পানির অভাবে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে অধিবাসীদের। আমাদের খাগড়াছড়ি প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, জেলার দীঘিনালা, গুইমারা, খাগড়াছড়ি সদর, পানছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকার গ্রামগুলিতে পানির উৎস প্রাকৃতিক ছড়া, ঝিরি ও কুয়া শুকিয়ে যাওয়ায় চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন মানুষজন। মাইলের পর পর মাইল হেঁটেও পানির সন্ধান মিলছে না, কোথাও সন্ধান পেলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল, ফলে খালি কলসি নিয়েই অনেককেই ফিরতে হয়। নিত্যব্যবহার্য এবং বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবে নানা অসুখÑবিসুখ তাদের নিত্যসঙ্গী, বয়স্ক অসুস্থ মানুষের কষ্ট সীমাহীন। প্রয়োজনীয় পানির অভাবে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে এই গ্রামগুলিতে। স্থানীয় অধিবাসী, জনপ্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, সুপেয় পানির সংকট সমাধানে জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর প্রকল্প গ্রহণ করলে এর সুরাহা সম্ভব। পাহাড়ে পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলি শুকিয়ে যাওয়ার মূলে রয়েছে বৃক্ষ কর্তন, পাথর উত্তোলন, ময়লা আবর্জনা নিক্ষেপসহ অন্যান্য কারণ। বৃক্ষ উজাড় হয়ে যাওয়ায় পাহাড়গুলি ন্যাড়া হয়েছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বাণিজ্যিকভাবে বৃক্ষ কর্তন, পাথর উত্তোলন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পর্যটকদের পরিবেশবান্ধব আচরণ না করা পানির উৎসগুলি শুকিয়ে যাওয়ার কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। তদুপরি এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাত হয় কম, আবহাওয়াও উষ্ণ থাকে।
খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী যে সব পাহাড়ি এলাকায় পানির সংকট বা উৎস নেই, সে সব এলাকা জরিপ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমাদের প্রতিবেদককে জানান। এ সংস্থার তথ্যমতে জানা গেল, চলমান অর্থবছরে ৩৪টি গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ চলছে। দুর্গম এলাকায় পানির সংকট দীর্ঘদিনের। এ সংকটের বিষয় সরকারি প্রশাসনের অজানা নয় তবুও বছরের পর বছর মানুষের পনির সংকট ঘোচে না। আধুনিক প্রযুক্তির এই উৎকর্ষের সময়েও প্রশাসন মানুষের কষ্টÑদুর্ভোগ মোচনে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছে না, এটি প্রত্যাশিত নয়।
দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা প্রয়োজন। বিদ্যুতের জন্য সোলার সিস্টেম উপযোগী, পাহাড়ের কিছু কিছু এলাকায় এই ব্যবস্থা আছে। গভীর নলকূপ স্থাপন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা, পাইপের সাহায্যে পানি সরবরাহ যে ভাবেই হোক না কেন, মানুষের পানির কষ্ট দূর করতে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অথবা জেলা পরিষদ এ ব্যাপারে প্রকল্প নিতে পারে। সকল নাগরিক যাতে সংবিধানে প্রদত্ত স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের সুবিধাদি ভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করা জনপ্রশাসনের দায়িত্ব। দুর্গম এলাকায় পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলির প্রবাহ সচল রাখতে অধিবাসীদের সচেতন হতে হবে, প্রকৃতি ও পরিবেশ বিরোধী সকল কর্মকা- থেকে বিরত থাকতে হবে সকলকে।
মতামত সম্পাদকীয়