নিজস্ব প্রতিবেদক »
চট্টগ্রামে মিথ্যা মামলায়, মিথ্যা পুলিশের রিপোর্ট ও সাক্ষী দেওয়ার অভিযোগে পুলিশের দুই এসআই এর বিরুদ্ধে মামলা করেন বিচারক। মামলাটি গ্রহণ করে দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার শিশু আদালত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ চট্টগ্রামের বিচারক ফেরদৌস আরা সকালে সিএমএম জুয়েল দেবের আদালতে এই আবেদন করেন। আসামিরা হলেন- পতেঙ্গা থানার এসআই আনোয়ার হোসেন ও সুবীর পাল।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর পিপি খন্দকার আরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিচারক মিথ্যা মামলায়, মিথ্যা পুলিশের রিপোর্ট ও সাক্ষী দেওয়ায় এসআই আনোয়ার হোসেন ও সুবীর পালের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
ওই কিশোরের আইনজীবী জানান, কিশোরটির আত্মীয় এইচএম সুমন শুল্ক বিধান না মেনে দুটি স্বর্ণের বার নিয়ে আসেন বাহরাইন থেকে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় সুমনকে আটক করে বিমানবন্দর কাস্টমস। পরবর্তীতে শুল্ক পরিশোধ করে সোনার বার দুটি নিজ হেফাজতে কিশোরটির কাছে হস্তান্তর করেন সুমন। পরে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসার সময় বাটারফ্লাই পার্কের সামনে থেকে ‘অবৈধভাবে সোনার বার বহন করেছে’ এমন অভিযোগে ওই কিশোরকে থানায় নিয়ে যান এসআই আনোয়ার। পরে উদ্ধার করা স্বর্ণের বার দুটির মধ্যে একটি দাবি করে কিশোরকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয় পুলিশ। কিন্তু তার মা স্বর্ণের বৈধ কাগজপত্র দেখান ও পুলিশের প্রস্তাবে রাজি হননি। ফলে ওই কিশোরের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে পুলিশ।
অপরদিকে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কাস্টমস অফিস হতে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ না করে এসআই আনোয়ার হোসেনকে রক্ষা করতে আদালতে মিথ্যা প্রতিবেদন জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সুবীর পাল।
উল্লেখ্য, প্রকৃত সত্য জানার পরও মিথ্যা প্রতিবেদনের পক্ষে পুলিশ মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন আদালত।
ওই কিশোর সম্পূর্ণ নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দুটি সোনার বার অভিযোগে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার বাটারফ্লাই পার্ক থেকে নাজমুল হাসান জুয়েল (১৫) নামে এক কিশোরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই মামলায় এক মাস ৬ দিন হাজতবাস করে ২৮ মে সে জামিন পায়। তদন্ত শেষে কিশোর নাজমুলকে অভিযুক্ত করে একই বছরের ৩ অক্টোবর আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। পরে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর কিশোরটি নির্দোষ বলে রায় দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ চট্টগ্রামের বিচারক ফেরদৌস আরা। রায়ের পর্যবেক্ষণে মিথ্যা মামলার এজাহারকারী এসআই মো. আনোয়ার এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুবীর পালের বিরুদ্ধে মিথ্যা এজাহার দায়ের, মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল ও আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার অভিযোগে পেনাল কোডের ১৭৭, ১৮১, ১৯৩ ও ২১১ ধারায় মামলা দায়েরের নির্দেশনা প্রদান করেন আদালত।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ সহকারী সৈয়দ নূর-এ-খোদা বলেন, মামলাটি গ্রহণ করে দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।