দুই আওয়ামী লীগ নেতার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে পারেন মনজুর

চট্টগ্রাম ১০ আসন

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে লড়ছেন নৌকা প্রতীকে। তার বিপরীতে রয়েছেন নয়জন প্রার্থী, তারমধ্যে দুজন স্বতন্ত্র।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, চট্টগ্রাম-১০ আসনের নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের শুলকবহর-৮, দক্ষিণ কাট্টলী-১১, সরাইপাড়া-১২, পাহাড়তলী-১৩, লালখান বাজার-১৪, উত্তর আগ্রাবাদ-২৪, রামপুর-২৫ ও উত্তর হালিশহর-২৬ নম্বর ওয়ার্ড। এই আটটি ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪৭৮ জন। এরমধ্যে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৭৬ জন পুরুষ, ২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৯ জন নারী ও ২৬ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে ২০ হাজার ২৩২ জন ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছে এখানে এবং প্রথমবারের মতো ২৬ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
আসনটিতে লড়ছেন সোনালী আঁশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপির ফেরদাউস বশির, চেয়ার প্রতীকের ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের আবুল বাশার মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন বাচ্চু, ফুলকপি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম, লাঙল প্রতীকে জাতীয় পার্টির জহরুল ইসলাম রেজা, একতারা প্রতীকে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মিজানুর রহমান, কেটলি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ মাহমুদ, মশাল প্রতীকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) আনিছুর রহমান, মোমবাতি প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ আলমগীর ইসলাম বঈদী। এরমধ্যে মহিউদ্দিন বাচ্চু সম্প্রতি হওয়া উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা নিয়ে জিতে বর্তমানে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ভোটাররা যা বলছে
নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বেশ সরগরম রয়েছে এ আসনটি। এতে নয়জন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও ভোটের মাঠে সরব দেখা যাচ্ছে মহিউদ্দিন বাচ্চু, মোহাম্মদ মনজুর আলম ও ফরিদ মাহমুদকে। এর মধ্যে মহিউদ্দিন বাচ্চু বর্তমান সংসদ সদস্য এবং মোহম্মদ মনজুর আলম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র থাকায় দুই জনের জনপ্রিয়তা শীর্ষে। তবে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক জীবনে জনসম্পৃক্ততা কম নয় আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ মাহমুদের। ভোটার এ তিন প্রার্থীকে মূল্যায়ন করলে দুই আওয়ামী লীগ নেতার প্রতিযোগিতায় মনজুর এগিয়ে যেতে পারেন এমন মন্তব্য করছেন ভোটাররা।
গতকাল (মঙ্গলবার) মহিউদ্দিন বাচ্চু প্রচারণা করেছেন দক্ষিণ আগ্রাবাদে এবং মনজুর প্রচারণা করেছেন রামপুরে।
নয়াবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. জাহেদ বলেন, ‘এখানে সবাই মনজুর সাহেবকেই বেশি চেনে। উনি আগে মেয়র ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় দান-খয়রাত করেন। মানুষ তার কাছে গিয়ে খালি হাতে ফেরে না। অনেকে ব্যবসা করে শুধু নিজেরা টাকা উপার্জন করে। কিন্তু মোস্তফা-হাকিম পরিবারকে সবাই চেনে। তারা যেমন ধনী, তেমন অনেক সেবামূলক কাজও করেন। অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। ওনার সঙ্গে আমাদের এলাকার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
অন্যদিকে হালিশহর থেকে শাখাওয়াত নামে একজন বলেন, ‘এখানে ফরিদ ভাই বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন। বাচ্চু ভাই নৌকার কারণে কিছু ভোট পেতে পারেন। কিন্তু ফরিদ ভাই ওনার ভোট কাটবেন। এ সুযোগে মনজুর সাহেব জেতার সম্ভবনা বেশি। দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়াটা ঠিক হয়নি বলে মনে করি।’
এই আসনের ভোটার মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি সুজিত দাশ বলেন, ‘এবারের নির্বাচন যে অংশগ্রহণপূর্ণ হবে তা প্রচারণার মাঠ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে, এখানে মূলত দুজন প্রার্থীর লড়াই হবে। বাচ্চু ভাই যেহেতু আমাদের পার্টির লোক, নৌকার প্রতিনিধি, তাই ওনার পক্ষে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে। নৌকার একটা ভোট ব্যাংক আছে, ওটা বাচ্চু ভাইয়ের জন্য বরাদ্দ থাকবে। অন্যদিকে মনজুর সাহেব আগে মেয়র ছিলেন। ওনার কোনো দল না থাকলেও এ আসনে ওনারা পরিবারিকভাবে অনেক সেবামূলক কাজ করছেন। তাই সাধারণ মানুষের একটা সমর্থন আছে।’
অংশগ্রহণপূর্ণ নির্বাচন চান মনজুর
ফুলকপি মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম বলেন, ‘আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমি চাই সকলে মিলেমিশে উন্নয়ন কাজ করি। আমি আগে ৪১টি ওয়ার্ডে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছি। এখনতো শুধু ৮টি ওয়ার্ড। তাই নির্বাচনে আমার প্রস্তুতি ঠিকভাবে নেওয়া আছে। আমি যেখানে যাচ্ছি, সেখানেই মানুষের ঢল। এ ঢল দেখে আমি বুঝতে পারছি, তারা আমাকে ভোট দেওয়ার জন্য হলেও ভোটকেন্দ্রে যাবেন। আমি এখন শুধু অংশগ্রহণপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশন কাজ করছে। তারা যদি সুশৃংখল পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে নির্বাচনে মানুষ অংশগ্রহণ করবেই।
ভোটারদের প্রতি আস্থা বাচ্চুর
নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, ‘ভোটারদের প্রতি আমার আস্থা অনেক। তারা আমাকে নির্বাচিত করতে এবং নির্বাচন নিয়ে যারা বিভিন্ন মিথ্যা প্রচারণা করছে, তাদের ভুল প্রমাণিত করতে ভোটকেন্দ্রে আসবে। আর পুরো বাংলাদেশের মানুষ জানে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে কেমন উন্নয়ন হয়। সবাই আরও উন্নয়ন দেখতে চায়, উন্নয়নের ফল ভোগ করতে চায়। তাই নৌকার বিকল্প কিছুই নেই। আর শুধু ১০ নম্বর আসনের কথা বলতে গেলে, বলতে হয়- ওখানে প্রচারণায় গিয়ে মানুষের বিপুল সমর্থন পাচ্ছি। আশা করি, তারা আমাকে আবারও ভালোবাসা দিয়ে কাজ করার সুযোগ দেবেন।’