শাকিব হুসাইন :
তিনুর বয়স নয় বছর। সে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। পড়াশোনায় একটু ডাউন সে। ক্লাসে সবার শেষে। এজন্য তিনুকে প্রতিদিন নানারকম কথা শুনতে হয়। কেউ বলে হাবা ছেলে। কেউ বলে বোকার গাড়ি সে বহন করে। আর বিশেষ করে অংক শিক্ষক তাকে আস্ত গাধা বলে। কোনদিন তিনু একটা অংক করে দেখাতে পারেনি। তিনুকে যে যাই বলুক না কেন তিনু কোনদিন তাদের ওপর রাগ করে না। সে জানে সে একদিন ক্লাসের সবার আগে থাকবে। তখন সবাই তার বন্ধু হবে। অংক স্যার আর তাকে গাধা বলবে না। কারণ তিনু এখন থেকে কঠোর অধ্যবসায় করবে।
তিনু এখন থেকে রোজ সকালে ওঠে ফজরের সালাত আদায় করে পড়তে বসে। সে অংকে দুর্বল দেখে অংকটাই সবার আগে শেষ করে। প্রতিদিন সকালে পড়া শেষ করে বাড়ির কাজে মাকে সাহায্য করে। নয়টা বাজলে স্কুলে যায়। তিনুর এরকম পরিবর্তন দেখে মা তো অবাক। তিনুর মা ছেলের এ রকম পরিবর্তন দেখে খুব খুশি হয়। স্কুল থেকে ফিরে তিনু আবার মাকে বাড়ির কাজে সাহায্য করে। সন্ধ্যাবেলায় পড়তে বসে। মন দিয়ে সব বই তিনু পড়ে।
এমনি করে পাঁচ মাস চলে গেল। এবার তিনুর বার্ষিক পরীক্ষা। স্কুল শেষের দিন অংক স্যার তিনুকে দাঁড় করিয়ে বলল, কিরে গাধা এবার তুই তো পরীক্ষায় এবার নিশ্চয় ঘোড়ার ডিম পাবি। আর ঘোড়ার সেই ডিমটা আমি তোর খাতায় বড় করে দেবো। সাথে সাথে ক্লাসে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। সেদিন তিনু একটু মনে কষ্ট পেল। তবুও তিনু কারো কাছে তা প্রকাশ করলো না। দেখতে দেখতে তিনুর সব পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল। এবার ফলাফল প্রকাশের পালা। সবাই স্কুলে উপস্থিত। তিনুও উপস্থিত ছিল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক এক এক করে সব শ্রেণির ফলাফল প্রকাশ করলেন। শেষে চতুর্থ শ্রেণির ফলাফল প্রকাশ করা শুরু করলেন। প্রধাান শিক্ষক বললেন, এবার চতুর্থ শ্রেণিতের প্রথম স্থান অধিকার করেছে … কিছুক্ষণ তিনি থেমে গেলেন। অংক স্যার বললেন, কী হয়েছে স্যার, বলুন! প্রধান শিক্ষক বললেন, এবার চতুর্থ শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছে আমাদের তিনু …
সবাই তো অবাক। অংক স্যার তার চোখে জল আবিষ্কার করলেন। তিনুকে ডেকে কান্না জড়িতকণ্ঠে জড়িয়ে ধরলেন। সবার সামনে বললেন, তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস, তিনু। তিনুও তার চোখে জল আবিষ্কার করল। প্রধান শিক্ষক তিনুকে ডেকে বললেন, তিনু তুমি কী করে এই বাজিমাত করে ফেললে সবাইকে একটু বলবে? তিনু সবার উদ্দেশ্যে বলল, কোনো কিছু অর্জন করতে হলে কঠোর অধ্যবসায় করতে হয়। আর আমি সেটাই করেছি। যখন আমাকে স্যার গাধা বলতেন, তখন আমি সেটাকে স্যারের গাল হিসেবে নিইনি বরং স্যারের আশীর্বাদ হিসেবে নিয়েছি। আর তোমরা আমাকে যা যা বলেছ, সেগুলোকেও আমি তোমাদের দোয়া হিসেবে নিয়েছি। তোমাদের সকলের জন্য আজ আমি এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি। তোমাদের সকলের প্রতি আমি চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকবো।
সেদিন যারাই ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে ছিল, সেদিন সবার চোখেই জল ছিল।
এখন তিনুর অনেক বন্ধু। আর সব থেকে কাছের বন্ধুটি হলো তার অংক স্যার …