সুপ্রভাত ডেস্ক »
সব হারিয়ে জিম্বাবুয়ের একটু লড়াই! ম্যাচের স্থায়িত্ব তাতে একটু বাড়ল, এই যা। বাংলাদেশের জয় ঠেকানো গেল না। আগুন ঝরা পেসে তাসকিন আহমেদ করলেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। মেহেদী হাসান উপহার দিলেন রেকর্ড গড়া বোলিং। বাংলাদেশের জয়ও এলো রেকর্ড ব্যবধানে।
হারারে টেস্টে বাংলাদেশের জয় ২২০ রানে। টেস্ট ক্রিকেটে দেশের সাম্প্রতিক ব্যর্থতার মিছিলে খানিকটা স্বস্তি এই জয়। এবছর পাঁচ টেস্ট খেলে জয় এটিই প্রথম। শেষ ইনিংসে ৪৭৭ রান তাড়ায় জিম্বাবুয়ে শেষ দিনে গুটিয়ে যায় ২৫৬ রানে।
শেষ দুই জুটিতে ৫৮ রান তুলে জিম্বাবুয়ে কমায় ব্যবধান। তবু দেশের বাইরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় এটি। আগের বড় জয়টিও ছিল জিম্বাবুয়েতে, ১৪৩ রানে। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে রানের হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ছয় জয়ই এখন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
৮২ রানে ৪ উইকেট তাসকিনের। পঞ্চম উইকেটের আশায় শেষ দিকে অতি মরিয়া বোলিংয়ে তিনি বিলিয়ে দেন বাড়তি কিছু রান।
প্রথম ইনিংসের ৫টির সঙ্গে এবার মিরাজের শিকার ৪টি। ম্যাচে ১৪৮ রানে ৯ উইকেট, দেশের বাইরে বাংলাদেশের সেরা বোলিং কীর্তি এটিই। বিদেশের মাঠে বোলিং সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্নগুলির জবাব হয়তো এক টেস্টে দিয়ে ফেলেননি তিনি, বলে উন্নতির ছাপ রাখতে পারলেন দারুণভাবে।
হারার আগে জিম্বাবুয়ের নাইটওয়াচম্যান ডনাল্ড টিরিপানো আর শেষ দুই ব্যাটসম্যান বেশ অপেক্ষায় রাখেন বাংলাদেশকে। টিরিপানো করেন ফিফটি, শেষ দুই জুটি উইকেটে কাটায় প্রায় ২০ ওভার। তবে শেষ পর্যন্ত জয় ধরা দেয় এক সেশন বাকি থাকতেই।
দিনের শুরুতেও খানিকটা প্রতিরোধ গড়তে পেরেছিল জিম্বাবুয়ে। প্রথম ঘণ্টায় বাংলাদেশ উইকেট নিতে পারেনি একটিও। সুযোগ হাতছাড়া হয় তিনটি!
১৬ রানে দুই দফায় রক্ষা পান ডিওন মেয়ার্স। মিরাজের বলে ক্যাচ ছাড়েন কিপার লিটন দাস, নিজের বলে তাসকিন। মিরাজের বলে স্লিপে সাকিব আল হাসান অল্পের জন্য নিতে পারেননি টিরিপানোর ক্যাচ।
পানি পানের বিরতির পর অবশ্য আর রক্ষা পায়নি জিম্বাবুয়ে। এক ওভারেই মিরাজ নেন দুই উইকেট।
দুইবার জীবন পাওয়া মায়ার্স ২৬ রানে আলতো ক্যাচ দেন মিড উইকেটে। পরের ব্যাটসম্যান টিমাইসেন মারুমা শূন্য রানে এলবিডব্লিউ দারুণ টার্ন করা বলে। ম্যাচে ‘পেয়ার’ পেলেন মারুমা। রান না করেই ফেরেন এরপর রয় কাইয়াও। তাসকিনের ভেতরে ঢোকা ফুল লেংথ বলে এলবিডব্লিউ। মারুমার মতো তিনিই দুই ইনিংসেই আউট শূন্য রানে। খবর বিডিনিউজ। ।
তাসকিন এরপর গতিময় এক দুর্দান্ত ইনডিপারে উপড়ে ফেলেন রেজিস চাকাভার স্টাম্প। বোল্ড করেছিলেন তিনি ভিক্টর নিয়াউচিকেও। কিন্তু ‘নো’ বল হওয়ায় টিকে যান নিয়াউচি।
লাঞ্চের পর নিয়াউচিকে ফিরিয়ে তাসকিন ধরেন তার চতুর্থ শিকার। এরপর টিরিপানো ও ব্লেসিং মুজারাবানির লড়াই।
প্রথম ইনিংসে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর তেতে থাকা তাসকিন মুরাজাবানির উইকেট নিতে তেড়েফুঁড়ে বোলিং শুরু করেন। তাতে আলগা কিছু রান দিয়ে বসেন তিনি। আরেকপ্রান্তে টিরিপানো ফিফটি স্পর্শ করেন ১২৫ বলে।
বাংলাদেশের বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠা এই জুটি থামে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে। ইবাদত হোসেনের বলে টিরিপানোকে কটবিহাইন্ড দেন আম্পায়ার। টিভি রিপ্লেতে স্পষ্টই বোঝা যায়, বল লাগেনি ব্যাটে। হতাশাজনক বোলিংয়ের ম্যাচে ইবাদতের একমাত্র উইকেটই আম্পায়ারের উপহার।
তাসকিনের ৫ উইকেটের আশা পূরণ হয়নি শেষ জুটিতে বল করেও। মিরাজ খেলা শেষ করে দেন ম্যাচে তার নবম উইকেট নিয়ে। দেশের বাইরে ৫৯ টেস্টে বাংলাদেশের এটি মাত্র পঞ্চম জয়, যার দুটি এলো জিম্বাবুয়েতে। মিরাজ-তাসকিনদের ছাপিয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ অবশ্য মাহমুদউল্লাহ। প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানের মহামূল্য ইনিংসটির পুরস্কার। দিনের শুরুতে মাঠে নামেন তিনি সতীর্থদের ‘গার্ড অব অনার’ পেয়ে, যা অনেকটা নিশ্চিত করে দেয় টেস্ট থেকে তার বিদায়ের গুঞ্জনকে। নিজের পারফরম্যান্স আর দলের জয় মিলিয়ে শেষটা স্মরণীয়ই হয়ে রইল তার।