দেশে কমছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত্যুও ঘটছে নিয়মিত। গতকাল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭১৫ জন নতুন রোগী।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২১৭ জনের। আর মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৪০৪ জনে।
এছাড়া এবছর হেমোরেজিক সিনড্রোম বা ডিএসএস ও বিইডিএসের কারণে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে নয় জনের, অঙ্গ বিকলজনিত জটিলতা ও বহু অঙ্গ বিকলের কারণে পাঁচ জনের এবং হৃদযন্ত্রের শকে আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগে মারা গেছেন ছয় জন।
শরীরে অন্য কোনো জটিলতা থাকলে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায় বলেও জানান চিকিৎসকরা। অনেক সময় অন্য রোগ না থাকলেও কেবল অবহেলাজনিত দেরির কারণে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মধ্যে হেমোরেজিক সিনড্রোম দেখা যেতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু ডেথ রিভিউ কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মারা যাওয়ার হার বেশি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু চিহ্নিত হওয়ার শুরুতেই চিকিৎসা শুরু না হলে অনেক সময় দ্রুত জটিল আকার ধারণ করতে পারে যা রোগীর মৃত্যুর শঙ্কাও বাড়িয়ে দেয়।
অন্যদিকে আরেকটি পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগ রোগীর বয়সই ৩০ বছরের কম।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের ক্ষেত্রে সাধারণত এই বয়সীদের সংখ্যা যেমন বেশি থাকে, তেমনি তাদের সেরে ওঠার হারও বেশি। তবে এক্ষেত্রে এই বছরের চিত্র এখন পর্যন্ত কিছুটা ভিন্ন।
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩০-এর কম বয়সী রোগীদের মৃত্যুর সংখ্যই বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারানো ১৮৭ জনের মধ্যে ৯৪ জনেরই বয়স ৩০ বছরের নিচে।
এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর খুব কম সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মৃত্যু হওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।
এর কারণ হিসেবে সময়মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পাওয়ায় ‘শক সিনড্রোম’ তৈরি হওয়ার কথা জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা। এই বয়সসীমার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার ৫০০। বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মজীবী ও চলাফেরায় সক্রিয় শ্রেণিই মশার সংস্পর্শে বেশি আসছে, ফলে তাদের মধ্যে সংক্রমণও বেশি।
চলত বছরের জুলাই থেকে আগস্ট এবং চলতি সেপ্টেম্বর মাসেও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এই থেমে থেমে বৃষ্টি এবং তারপর প্রচণ্ড গরম ডেঙ্গুর বংশবিস্তারে ভূমিকা রাখে। নগরকেন্দ্রিক এই রোগ কমাতে মশার বংশবিস্তার রোধ জরুরি।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষার পর মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে জনসচেতনতা কার্যক্রম জোরদার না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।