মাইলেজ ভাতার দাবিতে চালকদের সমাবেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক »
মাইলেজ বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেতে এবার ট্রেন চালানো বন্ধের হুমকি দিয়েছে ট্রেন চালকরা। ৩০ জানুয়ারির মধ্যে মাইলেজ (রানিং এলাউন্স) ভাতা যুক্ত করা না হলে ৩১ জানুয়ারি থেকে কোনো ট্রেন পরিচালনা করবে না চালকরা। গতকাল চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এই দাবি উত্থাপন করেন তারা।
জানা গেছে, ২০২০ সালে আইবাস পদ্ধতি (বেতন প্রদানের ডিজিটাল পদ্ধতি) যুক্ত হওয়ার পর থেকে মাইলেজ পাচ্ছে না ট্রেন চালকরা। তখন থেকেই এবিষয় নিয়ে আন্দোলন করে আসছে ট্রেন পরিচালনার সাথে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রানিং স্টাফ নামের সংগঠনের এই ব্যানারে ট্রেন চালক ছাড়াও গার্ডস কাউন্সিল ও টিটিই’জ অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে। গত ১৭ জুন রেলওয়ে মহাপরিচালকের সাথে রানিং স্টাফ কর্মচারী সমিতির সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তা সুরাহার আশ্বাস দেয়া হয়। সর্বশেষ গত ১৯ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়কে এবিষয়ে চিঠি দেয়া হলেও মাইলেজ সমস্যার সুরাহা হয়নি।
এবিষয়ে বাংলাদেশ রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, ‘ট্রেন চালকরা কোনো টিএ/ডিএ পায় না। তারা ট্রেন নিয়ে প্রতি ১০০ মাইল দূরত্বেও জন্য একদিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ টাকা পান। কম বা বেশি দূরত্বের জন্য আনুপাতিক হারে কম বা বেশি মাইলেজ পান। এই পদ্ধতিকেই মাইলেজ বলে থাকে। ব্রিটিশ আমলে রেলওয়ে সৃষ্টির পর থেকেই এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু নতুন আইবাস পদ্ধতিতে এই ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন ট্রেন পরিচালনায় যুক্তরা। যারা অবসরে গিয়েছেন তারাও মানবেতর জীবনযাপন করছেন।’
তিনি আরো বলেন, বিধি অনুযায়ী হেডকোয়ার্টারে থাকাকালে একজন চালক ১২ ঘণ্টা ও হেডকোয়ার্টারের বাইরে আট ঘণ্টা বিশ্রাম পেয়ে থাকেন। জনবল স্বল্পতার কারণে চালকরা বিশ্রাম না নিয়ে ট্রেন পরিচালনা করেন। এখন আর তা করবো না।
ট্রেন পরিচালনায় জনবল সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারাদেশে ১৮৮৫ জন থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ১০১৮ জন। এই জনবল দিয়েও বাড়তি ডিউটি করে ট্রেন পরিচালনা স্বাভাবিক রেখেছি।
এই মাইলেজ সমস্যা নিরসন না হওয়ায় ৩১ জানুয়ারি থেকে ট্রেন পরিচালনা কার্যক্রম বন্ধের হুমকি প্রসঙ্গে মজিবুর রহমান বলেন, ‘৩০ জানুয়ারির মধ্যে দাবি মানা না হলে ৩১ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে ট্রেন পরিচালনা বন্ধ করে দেয়া হবে। এখনো আমাদের অনেকে ডিসেম্বর মাসের বেতনও পায়নি।’
মাইলেজ সম্পর্কে আরো জানা গেছে, প্রতি আট ঘণ্টা ট্রেন পরিচালনার সাথে যুক্ত থাকলে অথবা ১০০ মাইল ট্রেন পরিচালনার সাথে যুক্ত থাকলে একজন ব্যক্তি তার বেতনের একদিনের বেসিক পাবেন। এভাবে ৩০ দিন কাজ করলে ৩০ দিনের বেসিক পাবেন। একইসাথে যদি কোনোদিন ২০০ মাইল ট্রেন পরিচালনার সাথে থাকেন তাহলে দুই দিনের বেসিক পাবেন। কিন্তু বর্তমান আইভাস পদ্ধতিতে তা রাখা হয়নি। আর এতেই বিপত্তি দেখা দিয়েছে। এতে ট্রেন পরিচালনার সাথে যারা জড়িত তাদের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
১৬ ট্রেনের যাত্রা বাতিল
ক্রু (লোকোমাস্টার ও গার্ড) সংকটের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামের ১৬টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার রাতে নির্দিষ্ট এসব ট্রেনের যাত্রা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (ডিএমই লোকো) মো. ওয়াহিদুর রহমান সিআরবির কন্ট্রোলার অফিসে এ আদেশ পাঠান।
বাতিলকৃত ট্রেনগুলো হলো: লালমনিরহাট-সান্তাহার লালমনিরহাট ২০/১৯, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা (সকাল) ২১৩/২১৪, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা (দুপুর) ২১৯/২২০, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা (বিকেল) ২২৯/২৩০, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা (রাত) ২৩৩/২৩৪, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জোড়া শাটল ট্রেন ১৩১/১৩২, ১৩৫/১৩৮, ১৪১/১৪২।