সুপ্রভাত ডেস্ক »
পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের কথা চাপা দিতে তাকে অর্থ দেওয়ার মামলায় অভিযুক্ত হয়ে গ্রেফতারের মুখে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে একটি গ্র্যান্ড জুরি তাকে অভিযুক্ত করে; ফলে ট্রাম্পই হচ্ছেন একমাত্র সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি কোনো ফৌজদারি মামলায় বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন। খবর বিডিনিউজের।
কী কী অভিযোগে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বিচার হবে, তা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু ট্রাম্পের সামনে কী কী ঘটতে যাচ্ছে, তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে বিবিসি।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী?
২০১৬ সালে সংবাদমাধ্যমে এসে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের খবর দিয়েছিলেন পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস।
ট্রাম্প ঘনিষ্ঠরা সেই খবর পান এবং আইনজীবী মাইকেল কোহেন ওই ঘটনা চেপে রাখতে ড্যানিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন।
মার্কিন আইনে এভাবে অর্থ দেওয়া অবৈধ নয়। কিন্তু ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ হল, ড্যানিয়েলসকে দেওয়া ওই অর্থ তিনি কোহেনকে দেওয়া লিগ্যাল ফি হিসেবে দেখিয়ে ব্যবসার খরচ হিসেবে চালিয়েছেন। প্রসিকিউটররা নিউ ইয়র্কে একে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে ধরেছেন।
বিবিসি লিখেছে, ওই ঘটনায় প্রসিকিউটররা নির্বাচনী আইন ভঙ্গের সম্ভাব্য অভিযোগও করতে পারেন। কারণ ড্যানিয়েলসকে অর্থ দেওয়ার বিষয়টি ট্রাম্প গোপন রাখতে চেয়েছেন, যাতে ভোটাররা না জানে পর্ন তারকার সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। নথি পরিবর্তন করে অপরাধ ঢেকে রাখার এই চেষ্টা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হতে পারে।
প্রসিকিউশনের পক্ষের উকিলরাও স্বীকার করেছেন, যেভাবেই হোক না কেন, এটি কোনোভাবেই স্পষ্ট মামলা নয়। এই ধরনের বিচারের নজির খুব কমই আছে। সেইসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারের অর্থ ও ব্যক্তিগত ব্যয় সীমা অতিক্রমের ঘটনায় রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার চেষ্টা অতীতে ব্যর্থ হয়েছে।
‘এটি প্রমাণ করা কঠিন হবে ’, বলেন নিউ ইয়র্ক সিটি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির প্রাক্তন আর্থিক প্রসিকিউটর ক্যাথরিন ক্রিশ্চিয়ান।
ড্যানিয়েলসকে গোপনে অর্থ দেওয়ার মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য যথেষ্ট উপাদান রয়েছে কিনা, সেটি তদন্তে এ বছরের শুরুর দিকে গ্র্যান্ড জুরি গঠন করেন নিউ ইয়র্ক সিটি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ। একমাত্র তিনিই জানতেন, কখন কোন অভিযোগে ভোট দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার বিকালে গ্র্যান্ড জুরি অভিযোগ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু অভিযোগগুলো কী কী তা প্রকাশ করা হয়নি। ট্রাম্পকে একজন বিচারক অভিযোগগুলো পড়ে না শোনানো পর্যন্ত সেগুলো প্রকাশ্যে আনা হবে না।
নিয়ম অনুযায়ী ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিস থেকে ইতোমধ্যে ট্রাম্পের আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, যাতে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট আত্মসমর্পণ করেন। ট্রাম্পের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আগামী মঙ্গলবার তিনি নিউ ইয়র্কের ম্যানহটন আদালতে হাজির হতে পারেন।
আইনজীবীরা যেহেতু ইঙ্গিত দিয়েছেন যে নিউ ইয়র্ক কর্তৃপক্ষকে ট্রাম্প সহযোগিতা করবেন, ফলে তাকে গ্রেফতারে কোনো পরোয়ানা জারির প্রয়োজন হবে না।
ট্রাম্পের ব্যক্তিগত উড়োজাহাজও রয়েছে। ফলে নিউ ইয়র্ক এলাকার বেশ কয়েকটি বিমানবন্দরের কোনো একটিতে উড়ে যেতে পারেন তিনি। এরপর গাড়িতে করে ম্যানহটনের আদালতে যাত্রা করতে পারেন।
প্রসিকিউটরদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ট্রাম্পকে আদালত চত্বরে মিডিয়ার সামনে না গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হতে পারে। সে যাই হোক, একবার ভেতরে গেলে ট্রাম্পের আঙ্গুলের ছাপ এবং তার ছবি (মাগশট) নেওয়া হবে; যেমনটি অন্যান্য ফৌজদারি মামলায় আসামিদের ক্ষেত্রে নেওয়া হয়।
ট্রাম্পকে বিচার চলাকালে তার আইনত অধিকারগুলোও পড়ে শোনানো হবে। যেখানে একজন আইনজীবীর কাছে তার সাংবিধানিক অধিকার এবং পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে চুপ থাকার অধিকারের বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে।
শাস্তিযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে গ্রেফতার বিবাদিকে সাধারণত সাময়িকভাবে হাতকড়া পরানো হয়, যদিও ট্রাম্পের জন্য সেটি এড়িয়ে চলার চেষ্টা হবে। অপরাধী ডেটাবেজে ট্রাম্পকে যুক্ত করার পক্রিয়ায় তার সঙ্গে থাকবেন সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টরা।
এরপর ট্রাম্প বিচারকের সামনে হাজির হওয়ার আগ পর্যন্ত একটি অপেক্ষমাণ জায়গা বা সেলে অপেক্ষা করবেন। আদালতে অভিযোগ পড়ে শোনানোর মুহূর্তটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
একবার সেই মামলা বিচারের জন্য নেওয়া হলে এবং বিচারক নির্বাচন হলে অন্যান্য বিস্তারিত বিষয়গুলো যেমন- বিচারের সময়, সম্ভাব্য ভ্রমণ বিধিনিষেধ এবং জামিনের শর্তগুলোও নির্ধারিত হবে।
বিবিসি জানিয়েছে, ছোটখাটো অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলে বিচারে জরিমানা গুণতে হতে পারে। তবে ট্রাম্প যদি গুরুতর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তার সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদ- হতে পারে। যদিও কিছু আইন বিশেষজ্ঞের অনুমান, দোষী হলেও সম্ভবত তার জরিমানাই হবে, কারাগারে থাকার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।
অভিযুক্ত হওয়ার ফলে, এমনকি দোষী সাব্যস্ত হলেও ট্রাম্পের জন্য তা নির্বাচনে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে বাধা হবে না। আর ইতোমধ্যে তিনি ভোটে প্রার্থী হওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ইংগিত দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আইনে এমন কিছু নেই যা একজন প্রার্থী দোষী সাব্যস্ত হলে তার নির্বাচনী প্রচারে বাধা হতে পারে; এমনকি কারাগারে থেকেও কেউ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে পারে।
তবে যাই ঘটুক, ট্রাম্প গ্রেফতার হলে তার নির্বাচনী প্রচার নিশ্চিতভাবেই জটিল হবে। কিছু রিপাবলিকান ভোটার ট্রাম্পের পাশে দাঁড়ালেও নির্বাচনী প্রচারের পথে ট্রাম্পের এই মামলা-মোকদ্দমা চরম সমস্যা ও বিতর্কের কারণ হতে পারে।
আমেরিকান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ইতোমধ্যে যে বিভাজন চলছে, এ বিষয়টি তা আরও গভীর করতে পারে।