জিয়াবুল হক, টেকনাফ »
কক্সবাজার টেকনাফে থেমে নেই মরণনেশা ইয়াবা কারবার। এ উপজেলায় হঠাৎ ইয়াবার আগ্রাসন বেড়ে যাওয়ার কারণ আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারি সিন্ডিকেট তৎপরতা।
সাগরপথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ি টহল জোরদার করার পরও মিয়ানমার থেকে আসছে ইয়াবার বড় বড় চালান। প্রতিনিয়ত আটকও হচ্ছে ইয়াবার চালান।
জানা যায়, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, কোস্ট গার্ড বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গত সাড়ে তিন বছরে ২৯৯ জন নিহত হয়েছেন। আত্মসমর্পণ করেন ১২৩ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী। গত পাঁচ বছরে ৭ কোটি ৮৫ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। নতুন যুক্ত হয়েছে আইস, গত ১১ মাসে ২৬১ কোটি টাকার আইস উদ্ধার করা হয়। আত্মসমর্পণ করা মাদক কারবারিরা জামিনে বেড়িয়ে আসার পর বেড়েছে ইয়াবা ও আইসের ব্যবসা। ফলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অজুহাত ছিল নাফনদীতে মাছ শিকার বন্ধ করা গেলে মাদক ব্যবসা কমবে। নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধের পরও মাদক কিভাবে আসে- প্রশ্ন স্থানীয়দের।
টেকনাফ মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় ২০টি পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা পাচারের নতুন ঘাট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিবেশী দেশে সামরিক শাসন জারী থাকায় শাসক দলের সাথে সখ্যতার সুযোগে অনেকে মাদক পাচারের মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টেকনাফ উপজেলায় ৫টি ইউনিয়নে মাদক পাচারের নিরাপদ ২০ টি পয়েন্ট রয়েছে। টেকনাফ সদর ইউনিয়নে রয়েছে মহেশখালী পাড়া ঘাট, নাজির পাড়া ও মৌলভী পাড়া, কানগার পাড়া। বাহারছড়া ইউনিয়নে রয়েছে নোয়াখালী পাড়া ঘাট, শীলখালী জেলে ঘাট, শামলাপুর ও বড় ডেইল ঘাট। হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভী বাজার, লেদা, আলীখালী, জাদিমুড়া, হোয়াক্যং ইউনিয়নে লম্বাবিল ঘাট, উলুবনিয়া। সাবরাং ইউনিয়নের খুরের মুখ, আলীর ডেইল, মুন্ডার ডেইল, মন্ডল পাড়া, নয়া পাড়া, কচুবনিয়া ও কাটাবনিয়া ঘাট। শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিম পাড়া, জালিয়াপাড়া, মাঝের পাড়াসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকার কোনো না কোনো পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবার বড় বড় চালান প্রবেশ করে। আর এই সবের নেতৃত্বে রয়েছেন আত্নস্বীকৃত ইয়াবা কারবারির সদস্য ও প্রভাবশালীরা।
অন্যদিকে নৌপথে মাদকের বড় বড় চালান আসছে, কিন্তু শতকরা ২ ভাগও ধরা পড়ছে না। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সোর্স পরিচয়কারীরাও এই মরণ নেশা ইয়াবা পাচারে জড়িত বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়।
এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণির কর্মকর্তা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। নইলে প্রতিটি ওয়ার্ড ও গ্রামে মাদক পাওয়া যায় কীভাবে? স্থানীয় একশ্রেণির রাজনৈতিক নেতাকর্মী মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন প্রকাশ্যে। মোটা অঙ্কের টাকা মাসোহারা পান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণির সদস্য। আর যারা জামিনে বের হয়ে এসেছে তারা এখন পুরোদমে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেছে।
এছাড়া দীর্ঘদিন স্কুল কলেজ বন্ধ থাকার কারণে কিছু শিক্ষার্থী এই ব্যবসায়ে জড়িয়ে গেছে।
এ বিষয়ে টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার জানান, বিজিবির সদস্যরা টেকনাফে সীমান্ত এলাকায় অভিযান জোরদার করেছে। প্রতিনিয়ত বড় বড় চালান আটক হচ্ছে। তবে সাগর উপকূলীয় এলাকাগুলোতেও বাড়তি নজর রাখা হচ্ছে।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, টেকনাফ উপজেলায় প্রত্যেক এলাকায় পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং অভিযান চলমান থাকবে। তবে যে সকল ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কথা বলা হচ্ছে, সেই তথ্য আমাদের কাছে অবশ্যই আসবে। অভিযান চলমান থাকবে, সে ধরনের অভিযান উপকূলীয় এলাকাগুলোতেও চালানো হবে। ইয়াবার বিস্তার যেকোনো মূল্যে প্রতিরোধ করতে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।