# পানি নেমে যাওয়ার জন্য কেটে দেয়া হয়েছে ফিরিঙ্গীবাজার খালের মুখ
# প্রবর্তক মোড়ের ব্রিজের নিচ দিয়ে পানি চলাচল উন্মুক্ত হবে বুধবার
# পাহাড়ধসে মৃত্যু ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের মাইকিং ও ১৯ আশ্রয়কেন্দ্র চালু
নিজস্ব প্রতিবেদক :
চলছে বর্ষণ, বাড়ছে পাহাড়ে ধসের আশঙ্কা এবং নিঁচু এলাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী মঙ্গলবার দিনভর বৃষ্টির মতো রাতভর বৃষ্টি হওয়ার কথা। একইসাথে বুধবারও বর্ষণ হতে পারে। আর তা হলে পাহাড়ি এলাকায় যেমন শঙ্কা রয়েছে পাহাড় ধসের একইসাথে নগরীর নিঁচু এলাকাগুলোতে রয়েছে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগের শঙ্কা। ইতিমধ্যে নিঁচু এলাকাগুলোতে পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্ত অনুযায়ী, চট্টগ্রামে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরে চলতে থাকা এই বর্ষণ অব্যাহত থাকবে আরো কয়েকদিন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তর পতেঙ্গা কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল বলেন, ‘মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বাড়তে পারে। একইসাথে বুধবার দিনভরও থাকতেও পারে বৃষ্টি। সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর কারণে সহসা বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।’
তিনি আরো বলেন, বর্ষাকাল হওয়ায় জোয়ারের উচ্চতা বেশি থাকায় জোয়ার দূর্ভোগও পোহাতে হবে নগরবাসীকে।
আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পালের এই আশঙ্কা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। নগরীর নিঁচু এলাকাগুলোতে বেড়েছে জোয়ার-দুর্ভোগ। নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, শান্তিবাগ, হালিশহর কে ব্লক, এল ব্লক, কর্ণফুলী আবাসিক এলাকা, চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জ এলাকা, বাকলিয়া এলাকায় ইতিমধ্যে জোয়ার দুর্ভোগ চলছে। চলমান এই বৃষ্টিতে এর মাত্রা আরো বাড়বে। এছাড়া খালগুলোর মুখ বন্ধ থাকায় ভোগান্তি আরো বাড়ালো।
তবে নগরীর ভেতরের পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার জন্য বন্ধ রাখা ফিরিঙ্গীবাজার খালের মুখে কেটে দেয়া হয়েছে। এবিষয়ে জলাবদ্ধতা মেগা প্রকল্পের সেনাবাহিনীর নিয়োজিত প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, ‘নগরীর ভেতরের পানি সরে যাওয়ার জন্য আমরা ফিরিঙ্গীবাজার খালের মুখে যে বাঁধ দিয়েছিলাম তা কেটে দিয়েছি। এতে পানি দ্রুত নেমে যাচ্ছে। একারণে মঙ্গলবার দিনভর বর্ষণ হলেও জলাবদ্ধতা তেমন ভয়াবহ হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, অন্যান্য সময় এমন বৃষ্টিতে ষোলশহর দুই নম্বর গেইট থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত সড়কে পানি জমে যায়। তবে এবার পানি জমেনি। একইসাথে প্রবর্তক মোড়েও দীর্ঘসময় ধরে পানি থাকেনি। তবে বুধবার প্রবর্তক মোড়ের ব্রিজ দিয়ে পানি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে এবং তা হলে দ্রুত পানি চলে যেতে পারবে। তখন পানি আরো কম উঠবে।
কিন্তু বন্দরটিলা এলাকায় পানি উঠছে। এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওখানে জোয়ারের পানি উঠছে। একইভাবে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকায়ও জোয়ারের পানি উঠছে। আর জোয়ারের পানি রেগুলেটর ছাড়া বন্ধ করা যাবে না। এজন্য আগামী বর্ষা মৌসুম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় যাতে জানমালের কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য ১৭টি ঝুঁিকপূর্ণ পাহাড়সহ অন্যান্য পাহাড়ের পাদদেশ থেকে লোকদের সরিয়ে আনার কাজ গতকাল মঙ্গলবার করেছে জেলা প্রশাসনের টিম। এসময় ডিটি বায়েজীদ সংযোগ সড়কের উভয়পাশের পাহাড়, মতিঝর্ণা, বাটালি হিল, একে খান পাহাড়, ট্যাংকির পাহাড়, আমিন জুট মিলস এলাকা, রউফাবাদ, খুলশী, পাহাড়তলি, ফয়েজ লেক, আকবর শাহ এলাকার ঝিল-১,২,৩ নং এলাকা, জিয়ানগর, মধ্যমনগর, মুজিব নগর, শান্তিনগর এলাকা, লৈকবল্যধাম বিশ্বকলোনি এলাকা, ফিরোজ শাহ এলাকা, ফরেস্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট এলাকা, বায়েজিদ-ফৌজদারহাট সিডিএ লিংক রোড এলাকা সমূহে ভারী বর্ষণের মধ্যে মানুষের জানমালের সুরক্ষায় জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে ঝুঁকি পূর্ণ পাহাড় থেকে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে মাইকিং কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ রেলওয়ের সাথে কনকর্ড গ্রুপের সাথে ফয়েজ লেক এলাকার চুক্তিভুক্ত অপদখলীয় পাহাড়ি জায়গা বিশেষ করে আকবর শাহ থানাধীন ফয়েজ লেক এলাকাভুক্ত ঝিল-১,২,৩ নং এলাকা, জিয়ানগর, মধ্যমনগর, মুজিব নগর, শান্তিনগর এলাকা, লেকসিটি এলাকায় জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে মাইকিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এসব এলাকা কনকর্ড গ্রুপ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের যৌথ ব্যবস্থাপনায় থাকার কথা থাকলেও এখানে বিশাল এলাকা জুড়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে
তারা মাইকিং করার পাশাপাশি লোকদের আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নিতে বলেছে। এজন্য চান্দগাঁও, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ এবং কাট্টলী সার্কেলাধীন এলাকায় ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসময় স্থানীয় মসজিদগুলো থেকেও মাইকিং এর মাধ্যমে লোকজন কে নিরাপদ অবস্থানে আশ্রয় নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।