জে.বি.এস আনন্দবোধি ভিক্ষু »
রাঙ্গুনিয়ার ঐতিহ্যবাহী বেতাগী গ্রামের সন্তান প্রবীণ ভিক্ষু ভদন্ত জ্যোতিমিত্র স্থবির, তাঁর গৃহী নাম অমরেন্দ্র নাথ বড়–য়া। তিনি ৩০ দশকের শেষে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্র জীবনে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি শিক্ষা জীবন শেষ করে গ্লাসগো বাংলাদেশ লিমিটেডে চাকরি করেন। ১৯৭১ সনে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে সংসার ও সন্তানদের রেখে দেশমাতৃকাকে মুক্ত করার জন্য তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। গৃহী জীবনে তার তিন পুত্র ও তিন কন্যা সন্তান রয়েছে। তাঁর সন্তানগণ প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
তিনি বেতাগীর তীর্থভূমি যে প্রতিষ্ঠানে অখিল ভারতীয় সংঘনায়ক আনন্দমিত্র মহাস্থবির ও সাধনানন্দ মহাস্থবির (বন ভান্তে) অবস্থান করেছিলেন, বেতাগীর ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বেতাগী বৌদ্ধ বনাশ্রম বিহার নির্মানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন, তিনি গৃহী জীবনে কদলপুর ভিক্ষু প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রব্রজ্যা নিয়ে ১০ দিন ব্যাপী বিদর্শন ভাবনা করেন।
বেতাগী বৌদ্ধ বনাশ্রম বিহারের সেবা করতে গিয়ে একসময় তার মধ্যে দুঃখ মুক্তির চেতনার উম্মেষ ঘটে।
তিনি ২০১০ সালে মানিকছড়ি আন্তর্জাতিক স্মৃতিধাম ভাবনা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ভদন্ত স্মৃতিমিত্র মহাস্থবিরের নিকট প্রব্রজ্যা নেন এবং ম উপ-সংঘরাজ ভদন্ত ধর্মপ্রিয় মহাস্থবিরের উপস্থিতিতে উপসম্পদা লাভ করেন। সেখানে তিনি কয়েক বছর অবস্থান করে ধ্যান-সাধনায় নিজেকে সমৃদ্ধ করেন।
কিন্তু তার মন পড়ে থাকে বেতাগী বৌদ্ধ বনাশ্রম বিহার রক্ষা করার জন্য।
তিনি মানিকছড়িতে থাকলেও সময়-সময় এসে বেতাগী বৌদ্ধ বনাশ্রম বিহারে সেবা করে থাকেন। এক পর্যায়ে গুরুর অনুমতি নিয়ে তিনি স্থায়ীভাবে বনাশ্রম বিহারে অবস্থান করেন। ধীরে ধীরে তিনি বনাশ্রম বিহারকে নবরূপে প্রতিষ্ঠা করতে নিজেকে সর্বোতভাবে নিয়োজিত করেন। তিনি সরকার, পূজনীয় ভিক্ষু সংঘ, সমাজের সকল দানশীল ব্যক্তিবর্গের ও পরিবারের সহায়তায় বেতাগী বৌদ্ধ বনাশ্রম বিহারের হলঘর পুনঃ নির্মাণ, ভিক্ষু-শ্রমণের আবাস নির্মাণ, মন্দির সংস্কার, সীমাঘর সংস্কার, সিড়ি সংস্কার, টিউব ওয়েল স্থাপন, বিহারের পানি তোলার পাম্প স্থাপন, বিহারে বিদ্যুৎ আনয়ন সহ নানা কার্য সম্পাদন করেন।
তিনি বেতাগী বৌদ্ধ বনাশ্রম বিহারকে নবরূপ দান করে একটি তীর্থভূমিকে নতুন প্রজন্মের কাছে উপহার দিয়েছেন এবং বেতাগীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমুন্নত রেখেছেন। বাধ্যক্যে উপনীত হলে তিনি পূজনীয় ধুতাঙ্গ ভান্তে ভদন্ত শীলানন্দ স্থবির মহোদয়কে বিহারের দায়িত্ব নেয়ার অনুরোধ করলে তিনি তাতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন।
এ প্রতিষ্ঠান ২০১৭ সনে পূজনীয় ভান্তের নিকট সমর্পন করা হলো। সে থেকে এ প্রতিষ্ঠানে ধুতাঙ্গ ভান্তের শিষ্যমন্ডলী অবস্থান করে এ প্রতিষ্ঠানকে আরো সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টারত আছেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটি যোগ্য উত্তরসূরীর নিকট হস্তান্তর করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ২০২১ সনের ১৭ জানুয়ারী বার্ধক্যজনিত কারণে মহাপ্রয়াণ লাভ করেন। আমি তাঁর প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে আমার ভিভুত্ব জীবনের পুন্যরাশি দান করছি।
লেখক : প্রাবন্ধিক