গত কয়েকদিন ধরে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় সরকার লকডাউনের মতো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও জনগণের মধ্যে তা মানতে যে সচেতনতা প্রয়োজন তা দৃশ্যমান নয়। বরং সবকিছুই ঢিলেঢালাভাবে চলছে। যথারীতি রাস্তাঘাটে মানুষের ভিড়, পণ্য কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বাজার দোকানে। ক্রেতা-বিক্রেতা স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে উদাসীন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ সচেতন না হলে, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে, নিষেধাজ্ঞা অনুসারে জীবন-জীবিকা না চালালে করোনা সংক্রমণ সামনে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি করবে দেশবাসীকে। আমাদের মতো অধিক জনসংখ্যার দেশে সমস্যা-সংকটও বেশি।
প্রথমবার লকডাউনে যে সচেতনতা দেখা গিয়েছিলো, সরকারের যে রূপ তৎপরতাও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ছিলো, এবার তা তেমন দেখা যাচ্ছেনা অথচ পরিস্থিতি সে সময়ের তুলনায় অনেক বেশি মারাত্মক। সচেতন হলে, অভ্যাস পরিবর্তন করলে ৭ শতাংশ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব-স্বাস্থ্যবিদরা এ মত দিয়েছেন। লেবানন ফেরত বাংলাদেশিরা কোয়ারেন্টাইনে না যেতে বিক্ষোভ করছেন, এটি অনাকাক্সিক্ষত।
জনগণকে মহামারি প্রতিরোধে নিষেধাজ্ঞা মানতে হবে। নিজে বাঁচতে, অন্যকে বাঁচাতে এর কোন বিকল্প নেই। মাস্ক পরার ব্যাপারে, দূরত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব সম্পাদন করা, হাত ধোয়া কিংবা ছোট স্যানিটাইজার সাথে রাখা-এসবকে অভ্যাসের অঙ্গ করতে হবে। বাইরের কাজ যতটুকু দরকার, সেরে দ্রুত ঘরে ফেরাই উত্তম।
করোনা মহামারি থেকে রক্ষা পেতে, প্রতিষেধক হচ্ছে টিকা গ্রহণ। দ্বিতীয় ডোজ টিকা প্রদান শুরু হবে ৮ এপ্রিল অর্থাৎ কাল থেকে, সেই সাথে প্রথম ডোজের টিকাদান কার্যক্রম চলবে-সরকার থেকে তা বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের ১৪ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে।
এ পর্যন্ত ৫৫ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ৩ কোটি টিকা দেবার কথা, এসেছে ১ কোটি ডোজের মতো। আমরা আশা করি ভারত টিকা সরবরাহে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেবে। জাতিসংঘের উদ্যোগ কোভাক্স থেকে দুই কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা কিন্তু কবে পাওয়া যাবে তা এখনই বলা যাচ্ছেনা।
টিকাপ্রাপ্তি নিয়ে সারা বিশ্বেই বৈষম্য তৈরি হয়েছে। টিকা পেতে বিশ্বব্যাংক ৫০ কোটি ও এডিবি ৯৪ কোটি ডলার ঋণ দেবে বলেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) বাংলাদেশকে ২৫০ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৩০০ কোটি ডলার) ঋণ দেবে বলেছে। প্রাথমিকভাবে টিকা পেতে ২৫০ কোটি ডলার অর্থের প্রয়োজন হবে বলে বলছে সরকার। আমরা আশা করি, সরকার দ্রুত টিকা পেতে অর্থের ব্যবস্থা করবে, এ ব্যাপারে কোনোরূপ জট সৃষ্টি হওয়া উচিত নয়।
জীবন-জীবিকার সংগ্রাম এক সাথে চালাতে হলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। করোনার থাবা গত ১ মাসে কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় যে বিপদ তৈরি হয়েছে তা মোকাবেলায় লকডাউন মেনে চলতে হবে।
অর্থনীতি ও জীবনের চাকা সচল রাখতে নিষেধাজ্ঞা যথাযথ কার্যকর করতে জনগণ ও সরকারের উদ্যোগী প্রচেষ্টা চাই। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সচেতনতা, অভ্যাস পরিবর্তন, শৃঙ্খলা যেমন চাই তেমনি প্রশাসনকেও কার্যকরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট হতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়