সংবাদদাতা, আনোয়ারা »
চট্টগ্রাম কর্ণফুলীতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এর অধিগ্রহণ করা জমিতে থাকা পুরাতন ব্রিজঘাট বাজারটির ইজারা দরপত্র আহ্বান করেছেন কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়। দরপত্র বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১০টি হাটবাজার ইজারা দেয়া তালিকায় ৮ নম্বরে স্থান পেয়েছে চরপাথরঘাটার ব্রিজঘাট সন্ধ্যা বাজারটি।
১৫ বছর পর এবারেই প্রথম বাজারটি ইজারা হচ্ছে। যার সরকারি মূল্য দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫০ টাকা। সিডিউল মূল্য ১২শ’ টাকা। আগামী ১ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত চতুর্থ পর্যায়ে সিডিউল বিক্রয় ও গ্রহণের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে, বাজারটি ইজারা দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের মাঝে নানা ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি পুরাতন ব্রিজঘাট বাজারের সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ‘বাজারটি যে জায়গায় রয়েছে তা সিডিএ’র জায়গা। এখানে উপজেলার কোন খাস জমি নেই বা তাদের অধিভুক্ত কোন জমি নয় যে, ইজারা দেবেন।’
তারা বলেছেন, সিডিএ’র জায়গা উপজেলা কখনো ইজারা দিতে পারে না।
ওদিকে, কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উপজেলায় যেকোন জায়গায় বাজার বসলে নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় তা ইজারা দিতে পারে। যদিও ইজারা দেওয়ার আগে সিডিএ’র মতামত কিংবা চিঠি আদান প্রদান হয়েছে কিনা সে তথ্য জানা যায়নি।
সূত্র জানায়, একই প্রক্রিয়ায় ২০০৮ সালেও পটিয়া উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী অফিসার মো. শহীদুল আলম পুরাতন ব্রিজঘাট বাজারটি ইজারা প্রদানের লক্ষ্যে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন। কিন্তু বিষয়টি সে সময় সিডিএ’র নজরে আসলে তৎকালীন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব আবদুল বারী চৌধুরী চিঠি দিয়ে ইজারা বিজ্ঞপ্তির তালিকা থেকে বাজারটি বাদ দেওয়ার অনুরোধ জানান। না হয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।
একই চিঠিতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) তখন জানিয়েছিলেন, চউক কর্তৃক বাস্তবায়িত ব্রিজঘাট হতে মইজ্জারটেকের ডিসি রোড (বর্তমান আখতারুজ্জামান চত্বর) পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি বহু পুর্বেই সমাপ্ত করেছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, তাদের মালিকানাধীন জায়গায় এ ধরনের ইজারা বিজ্ঞপ্তি জারি করা অনভিপ্রেত। যা অধিগ্রহণ মূলে সিডিএ মালিকানাধীন দখলীয় জমি। পরে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাজারটি সে সময় ইজারা তালিকা থেকে বাদ দেন।
আরও জানা যায়, পুরাতন ব্রিজঘাট কাঁচা বাজারের জায়গাটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড সিদ্ধান্ত মতে, দুই দাগে প্রায় ২৭.৭৭ কাঠা পতিত জমি বার্ষিক ৪৭ হাজার ৮২০ টাকা ভাড়ায় শর্তসাপেক্ষে ব্যবহারের জন্য (অস্থায়ী ভিত্তিতে) একসনা বরাদ্দ দেয় হাজী ফজল আহমদকে। যিনি বর্তমান নুর মার্কেটের মালিক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফজল আহমেদ বলেন, ‘বাজারের জায়গাটি সিডিএ’র। অতীতে চেষ্টা করলেও বাজারটি কখনো ইজারা দিতে পারেনি। কারণ আশপাশের গরিব মানুষেরা এখানে বসে কিছু শাকসবজি ও মাছ বিক্রি করে সংসার চালান। ইজারা না থাকায় কেউ তাদের কাছ থেকে জোর করে অর্থ আদায় করত না। এখন ইজারা ডাক হলে সব কিছুতেই একটা বাড়তি চাপ পড়বে। ইজারাদার জোর করে টাকা আদায় করবেন। হঠাৎ ইজারার দরপত্রের কথা শোনে এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন।’
ব্রিজঘাট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘ইউএনও বাজার পরিদর্শন করেছেন। রাস্তার উপর থেকে ভাসমান দোকান সরাতে বলেছেন। আমরা তাও সরিয়ে দিয়েছি। উপজেলা চেয়ারম্যান জানালেন, পাশের সিডিএ মাঠ ভরাট করে অস্থায়ী দোকান নির্মাণ করে ওখানে বাজারটি স্থান্তান্তরিত করবেন। কিন্তু হঠাৎ দেখলাম বাজারটির ইজারার ডাক দেওয়া হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামনুর রশীদ বলেন, ‘উপজেলার মাসিক উন্নয়ন সভায় সভার সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে উপজেলার যেখানেই বাজার বসুক না কেন, উপজেলা প্রশাসন তা নিয়ম মেনে ইজারা দেবে, যাতে সরকারি রাজস্ব বাড়ে।’
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ এ এম হাবিবুর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জমি চাইলেই উপজেলা ইজারা দিতে পারেন না। বিষয়টি আমরা জেনেছি। কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে শিগগিরই চিঠি প্রেরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এর ভারপ্রাপ্ত সচিব অমল গুহ বলেন, ‘কর্ণফুলীতে চউকের পতিত জমিতে থাকা ব্রিজঘাট বাজারটি উপজেলা থেকে ইজারা দেওয়ার বিষয়ে আমরা তথ্য পেয়েছি। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’