জামালখানে এবার রঙিন প্রতিকৃতি

৩ মাস ধরে চলছে কাজ

হুমাইরা তাজরিন »

‘যে দেশে গুণের সমাদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না’Ñ বলেছিলেন ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। সেই গুণীদের সম্মান জানাতে, অনন্য অবদানের জন্য সম্মান প্রদর্শন স্বরূপ নগরীর জামালখান ওয়ার্ডে ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে তাঁদের বিখ্যাত উক্তি সম্বলিত প্রতিকৃতি ও ম্যুরাল। তবে এবার জামালখানে নতুনভাবে ৫৬ টি প্রতিকৃতি উদ্বোধন হতে যাচ্ছে যেখানে প্রয়াতদের সঙ্গে শোভা পাচ্ছে জীবন্ত কিংবদন্তিদেরও চিত্র। এসব প্রতিকৃতির নাম রাখা হয়েছে ‘কিংবদন্তী’। জীবন্ত কিংবদন্তিদের ধারাবাহিক প্রতিকৃতিতে সম্মান জানানোর এই দৃষ্টান্ত বিরল।

প্রায় ৩ মাস আগে শুরু করা প্রতিকৃতি আঁকার বেশিরভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছেন শিল্পী প্রণব সরকার। বর্তমানে শেষ মুর্হূতের কিছু পরিমার্জন চলছে। শীঘ্রই উদ্বোধন করা হবে এসব প্রতিকৃতি যেখানে শিল্প, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াঙ্গনের প্রায় ৫৬ ব্যক্তিত্বের চিত্র শোভা পাবে। যাতে লেখা থাকবে তাদের জন্ম এবং প্রয়াতদের ক্ষেত্রে মৃত্যু সন। এম এস শিটের আয়রন প্লেটের মাধ্যমে আঁকা ৩ ফুট উচ্চতার প্রায় আড়াই ফুট প্রস্থের এসব প্রতিকৃতি আঁকা হয়েছে কালো রঙের তুলিতে। ব্যাকগ্রাউন্ড কালার হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে আকাশী, হালকা উজ্জ্বল বাদামি, হালকা গোলাপী ও হালকা বেগুনি রঙকে। তবে এখনি উন্মোচিত হবে না প্রতিকৃতিগুলো, তাই কালো কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টায় জামালখানে গিয়ে দেখা গেছে চিত্রনায়ক আলমগীর, শাবানা, রাজ্জাক,কবরী, এন্ড্রু কিশোর, ক্রিকেটার মোহাম্মাদ রফিক, হাবিবুল বাসার, মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ,আকরাম খান, ফুটবলার সত্যজিৎ দাশ রুপু , বাদল রায়, আমিনুল ইসলাম ,শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণব, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আলাউদ্দিন আলী, পপ স¤্রাট আজম খান, সত্য সাহা, প্রবাল চৌধুরী প্রমুখের প্রতিকৃতির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

এ ব্যাপারে জামালখানের বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন বলেন,‘ দীর্ঘদিন যাবত এইখানে একটা ফুটপাত রয়েছে। কিন্তু লোকজন সেটি ব্যবহার করেন না। মোড়ের অন্যান্য সাইডে বসার বেঞ্চের ব্যবস্থা থাকায় এদিকটায় সেখানকার মতো জমজমাট হয়না। এখানেও যেহেতু এই সুন্দর রঙিন প্রতিকৃতি আঁকা হচ্ছে এবার লোক সমাগম বাড়বে। এই প্রতিকৃতিগুলোর মাধ্যমে জামালখানের সৌন্দর্য আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেলো। সেই সাথে জীবন্ত কিংবদন্তীদের সম্মানিত করার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বিশেষ করে খেলাধুলার মাধ্যমে যারা বাংলাদেশকে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছেন তাদের প্রতিকৃতির কথাও বলবো। এছাড়া সত্য সাহা ,শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণব তাদের তো আমরা এক প্রকার ভুলতে বসেছি। তাদেরকেও স্মরণে রেখে এই দলীয় প্রতিকৃতি চিত্রিত হচ্ছে দেখে ভালো লাগছে।’

কাজের ফাঁকে প্রতিকৃতিগুলো সম্পর্কে শিল্পী প্রণব সরকার বলেন,‘ জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের উদ্যোগে এই কাজটি করা হচ্ছে। আমি এর বেশিরভাগ কাজ ঘরে বসে সম্পন্ন করেছি। দীর্ঘ ৩ মাস ধরে এই ৫৬টি প্রতিকৃতির কাজ চলছে। আশা করি আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে এই প্রতিকৃতি উদ্বোধন করা যাবে। এই প্রতিকৃতিগুলো আঁকতে আয়রন প্লেটকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছি। পেছনের পিঠে কর্মীরা ঠিকমতো রঙ না করায় বৃষ্টির পানিতে ও বাতাস লেগে অপর পিঠে কিছু কিছু অংশে মরিচা দেখা দিয়েছে। সেটি সংশোধন করছি।’

জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বলেন, ‘দেখুন কিংবদন্তির কখনও মৃত্যু হয়না। তাই মৃত্যুর পরেই কেবল তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে প্রতিকৃতি আঁকা হবে এ কথার কোনো ভিত্তি নাই। জীবিত থাকা অবস্থায় তাদের অসামান্য কর্মকা-ের প্রতি সম্মান জানাতেই এই উদ্যোগ নিয়েছি। সেই সাথে প্রয়াত কিংবদন্তিদের প্রতিকৃতিও রেখেছি। এসব প্রতিকৃতির নাম দিয়েছি ‘কিংবদন্তি’। ১৫ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এটি উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধন করবেন আমাদের মেয়র মহোদয়।’