খালের মুখ বন্ধ থাকায় ভারী বৃষ্টিতে বাড়তে পারে দুর্ভোগ: প্রকৌশলী আলী আশরাফ #
ভূঁইয়া নজরুল :
এক মহেশখালে বাঁধ দেয়ার কারণে ভারী বৃষ্টিপাতের পর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, ছোটপুল, হালিশহর প্রভৃতি এলাকায় টানা তিনদিন ধরে পানিবন্দী থাকার ইতিহাস বেশি দূরে নয়। শেষ পর্যন্ত বাঁধ কেটে সেই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে হয়েছিল। অপরদিকে এবার নগরীর পানি নিষ্কাশনের প্রধান তিনটি খাল (চাক্তাই খাল, রাজাখালী খাল ও মহেশখাল) ছাড়াও সদরঘাট থেকে চাক্তাই পর্যন্ত ছয়টি খালে (ফিরিঙ্গীবাজার খাল, কলাবাগিচা খাল, টেকপাড়া খাল, মরিয়মবিবি খাল, সদরঘাট-১ ও সদরঘাট-২ খাল) বদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। কোথাও পাইপ দিয়ে আবার কোথাও বিকল্প রাস্তা দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে। কিন্তু ভারী বর্ষণে কী হবে?
খালের মুখগুলো বন্ধ থাকা ও বিকল্প সরু রাস্তা দিয়ে পানি নিষ্কাশণে ভারী বর্ষণে নগরীতে জলাবদ্ধতা মারাতœক রূপ ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান এবং সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রকৌশলী এম আলী আশরাফ। তিনি বলেন, ‘নগরী থেকে পানি বের হওয়ার প্রধান খালগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। তাই ভারী বৃষ্টিপাত হলে নগরীর ভেতরে আটকে থাকা পানিগুলো সহজে বের হতে না পেরে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ বাড়াতে পারে।’
নগরীর কাতালগঞ্জ, শুলকবহর, ষোলশহর, বাগমনিরাম, নিউমার্কেট, চকবাজার, জামালখান, বাকলিয়া, কোতোয়ালী, সদরঘাট, আলকরণ, ফিরিঙ্গীবাজার, মাদারবাড়ি, বহদ্দারহাট, রাহাত্তারপুল প্রভৃতি এলাকার পানি নিষ্কাষিত হয় সদরঘাট থেকে রাজাখালী পর্যন্ত আটটি খাল দিয়ে। কিন্তু এই আটটি খালের ছয়টি খাল বদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এই ছয়টি খালে পাইপ দিয়ে পানি অপসারিত হচ্ছে। খালের মুখে বাধ থাকার কারণে জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে পারছে না। অপরদিকে চাক্তাই খালে সরু রাস্তা দিয়ে এবং রাজাখালী খালে বিকল্প রাস্তা দিয়ে পানি অপসারিত হচ্ছে। কিন্তু ভারী বৃষ্টি হলে নগরীর ভেতরের পানি কিভাবে অপসারিত হবে জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পে সেনাবাহিনীর ৩৪ ব্রিগেডের পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, ‘ভারী বৃষ্টিতে পানি আটকে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ বাড়তে পারে বলে আমাদেরও শঙ্কা রয়েছে। তবে তেমন পরিস্থিতি হলে বাঁধ কেটে দিবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘এসব বাঁধের কারণে জোয়ারের পানি ঠেকানো যাবে। সাগর থেকে জোয়ারের পানি এসব এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না।’
চাক্তাই ও রাজাখালী খালে রেগুলেটর নির্মিত হচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকার ‘চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত উপকূলীয় বেড়িবাধ উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায়। এবিষয়ে কথা হয় প্রকল্পটির পরিচালক রাজীব দাসের সাথে। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে আমাদের কাজ বেশি এগুতে পারিনি। তবে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে আমরা রেগুলেটর বসানোর কাজ শেষ করতে পারবো।‘
আপনার প্রকল্পের আওতায় কতোটি রেগুলেটর রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১২টি খালের মুখে রেগুলেটর রয়েছে। এরমধ্যে আটটির কাজ চলমান রয়েছে। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন।’
অপরদিকে আগ্রাবাদ, হালিশহর, পাহাড়তলী বিশাল এলাকার পানি নিষ্কাষিত হয় মহেশখাল দিয়ে। কিন্তু এই খালের মুখ বন্ধ করে চলছে রেগুলেটর নির্মাণের কাজ। বিকল্প রাস্তা দিয়ে পানি চলাচল করছে। সাগর থেকে আসা জোয়ারের পানি ঠেকাতে এই রেগুলেটর নির্মাণের কাজ চলমান থাকলেও এই বর্ষাতেও এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে না এসব এলাকার মানুষ। গত তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রতিদিন দুইবার জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছেন এখানকার অধিবাসীরা। কবে নাগাদ এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের সেনাবাহিনীর ৩৪ ব্রিগেডের পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, ‘এবছরের জোয়ারের দুর্ভোগ থেকে এই এলাকার মানুষকে মুক্তি দেয়া যাবে না। আমাদের রেগুলেটরের কাজ আগামী বর্ষার আগে শেষ হবে বলে আশা করছি।’
জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ’র দুই প্রকল্পের পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের রয়েছে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গা নেভাল থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত ২৩টি খালের মুখে রেগুলেটর নির্মাণের কাজ রয়েছে। তবে এখনো এসব রেগুলেটর নির্মাণের জন্য নকশা চূড়ান্ত হয়নি বলে প্রকল্পের পরিচালক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী অয়ন কুমার ত্রিপুরা জানান। তিনি বলেন,‘ এই প্রকল্প বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাস্তবায়ন করবে। আমরা শুধুমাত্র অর্থ ছাড়ের বিষয়টি নিশ্চিত করছি।‘
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে নগরীতে প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। তবে মুষলধারে টানা বর্ষণ এখনো হয়নি। এতে এখনো জলাবদ্ধতার পূর্বের রুপের সাথে পরিচিত হয়নি নগরবাসী। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ কম হবে বলে জানান মেগা প্রকল্পে সেনাবাহিনীর নিয়োজিত প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী। তিনি বলেন, ‘এবার নগরীর অভ্যন্তরের নালা ও খালগুলোর সংযোগ বাড়ানো হয়েছে। এখন আর পানি আটকে থাকার সুযোগ নেই। আশা করছি নগরবাসী সুফল পাবে।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ দেখা দেয়। আর তা নিরসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তিনটি প্রকল্পের অনুমোদন দিলেও এখনো নগরবাসী এর সুফল পাচ্ছে না।