ঘরপোড়া গরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায় তেমনিভাবে বর্ষার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে নগরবাসীর মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে জলাবদ্ধতা নিয়ে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ’র দুই প্রকল্পের পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের রয়েছে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গা নেভাল থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত ২৩টি খালের মুখে রেগুলেটর নির্মাণের কাজ রয়েছে।
তবে এখনো এসব রেগুলেটর নির্মাণের জন্য নকশা চূড়ান্ত হয়নি বলে প্রকল্পের পরিচালক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী অয়ন কুমার ত্রিপুরা জানান। তিনি বলেন,‘ এই প্রকল্প বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাস্তবায়ন করবে। আমরা শুধুমাত্র অর্থ ছাড়ের বিষয়টি নিশ্চিত করছি।‘
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে নগরীতে প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। তবে মুষলধারে টানা বর্ষণ এখনো হয়নি। নগরীর কাতালগঞ্জ, শুলকবহর, ষোলশহর, বাগমনিরাম, নিউমার্কেট, চকবাজার, জামালখান, বাকলিয়া, কোতোয়ালী, সদরঘাট, আলকরণ, ফিরিঙ্গীবাজার, মাদারবাড়ি, বহদ্দারহাট, রাহাত্তারপুল প্রভৃতি এলাকার পানি নিষ্কাষিত হয় সদরঘাট থেকে রাজাখালী পর্যন্ত আটটি খাল দিয়ে। কিন্তু এই আটটি খালের ছয়টি খাল বদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এই ছয়টি খালে পাইপ দিয়ে পানি অপসারিত হচ্ছে। খালের মুখে বাধ থাকার কারণে জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে পারছে না। অপরদিকে চাক্তাই খালে সরু রাস্তা দিয়ে এবং রাজাখালী খালে বিকল্প রাস্তা দিয়ে পানি অপসারিত হচ্ছে। কিন্তু ভারী বৃষ্টি হলে নগরীর ভেতরের পানি কিভাবে অপসারিত হবে জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পে সেনাবাহিনীর ৩৪ ব্রিগেডের পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী সুপ্রভাত প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ভারী বৃষ্টিতে পানি আটকে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ বাড়তে পারে বলে আমাদেরও শঙ্কা রয়েছে। তবে তেমন পরিস্থিতি হলে বাঁধ কেটে দিবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘এসব বাঁধের কারণে জোয়ারের পানি ঠেকানো যাবে। সাগর থেকে জোয়ারের পানি এসব এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না।’
এবার নগরীর পানি নিষ্কাশনের প্রধান তিনটি খাল (চাক্তাই খাল, রাজাখালী খাল ও মহেশখাল) ছাড়াও সদরঘাট থেকে চাক্তাই পর্যন্ত ছয়টি খালে (ফিরিঙ্গীবাজার খাল, কলাবাগিচা খাল, টেকপাড়া খাল, মরিয়মবিবি খাল, সদরঘাট-১ ও সদরঘাট-২ খাল) বদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। কোথাও পাইপ দিয়ে আবার কোথাও বিকল্প রাস্তা দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে। কিন্তু ভারী বর্ষণে কী হবে?
এ অবস্থায় খালের মুখগুলো বন্ধ থাকা ও বিকল্প সরু রাস্তা দিয়ে পানি নিষ্কাশণে ভারী বর্ষণে নগরীতে জলাবদ্ধতা মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান এবং সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রকৌশলী এম আলী আশরাফ। তিনি বলেন, ‘নগরী থেকে পানি বের হওয়ার প্রধান খালগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। তাই ভারী বৃষ্টিপাত হলে নগরীর ভেতরে আটকে থাকা পানিগুলো সহজে বের হতে না পেরে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ বাড়াতে পারে।’
এই আশঙ্কা সাধারণ নগরবাসীরও। কভিড-১৯ মহামারির কারণে এমনিতেই মানুষের দিন কাটছে অভাব, কর্মহীনভাবে এবং আতঙ্ক ও প্রবল অনিশ্চয়তা নিয়ে। এবার এর সঙ্গে যদি জলাবদ্ধতার মতো বিড়ম্বনা যুক্ত হয় তাহলে দুর্গতির আর শেষ থাকবে না। কাজেই এই প্রকল্পের সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন তাদের পরিস্থিতির ভয়াবহতা আগে থেকেই ভেবে রাখতে হবে।
নগরবাসী যেন নতুন কোনো দুর্গতিতে নিক্ষিপ্ত না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে কর্তৃপক্ষকে।