প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক তাপমাত্রাবৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার জন্য উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমাতে দ্রুত ও উচ্চাভিলাষী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলিকেও ঝুঁকি নিরসনে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে ‘রিডার্স সামিট অন ক্লাইমেট’ এ ধারণকৃত ভিডিওবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতৃবৃন্দের বিবেচনার জন্য ৪ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম রাখতে উন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ কমানো, জলবায়ুর ক্ষতি প্রশমন ও অভিযোজন সক্ষমতায় বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার ফান্ড সমান হারে বরাদ্দ নিশ্চিত করা, সবুজ-পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির বিনিময়।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে বিশ্বের ৪০টি দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এই ভার্চুয়াল জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অর্থনীতির দেশ, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উদ্ভাবনের পাশাপাশি জলবায়ু অর্থায়নে বিশেষ ছাড় দিতেও তাঁর বার্তায় উল্লেখ করেন। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এবং ভালনারেবল টুয়েন্টির (ভি-২০) সভাপতি হিসেবে তিনি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির স্বার্থ সমুন্নত রাখার কথা বলেন। এই দেশগুলো কার্বন নিঃসরণে অতি সামান্য অবদান রাখে, অথচ তাদের প্রতিনিয়তই জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি, প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম অথচ দেশটির কার্বন নিঃসরণ বৈশ্বিক তুলনায় একেবারেই নগণ্য। দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রতিবছর বাংলাদেশ ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে নানা প্রকল্পে যা জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারিতে সৃষ্ট ভয়ানক বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শক্তিশালী সম্মিলিত প্রচষ্টার মাধ্যমেই বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। মিয়ানমার থেকে বাস্তুত্যাগে বাধ্য হয়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণে পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর হুমকি সৃষ্টি হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন।
সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০৩০ সালের মধ্যে তাঁর দেশের কার্বন নিঃসরণের হার ২০০৫ সালের তুলনায় ৫০-৫২ শতাংশ কমানোর প্রতিশ্রুতি দেন এবং দরিদ্র দেশগুলোর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে সাহায্য করতে জলবায়ু অর্থায়ন বাড়াবে বলেও উল্লেখ করেন। চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্প্রতি নানা ইস্যুতে সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এক সাথে কাজ করতে তারা সম্মত হয়েছে। দুটি দেশই কার্বন নিঃসরণে বড় ভূমিকা রাখছে। এই জলবায়ু সম্মেলনের গৃহীত কর্মপরিকল্পনাগুলো আগামী নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় জলবায়ু সম্মেলনে পেশ করা হবে।
আমরা আশা করি, জলবায়ু ও করোনা মহামারির বিপর্যয় মোকাবিলায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ধারিত্রী ও মানবজাতিকে রক্ষায় একসাথে কাজ করবে। এই দুটি বিপর্যয় আজ মানবসভ্যতা ও পৃথিবীকে বিপন্নতায় নিক্ষেপ করেছে। প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে না পারলে বিশ্বের মানুষকে বাঁচানো একপ্রকার অসম্ভব হয়েই পড়বে।