সুপ্রভাত ডেস্ক »
প্রথমে বল হাতে আফগানিস্তানকে অল্পে বেঁধে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আর রান তাড়ায় তিন নম্বরে নেমে তিনি করলেন দারুণ ফিফটি। তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে অনায়াস জয়ে বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু করল বাংলাদেশ। ধারামশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে গতকাল শনিবার ৬ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। ১৫৭ রানের লক্ষ্য ৯২ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলেছে সাকিব আল হাসানের দল।
ব্যাটে-বলে দলের জয়ের নায়ক মিরাজ। বোলিংয়ে ৯ ওভারে ৩ মেডেনসহ স্রেফ ২৫ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি। পরে ক্যারিয়ারে প্রথমবার তিন নম্বরে নেমে খেলেন ৭৩ বলে ৫৭ রানের ইনিংস। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
এছাড়া পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ৫৯ রান করেন তিনি। বল হাতে ৩০ রানে ৩ উইকেট নেন অধিনায়ক সাকিব। খবর বিডিনিউজের।
রান তাড়ায় বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও তানজিদ হাসান। সতীর্থের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির পর নাজিবউল্লাহ জাদরানের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হন তানজিদ।
ফাজালহাক ফারুকির বলে ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে বোল্ড হন লিটন। স্রেফ ২৭ রানে ২ উইকেট হারানোর পর বিপদ আর বাড়তে দেননি মিরাজ ও শান্ত। দুজন মিলে তৃতীয় উইকেটে যোগ করেন ৯৭ রান।
৫৮ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় পঞ্চাশ পূর্ণ করেন মিরাজ। তবে এরপর আর টেনে নিতে পারেননি। মিড-অফে রেহমাত শাহর দুর্দান্ত ক্যাচে শেষ হয় তার ইনিংস।
একপ্রান্ত ধরে খেলতে থাকা শান্তর ফিফটি ছুঁতে লাগে ৮০ বল। চলতি বছর এটি তার অষ্টম পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস। দলকে জয়ের কাছে রেখে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন সাকিব।
পরে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে ম্যাচ শেষ করেন শান্ত। নাভিন উল হাকের বলে তিনি মিড অফের দিকে খেলেন। ফিল্ডারের ব্যর্থতায় বল চলে যায় বাউন্ডারিতে। উল্লাসে মাতে বাংলাদেশ।
এর আগে টস জিতে আফগানিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরানের উদ্বোধনী জুটিতে শুরুটা মন্দ ছিল না আফগানদের। ৮ ওভারে তারা করে ফেলে ৪৭ রান।
নবম ওভারে ইব্রাহিম জাদরানকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন সাকিব। অফসাইডে ফিল্ডার বাড়িয়ে ইব্রাহিমকে অনসাইডে খেলার জন্য প্রলুব্ধ করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ফাঁদে পা দিয়ে সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন ইব্রাহিম। দ্বিতীয় স্পেলে ষোড়শ ওভারে ফিরে রেহমাত শাহকেও আউট করেন সাকিব।
এরপর উইকেট শিকারে যোগ দেন মিরাজ। হাশমতউল্লাহ শাহিদির বিপক্ষে টানা ডট বল করার পুরস্কার পান তিনি। রানের গতি ধীর হয়ে আসায় তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন ৩৮ বলে ২৮ রান করা শাহিদি।
ফিফটির কাছে পৌঁছে যাওয়া গুরবাজকে ফেরান মুস্তাফিজ। স্লোয়ার ডেলিভারি কাভারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন গুরবাজ। বেশ খানিকটা দৌড়ে দারুণ ক্যাচ নেন তানজিদ।
সাকিবের শেষ শিকার নাজিবউল্লাহ জাদরান। শেষ দিকে রাশিদ খান, মুজিব উর রহমানকে বোল্ড করেন মিরাজ। তাসকিন ওড়ান মোহাম্মদ নাবির স্টাম্প। শরিফুলের বলে প্যাডে লেগে বোল্ড হন আজমতউল্লাহ ওমারজাই।
কোনোমতে দেড়শ পেরোনো আফগান ইনিংসের সমাপ্তি টানেন শরিফুল। পুল করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন নাভিন উল হাক।
বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টে সাকিবের উইকেট এখন ৩৭টি। স্পিনারদের মধ্যে তার চেয়ে বেশি উইকেট রয়েছে কেবল মুত্তিয়া মুরালিধরন (৬৮) ও ইমরান তাহিরের (৪০)।
বিশ্বকাপে এ নিয়ে টানা ১৩টি ম্যাচ হারল আফগানিস্তান। তাদের চেয়ে বেশি টানা পরাজয় রয়েছে শুধু জিম্বাবুয়ে (১৮) ও স্কটল্যান্ডের (১৮)।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ৩৭.২ ওভারে ১৫৬ (গুরবাজ ৪৭, ইব্রাহিম ২২, রেহমাত ১৮, শাহিদি ১৮, নাজিবউল্লাহ ৫, নাবি ৬, ওমারজাই ২২, রাশিদ ৯, মুজিব ১, নাভিন ০, ফাজাল হাক ০*; তাসকিন ৬-০-৩২-১, শরিফুল ৬.২-১-৩৪-২, মুস্তাফিজ ৭-১-২৮-১, সাকিব ৮-০-৩০-৩, মিরাজ ৯-৩-২৫-৩, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৭-০)
বাংলাদেশ: ৩৪.৪ ওভারে ১৫৮/৪ (তানজিদ ৫, লিটন ১৩, মিরাজ ৫৭, শান্ত ৫৯*, সাকিব ১৪, মুশফিক ২*; ফারুকি ৫-০-১৯-১, মুজিব ৭-০-৩০-০, নাভিন ৫.৪-০-৩১-১, রাশিদ ৯-০-৪৮-০, নাবি ৬-১-১৮-০, ২-০-৯-১)
ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ অব দা ম্যাচ: মেহেদী হাসান মিরাজ