নিজস্ব প্রতিবদক »
লালদীঘির মাঠে এবার বসেছে ১১৪তম এতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলীখেলার আসর। সবাইকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার শাহজালাল বলী। রানারআপ তরিকুল ইসলাম জীবন। তৃতীয় হয়েছেন খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমা।
গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখীমেলার উদ্বোধন করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি করপোরেশনের মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী । বিশেষ অতিখি ছিলেন সিটি করপোরশনের প্যানেল মেয়র ও ২৫ নম্বর ওর্য়াড কমিশনার আব্দুর সবুর লিটন। উদ্বোধনী আয়োজনের সভাপতিত্ব করেন আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি জহর লাল হাজারী।
সরেজমিনে দেখা যায়, ‘বিকেল সাড়ে ৩টায় খেলা শুরুর আগ থেকেই উৎসুক জনতায় কানায় কানায় পূর্ণ হতে থাকে মাঠে। সবার দৃষ্টি মাঠের মাঝে উঁচু করে বানানো লাল কাপড়ে জড়ানো বর্গাকার রিংয়ের দিকে। চাটগাঁবাসীর ঐতিহ্যবাহী বলীখেলা প্রত্যক্ষ করার আনন্দ সবার চোখে মুখে। এবারের বলীখেলায় অংশ নিয়েছেন ৬৫ জন বলী। তার মধ্যে নতুন ৬০ জন এবং গতবছরের চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণ করা ৫ জন। প্রথম পর্বে ৬০ জন প্রতিযোগীর মধ্যে ৩০ জন উত্তীর্ণ হওয়ার কথা থাকলেও ৪ জন যোগ্যতা হারানোয় ২৬ জন উত্তীর্ণ হন। তাদের মধ্য থেকে নতুন ৩ বলীকে নির্বাচকবৃন্দ নির্বাচন করেন গত বছরের ৫ বলীর সাথে খেলার জন্য। তারা হলেন মুছা বলী বনাম আব্দুর নূর বলী, শাহজালাল বলী বনাম রুবেল বলী, জীবন বলী বনাম সেলিম বলী, সৃজন বলী বনাম আমির হোসেন বলী। তাদের মধ্যে থেকে লটারির মাধ্যমে সেমি ফাইনালের জন্য নির্বাচিত হন নূর বলী, শাহজালাল বলী, জীবন বলী ও সৃজন বলী। জীবন বলী ও সৃজন বলীর মধ্যে টান টান উত্তেজনা পূর্ণ ১১ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের খেলা হয়। শুরু থকেই আক্রমণাত্মক থাকা সৃজন চাকমাকে শেষ পর্যন্ত কৌশলী জীবন বলীর কাছে পরাস্ত হতে হয়। এদিকে শাহজালাল বলী বনাম আব্দুর নূরের মধ্যে ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের খেলায় আব্দুর নূর বলী পরাস্ত হন।
তৃতীয় স্থানের লড়াইয়ে আব্দুর নূর মাত্র ৬ সেকেন্ডে সৃজন চাকমার কাছে পরাজয় বরণ করেন।
এরপর পরই অনুষ্ঠিত হয় কাক্সিক্ষত ফাইনাল, যেখানে মুখোমুখি হন শাহজালাল বলী এবং জীবন বলী। কিন্তু দর্শকদের হতাশ করে শারীরিক দুর্বলতার কারণ দেখিয়ে খেলা শুরু হতেই হাত তুলে আত্মসমর্পণ করে নেন জীবন বলী। এরই মধ্য দিয়ে ফাইনালে লড়াই না করেই বিজয়ী ঘোষিত হন শাহজালাল বলী।
বিজয়ের পর শাহজালাল বলী অনুভূতি প্রকাশে বলেন, ‘অনেক আনন্দ লাগছে। আমার অনেক দিনের ইচ্ছে পূরণ হলো। জীবন বলী শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে গেছে তাই হার মেনে নিয়েছে।’
এদিকে পরাজিত জীবন বলী শারীরিক দুর্বলতার কারণে মাঠে বসে পড়েন। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে জীবন বলী বলেন, ‘শরীর দুর্বল হয়ে গেছে আর খেলতে পারছিলাম না তাই স্যারেন্ডার করছি।’
খেলার ১ম পর্বের পর থেকে অনির্বাচিত বলীদের মধ্যে দেখা দেয় অসন্তোষ। তাদের মতে, ২৬ জন বলীর মধ্যে মাত্র ৩ জন নতুন বলীকে নির্বাচিত করেছে নির্বাচন কমিটি। কিসের ভিত্তিতে করেছেন তা কেউ জানে না। ধারাবাহিক খেলা ছাড়াই আচমকা ২৬ জনের মধ্য একেবারে ৩ জন কিভাবে নির্বাচিত হলেন এ সমীকরণ কারও বোধগম্য হচ্ছিলো না। আবার নির্বাচিত ৩ জনের সাথে আগের বছরের চূড়ান্ত পর্বে খেলা ৫ জনের মধ্যেও কোনো খেলা ছাড়াই লটারি অনুষ্ঠিত হয় এবং ৪ জন নির্বাচিত হয়। এ নিয়েও দর্শকেরা বিস্মিত হন।
এ সম্পর্কে নিয়ামত উল্লাহ নামে একজন দর্শক বলেন, ‘আমি বুঝলাম না, এতোবছরের ঐতিহ্যবাহী একটা খেলা। সেই খেলার কোনো ধারাবাহিকতা নাই। ৬০ জনের খেলা থেকে হঠাৎ করে ৪ জন চলে এলো। এমন একটা খেলায় যেখানে খেলে জেতার কথা সেখানে আয়োজকেরা রাখলো লটারি ব্যবস্থা। খেলাটার মনে হচ্ছে নামটাই আছে, মানটা আগের মতো নাই।’
প্রথম পর্বে উত্তীর্ণ হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্বের জন্য নির্বাচিত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ বাদশা বলী বলেন, ‘৬০ জনের মধ্যে ২০-৩০ জন মহেশখালীর বলী রয়েছেন। কিন্তু নির্বাচিতদের মধ্যে একজনও মহেশখালীর বলী নেই। খেলা যখন হয়নি তারা কিভাবে অযোগ্য প্রমাণিত হলো আমরা বুঝতে পারি নাই। জানতে চাইলে নির্বাচকেরা বলেন, ‘আমরা যাদের সিলেক্ট করেছি তারাই খেলবে’।
এ ব্যাপারে মেলা কমিটির সভাপতি জহর লাল হাজারী বলেন, ‘যারা অভিযোগ করছে, তারা চায় নিজেদের এলাকার বলীদের সাথে খেলতে। আবার কয়েকজন চাচ্ছে ১ম পর্ব না খেলেই কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে। যারা গত বছর চূড়ান্ত পর্বগুলোতে খেলেছে তাদের তো আবার সব পর্ব খেলানো যায় না। তাদের ৫ জনকে সেমিফাইনাল খেলানো হয়েছে। সবার মধ্যে খেলা হলে হতো অনেক সময় লেগে যাবে। পুরো দিনেও খেলা শেষ হবে না।’