দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন
নিজস্ব প্রতিবেদক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে ২৮ দল অংশগ্রহণ করেছে। যার মধ্যে চট্টগ্রামে স্বতন্ত্রসহ ২১ দলের ১২৪ জন প্রার্থী ছিলেন। এসব প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত ১৩জন প্রার্থী, স্বতন্ত্র ১৩ জন এবং জাতীয় পার্টির ১ জন প্রার্থী ছাড়া বাকি প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া নতুন-পুরাতন কোনো দলই তাদের অবস্থান তুলে ধরতে পারেনি। ফলে নির্বাচন শেষে তাদের প্রাপ্তির খাতা শূন্য। এদিকে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ গণতান্ত্রিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে জানান নগর আওয়ামী লীগের নেতারা।
এ নির্বাচনে বিএনপি’র কোনো প্রার্থী না থাকলেও চট্টগ্রামের প্রতিটি আসনে বিভিন্ন দলের প্রার্থীর অংশগ্রহণ ছিলো অধিকহারে। প্রতিটি আসনে ৬-১০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। যার মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ১৪ জন, জাতীয় পার্টির ১৪ জন, তৃণমূল বিএনপি’র ১০ জন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ৯ জন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের ১৫ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ১১ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) এর ২জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) এর ১জন, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের ২জন, ন্যাশন্যাল পিপলস পার্টির ৪জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের ৩জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৪জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ৩জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট আওয়ামী পার্টির ১ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের ২ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ১জন, ইসলামী ঐক্যজোটের ২ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ১ জন, গণফোরামের ১ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ১ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির ১ জন করে প্রার্থী দেওয়া হয়। এছাড়া মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগের দলীয় স্বতন্ত্রপ্রার্থী ছিলো ১৭ জন। যাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত ১৩জন প্রার্থী, স্বতন্ত্র ১৩জন এবং জাতীয় পার্টির ১জন ছাড়া প্রার্থী ছাড়া বাকি প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে নির্বাচনের দিন চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের নৌকা প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে।
নির্বাচনের ফলাফল বিবেচনা করে দেখা যায় জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া এসব প্রার্থীর বেশিরভাগই ভোটের সংখ্যা হাজারের গণ্ডি পেরোতে পারেনি। ১৪ আসনে প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি। যার মধ্যে দুই আসনে ছিলোনা কোনো নৌকা প্রার্থী। তারপরও এক আসন ছাড়া বাকি আসনগুলোতে জামানাত বাজেয়াপ্ত হয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের। সুতরাং এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির বড় বিপর্যয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।
নির্বাচনে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের প্রাপ্তির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রধান প্রাপ্তি হচ্ছে সংবিধান রক্ষার নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। নির্বাচনে দলের সফলতার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের সাথে আওয়ামী লীগের সাথে তুলনা করলে হবে না। জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দল হওয়ার পরও তারা তেমন ভালো করতে পারেনি। তাদের একজন ছাড়া চট্টগ্রামের সবাই জামানাত হারিয়েছে, সেক্ষেত্রে দেখতে গেলে আমরা অনেক ভালো আছি।
চট্টগ্রাম জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু জাফর অলিউল্লাহ চৌধুরী মাসুদ জানান, নির্বাচনে আমাদের কোনো প্রাপ্তি নাই।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন জানান, আমদের একটি সাংগঠনিক বৈঠক রয়েছে; তারপর নির্বাচনের বিষয়ে আমরা প্রতিক্রিয়া জানাবো।
এদিকে নির্বাচনের বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক খোরশেদ আলম সুজন জানান, নির্বাচনের ফলে দেশ একটি গণতান্ত্রিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে। তাছাড়া সরকারের অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে। নির্বাচনের ফলে এসব উন্নয়নমূলক কাজ সমাপ্তি করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এই নির্বাচনে অনেক নৌকার প্রার্থী হেরেছে। নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের জনপ্রিয়তা এবং জনবিচ্ছিন্নতা জানা গেছে। জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। নতুন যারা নির্বাচিত হয়েছে তারা পরাজিতদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করে দেশকে এগিয়ে নিবে।