নিজস্ব প্রতিবেদক »
মায়ের ভালোবাসার কাছে হেরে যায় জীবনের সবকিছু। এ কথাটি আবার প্রমাণ করলেন চট্টগ্রামের প্রভা রাণী পাল (৬৮)। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তিনি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেরআইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু একই হাসাপাতালে ভর্তি হওয়া মূমুর্ষূ ছেলের প্রাণ বাঁচাতে নিজের আইসিইউ বেড ছেড়ে দেন। এর ঘণ্টাখানেক পর মা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
নগরের দেওয়ানবাজার সিঅ্যান্ডবি কলোনি এলাকায় বসবাসকারীপ্রভা রাণী পাল কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েসপ্তাহ পূর্বে ভর্তি হয়েছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে। দুই থেকে তিনদিন পরে ভর্তি হন ছেলে শিমুল পাল (৩৮)। মায়েরশারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে আইসিইউ ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। এদিকে ছেলের অবস্থাও মূমুর্ষূ। কিন্তু খালি নেই আইসিইউ বেড।এ অবস্থায় ছেলের জন্য আইসিইউ বেড ছেড়ে দিয়ে করোনা মহামারিকালে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন মা।বুধবার রাতে এমন ঘটনার সাক্ষী হয় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল।
কোভিড জেনারেল ওয়ার্ডের বেশিরভাগ রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন। তাদেরপ্রয়োজন আইসিইউ বেড।বেডের সংকটে বেশিরভাগ রোগী পাচ্ছেন না আইসিইউ। অন্যান্য রোগীর মতই ছেলে শিমুলের অবস্থাও সংকটাপন্ন। শ^াস নিতে পারছেন না।
আইসিইউতে চিকিৎসাধীন মা জানতে পারেন তার ছেলেরমূমুর্ষূ অবস্থার কথা।শয্যা খালি না থাকায় অন্যান্য রোগীর মত ছেলেকে আইসিইউ সাপোর্ট দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা।ছেলের শ^াস কষ্টের কথা শুনে ছেলেকে আইসিইউতে আনতে চিকিৎসকদেও কাছে আর্জি জানান। নিজের চেয়ে তার সন্তানের বেঁচে থাকাকে প্রাধান্য দিলেন তিনি।
এদিকে চিকিৎসকরা তাঁকে বোঝাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এরপর বাধ্য হয়ে মাকে নামিয়ে আইসিইউ বেডে ছেলেকেস্থানান্তর করা হয়।শুরু হয় ছেলের কৃত্রিম শ^াস-প্রশ^াস নেওয়া।
এদিকে মায়ের অবস্থা আরও অবনতি হতে থাকে। আইসিইউ থেকে নামানোর পরে এক ঘণ্টার বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারেননি।পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে করোনার কাছে হার মানেন।সেই ১৬ নম্বর বেডে মায়ের বদলে বেঁচে আছেন ছেলে শিমুল।তিনিও মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
এ বিষয়ে জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব সুপ্রভাতকে বলেন, ‘কোভিড রোগীর চাপ বাড়ায় আইসিইউ সিট খালি নেই। আমাদের সামনে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটলেও এতে আমরা নিরুপায়। পরিবারের সম্মতিতে মায়ের বেড ছেলের নিকটস্থানান্তর করা হয়। মাকে বাঁচানো যায়নি।কিন্তু ছেলের শারীরিক অবস্থাও তেমন ভালো নয়।’
জানা যায়, এর আগের দিন পিতা-পুত্রের মৃত্যুতে ভারী হয়ে উঠেছিল জেনারেল হাসপাতালের পরিবেশ। একদিন পরেই আবার এমন মর্মান্তিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেন জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ও সেবিকারা।