ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে মারামারি, পুলিশের উপস্থিতিতে গোলাগুলি
শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিনিধি, রাউজান »
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর উত্তেজনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ গতকাল বিকেল ৫টার মধ্যে ছেলেদের এবং বুধবার (আজ) সকাল ১০টার মধ্যে মেয়েদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৪ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম এবং আবাসিক হল বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ৬ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে একাডেমিক কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের চলমান সকল একাডেমিক কার্যক্রম যথারীতি চালু থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় প্রধান, প্রভোস্ট এবং ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের সমন্বয়ে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রশাসনের এমন ঘোষণার নোটিশ পেয়ে প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে হল ছেড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘গত কয়েক দিনের ঘটনার প্রেক্ষিতে স্নাতক পর্যায়ের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ছাত্র ও ছাত্রীদের হল ছেড়ে যেতে আলাদা সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ক্লাস-পরীক্ষা চলবে।’
উল্লেখ্য, গত শনিবার রাতে নগরে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল গ্রুপের একটি অনুষ্ঠান ছিল। সীতাকুণ্ডে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি শেষ হয় সাড়ে ৯টায়। সেখানে গিয়েছিলেন চুয়েট ছাত্রলীগের নওফেল গ্রুপের সদস্যরা। তবে অনুষ্ঠানের কারণে রাত ৯টার বাস নিউমার্কেট থেকে আধঘণ্টা দেরিতে ছাড়ার নির্দেশ দেন তারা। তখন বাসে ছিলেন সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন গ্রুপের সদস্যরা। এ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর শনিবার রাত থেকে গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের মধ্যে কয়েক দফা হাতাহাতি ও মারামারি হয়। মারামারিতে যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম তানিম ও তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাইমুল আবেদীন আহত হন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে গত সোমবার ক্লাস বর্জন করেন চুয়েটের সব বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১১টায় ড. কুদরাত-এ-খুদা ছাত্রাবাসে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশের উপস্থিতিতে শেখ রাসেল হল থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়। এই হলে থাকে আ জ ম নাছিরের অনুসারীরা। তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে শহীদ তারেক হুদা ও শেখ রাসেল ছাত্রাবাস। অন্যদিকে নওফেলের অনুসারীরা থাকেন ড. কুদরাত-এ-খুদা ছাত্রাবাসে।
গতকালও ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন সহকারী পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম ও রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুনের নেতৃত্বে পুলিশ দল। তারা বলেছেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাসে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতিতে গুলির শব্দ শোনার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, আমরা আওয়াজ শুনে শেখ রাসেল হলে পুলিশ পাঠাই, তবে সেখানে ফটকা ফোটানো হয়েছে।
ছাত্রলীগের দুই পক্ষ মারামারির ঘটনার জন্য পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। দুই পক্ষই মঙ্গলবার সকালে বাস বন্ধের ঘটনায় দায়ী করেছে ‘বহিরাগতদের’।
চুয়েট শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ইফফাত হক নিশান বলেন, ‘শনিবার রাতে শহর থেকে ফেরা নিয়ে ঘটনা শুরু হয়েছিল। এরপর সোমবার সারাদিন তেমন কিছু হয়নি।
‘কিন্তু রাত ২টার পর থেকে তারা আবার ইট-পাটকেল মারতে শুরু করে। এরপর ভোর ৪টার দিকে হলুদ হেলমেট পড়া ও হাতে রাম দা নিয়ে বহিরাগতরা আসে। তারা বাস চলচাল বন্ধ করে দেয়। তারা সকাল ৮টা পর্যন্ত গোল চত্বরে ছিল। সেখানে আমাদের কোনো ছাত্র ছিল না।’
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৈঠক করে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ এবং হল খালি করার নির্দেশ দেয় জানিয়ে নিশান বলেন, ‘শনি ও রোববার যা হয়েছে তা তেমন কিছু না। স্যাররা সবার সাথে বসলেই সমাধান হয়ে যেত।
‘কিন্তু এরপর আজ কী হয়েছে, কেন হয়েছে বা কারা কী চাইছে তা বোধগম্য নয়।’
অন্যদিকে চুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আনাস মৃধা বলেন, ‘শহরে সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডির নিহতদের স্মরণ অনুষ্ঠান থেকে ফেরার সময় কিছু অনুপ্রবেশকারী ঝামেলা শুরু করে। আমরা তখন নীরব ছিলাম।
‘এরপর ক্যাম্পাসে ফিরেও শিক্ষকদের সহযোগিতা চেয়েছি। কিছু শিক্ষার্থী যারা ছাত্রলীগে গ্রুপিং এ বিশ্বাসী, তারা হলে হামলা চালায়। আমরা স্যারদের বারবার সব বিষয়ে জানিয়েছি। ভোর ৪টার পর থেকে আক্রমণ শুরু হলে প্রশাসন ক্লাস-পরীক্ষা ও হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
বাস চলাচল বন্ধ কারা করেছে জানতে চাইলে আনাস মৃধা বলেন, ‘উচ্ছৃঙ্খল কিছু বহিরাগত ভোর থেকে এসব শুরু করে।’