নিজস্ব প্রতিবেদক »
চীনা শিপিং কোম্পানির মামলায় ঐতিহ্যবাহী শিল্পগ্রুপ এইচআরসি’র সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ঢাকা জেলা জজ আদালত গত ৬ অক্টোবর এই রায় দিয়েছে এবং লিখিতভাবে এই রায় প্রকাশ পেয়েছে ১০ অক্টোবর। রায়ে ক্রোকক্রিত সম্পত্তি বিক্রি করে এক কোটি ১৩ লাখ টাকা চীনা প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে। একইসাথে প্রতিষ্ঠানটি যাতে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবসা করতে না পারে সেজন্য কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা এআইএন নম্বর ব্লক করে দেয়ারও আদেশ দিয়েছে আদালত।
চীনভিত্তিক কসকো শিপিং লাইনের বাংলাদেশি এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে কন্টিনেন্টাল গ্রুপ। গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কন্টিনেন্টাল ট্রেডার্সের মহাব্যবস্থাপক রাশিদ আলী বলেন, আমাদের প্রিন্সিপ্যাল অফিসের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল এইচআরসি গ্রুপ। সেই মামলায় এইচআরসি হেরে যায়। হেরে যাওয়ার পর আমাদের প্রিন্সিপ্যাল কোম্পানির সুনাম নষ্ট করায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২০১৯ সালে ঢাকা জজ আদালতে মামলা করা হয়েছিল। এখন সেই মামলার রায় কসকো শিপিংয়ের পক্ষে আসলো। আদালত এইচআরসি গ্রুপের অফিস, কাস্টমসের আইডি নাম্বার, ব্যাংক একাউন্ট ক্রোকের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা রায় বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছি।’
চীনভিত্তিক কসকো শিপিং লাইন বাংলাদেশে শিপিং ব্যবসা পরিচালনার জন্য এইচআরসি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান কসকো (বিডি) লিমিটেডকে বাংলাদেশের এজেন্ট বা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেয়। দীর্ঘদিন কাজ করার পর বিভিন্ন অনিয়মের কারণে প্রতিনিধিত্ব বাতিল হয়ে যায়। এরপর ক্ষুব্ধ হয়ে এইচআরসি গ্রুপ ৩১২ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতিপুরণ আদায়ে ২০১৬ সালে কসকো শিপিংয়ের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরের একটি আদালতে মামলা করেন। দীর্ঘ শুনানির পর যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ না থাকায় ২০১৮ সালে মামলায় হেরে যায় এইচআরসি গ্রুপ এবং সেই মামলাও বাতিল হয়ে যায়।
এরপর চীনের কসকো শিপিং লাইন পেয়ে বসে এইচআরসি গ্রুপকে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজেদের সুনাম ক্ষুণেœর অভিযোগ এনে উল্টো এইচআরসি গ্রুপের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা করে বসে কসকো শিপিং লাইন। দুই বছর মামলা পরিচালনা ব্যয় হিসাব করে ১ লাখ ৬০ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করে। ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুর আদালত সেই ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য নির্দেশ দেয় এইচআরসি গ্রুপকে। কিন্তু ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে হলে বাংলাদেশি কোন আদালতে রায় লাগবে। এই অবস্থায় কসকো শিপিং ২০১৯ সালে ঢাকার আদালতে মামলা দায়ের করেন। তিনবছর ধরে মামলার শুনানির পর ঢাকা জজ আদালতের বিচারক এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া চলতি ৬ অক্টোবর আদালত রায় দেন এবং এইচআরসি গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রি করে ১ লাখ ৬০ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার (এক সিঙ্গাপুর ডলার ৭০ টাকা ৮১ পয়সা হিসেবে বাংলাদেশি টাকায় ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা) ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এইচআরসি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (শিপিং) সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমি তো কিছুই জানি না। কোন আদেশও আমি পাইনি। এরকম ঘটনা ঘটলে তো আমি জানতাম, যেহেতু আমি শিপিং সেক্টরটা দেখি।’
উল্লেখ্য, কসকো শিপিং লাইনের বাংলাদেশি এজেন্ট হিসেবে ২০১৬ সাল থেকে কাজ করে আসছে দেশের আরেক শীর্ষ শিপিং কোম্পানি কন্টিনেন্টাল গ্রুপ। তাদের প্রতিষ্ঠান কন্টিনেন্টাল ট্রেডার্স কসকো শিপিংয়ের বাংলাদেশ প্রতিনিধি। বাংলাদেশে মাসে আমদানি-রপ্তানি মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার একক কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করছে কসকো শিপিং লাইন।