সুপ্রভাত ডেস্ক »
চট্টগ্রাম নগরীর প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে খুলে দেওয়া হবে, তবে শুরুতে সেটি চালু হবে র্যাম্প ছাড়াই।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ বলছে ‘জনদুর্ভোগ কমাতে’ র্যাম্পের কাজ শুরু হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল অংশের কাজ শেষ হওয়ার পর। আগামী বছর জুনে র্যাম্পগুলো চালুর লক্ষ্য ঠিক করেছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঝে ওঠা-নামার সংযোগ পথ বা র্যাম্প ছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে এর সুফল পুরো মিলবে না।
নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ উড়াল সড়ক নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার সময় পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বোর্ড সভায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির নাম প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।
সেদিন সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান, আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বন্দর নগরীর প্রথম এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন হতে পারে।
কাজ শেষ ৮০ শতাংশ
উদ্বোধনের বাকি আড়াই মাস। এখন পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশ। সরেজমিন দেখা গেছে, ইতোমধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত গাড়ি চলাচলের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। সল্টগোলা থেকে বারেক বিল্ডিং পর্যন্ত এলাকার কাজ শেষ পর্যায়ে।
বারিক বিল্ডি মোড়ে চলছে বক্স গার্ডারের কাজ। সেখান থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত গার্ডার বসানো চলছে। দেওয়ানহাট থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত অংশে পিলার নির্মাণের কাজ শেষের পথে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ মাসের শুরুতে টানা বৃষ্টির কারণে কয়েকদিন কাজ করা সম্ভব হয়নি। সব পিলারের কাজ শেষ। এখন গার্ডার বসানোর কাজ চলছে। কিন্তু বৃষ্টি হলে পিলারে গার্ডার বসানো ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা চেষ্টা করছি। আশা করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব।’
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর সময় ঠিক করার বিষয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে একে অন্যের পরিপূরক। অক্টোবরের শেষ দিকে টানেল উদ্বোধন করা হবে। তাই একই সময়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়া জরুরি।’
‘কারণ দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে যেসব যানবাহন টানেল ব্যবহার করে নগরীতে আসবে, তারা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে শহরে প্রবেশ করতে পারবে। টানেল চালু হলে নগরীর ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে।’
র্যাম্পের কাজ শুরু হবে পরে
১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে র্যাম্প থাকবে ১৪টি। এর মধ্যে জিইসি মোড়ে একটি, টাইগারপাসে দুটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেডে দুটি এবং কেইপিজেড এলাকায় দুটি র্যাম্প থাকবে।
আগ্রাবাদ এলাকার চারটি র্যাম্পের মধ্যে জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর সড়কে একটি, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার সড়কে একটি এবং আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কে হবে দুটি র্যাম্প।
প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল কাঠামোর কাজ শেষ না করে র্যাম্পের কাজ করা যাবে না। তাছাড়া র্যাম্পের কাজ শুরু হলে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে যানজটের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয়ে গেলে নিচের মূল সড়কে চাপ কিছুটা কমবে। তখন র্যাম্পের কাজ করা তুলনামূলক সহজ হবে। র্যাম্পের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ তৈরির কাজ চলছে।’
র্যাম্প ছাড়াই নভেম্বরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়া হবে জানিয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘আমাদের সড়কে এত জায়গা নেই যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সাথে র্যাম্পের কাজও করা যাবে। একসাথে র্যাম্পের কাজও করতে পারলে সবারই ভালো হত। কিন্তু জনগণের ক্ষতি করে প্রকল্পের কাজ করতে পারব না। আগামী বছর জুনের মধ্যেই র্যাম্পের কাজ শেষ হবে।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ ওমর ইমাম বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল কাঠামো ও র্যাম্প একসাথে করার কথা পরিকল্পনায় ছিল। এখন র্যাম্প ছাড়া চালু হলে পুরোপুরি সুফল মিলবে না।’
‘গাড়ি শুধু এক জায়গা থেকে উঠে অন্য জায়গায় নামতে পারবে। এতে এলিভিটেড এক্সপ্রেসওয়ের ব্যবহার যতটা হওয়ার কথা তার চেয়ে তুলনামূলক কম হবে। র্যাম্প চালু হলে এত টাকা খরচ করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পুরো সুফল পাওয়া যাবে।’
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চৌমুহনী অংশে পিলারের উপর গার্ডার বসানোর কাজ চলছে। বৃষ্টিতে গার্ডার বসানো ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে কাজ শুরু হলেও ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন হওয়ার সময় ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে শেষ করার সময় ঠিক করা হয়েছিল।
পরে ২০২২ সালে নকশা ‘সংশোধন’ করে আরও এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা (আগের ব্যয়ের চেয়ে ৩২ শতাংশ) ব্যয় বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
‘চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার হতে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ নামে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর চট্টগ্রাম বন্দরের আপত্তি, জমি অধিগ্রহণের জন্য অপেক্ষা, ট্রাফিক বিভাগের অনুমতি না পাওয়া, লালখান বাজার অংশের নকশা নিয়ে আপত্তি, কোভিডের সময় কাজে ধীরগতি, বিকল্প সড়ক চালু করতে দেরি এবং সবশেষ বন্দর সংলগ্ন এলাকায় নকশা পরিবর্তনসহ নানা কারণে প্রকল্প কাজে বিলম্ব হয়।
সবশেষ ২০২২ সালের সংশোধিত প্রস্তাবে চট্টগ্রাম বন্দরে চলাচলকারী যানবাহনের জন্য রাস্তা উন্মুক্ত রাখতে প্রকল্পের অ্যালাইনমেন্টে পরিবর্তন করা হয়। এছাড়া বন্দরের গাড়ি সহজে চলাচলের জন্য যথাযথ ‘ফাউন্ডেশন, সাব স্ট্র্যাকচার ও সুপার স্ট্র্যাকচার’ তৈরি করে নতুন নকশায় অ্যালাইনমেন্ট করার প্রস্তাব করা হয়।
১৬ কিলোমিটার উড়াল সড়কটি বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড-বন্দর-বারেকবিল্ডিং- চৌমুহনী হয়ে দেওয়ানহাট রেলসেতুর পশ্চিম পাশ দিয়ে পাহাড় ঘেষে টাইগার পাস মোড়ের পর মূল সড়কের ওপর দিয়ে লালখান বাজার মোড় পেরিয়ে ওয়াসার মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে গিয়ে মিলবে।