একটি সময় ছিল যখন চট্টগ্রাম নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সকলের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। পরিচ্ছন্ন নগর হিসেবে একটি ভাবমূর্তিও গড়ে উঠেছিল। এরজন্য তৎকালীন মেয়র প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে স্মরণ করেন অনেকে।
বর্তমানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বেহাল। নগরে দৈনিক তিন হাজার টনের বেশি বর্জ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে দুই হাজার টন বর্জ্য সংগ্রহ করে চসিক। আর এক হাজার টনের শেষ গতি কোথায় হয় তার উল্লেখ নেই কোথাও। সংগৃহীত এসব বর্জ্য ফেলা হয় চসিকের বায়েজিদ ও হালিশহরের পৃথক দুটি ল্যান্ডফিলে (বর্জ্যাগার)। তবে এ দুটো ল্যান্ডফিলও আর ব্যবহার উপযোগী থাকছে না।
এরমধ্যে বছরখানেক আগে নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে ৩১ কোটি ৩৬ লাখ (৩১৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার (চসিক) অনুদান এবং ঋণ সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব করে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীন কোরিয়া এনভায়রনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের (কেইআইটিআই) মাধ্যমে দুই ধাপে এ সহায়তা করার কথা। বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানায় চসিক। তবে বছর পেরোলেও এখনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে।
যদি তাই হয় তাহলে তা নগরবাসীর জন্য একটি দুঃসংবাদ। কারণ প্রায় ৭০ লাখ জনসংখ্যার এই নগরে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার সামর্থ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নেই। কেইআইটিআই দুই ধাপে প্রকল্প সহায়তা করতে চায়। তাদের প্রস্তাবিত ৩১৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হচ্ছে অনুদান। বাকি ৩০০ মার্কিন মিলিয়ন ডলার হচ্ছে ঋণ। জাতিসংঘ জলাবায়ু সম্মেলন-২৭ এর সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এটা গ্রিন ফান্ড হিসেবে এ ঋণ দেয়া হবে। এ ঋণ পরিশোধে চসিক সময় পাবে ৪০ বছর। গ্রেস পিরিয়ড থাকবে ১৫ বছর। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের ১৫ বছর পর থেকে ঋণ শোধ করতে হবে। সুদের পরিমাণ মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ।
কেইআইটিআইয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, অনুদান প্রকল্পের আওতায় এমআরএফ (ম্যাটেরিয়াল রিকভারি ফ্যাসিলিটি) সুবিধা সৃষ্টি করা হবে। এ সুবিধার মাধ্যমে সংগৃহীত প্লাস্টিক, পিচবোর্ড, কাগজ (সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, অফিসের কাগজ, মিশ্র কাগজ), কাচের বোতল, জার, অ্যালুমিনিয়াম এবং স্টিলের ক্যানসহ ধাতব পাত্র মেশিনের মাধ্যমে পৃথক করা হবে। এরপর সেগুলো ম্যাটেরিয়াল রিকভারি কারখানায় কম্প্যাক্ট করে প্রয়োজন অনুসারে কাজে লাগানো হবে। অনুদান প্রকল্পের আওতায় ছোট আকৃতির বায়ো-গ্যাস প্ল্যান্ট করা হবে। জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা এবং পরিচ্ছন্নকর্মীদের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, সচেতনভাবে বর্জ্য সংগ্রহ করা, ডোর টু ডোর সংগ্রহের জন্য আধুনিক উপকরণ সরবরাহ করা হবে।
আর ঋণ সহায়তায় প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা হবে আরেফিন নগরে স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের উন্নয়ন প্রকল্প, একটি আবর্জনাগার বন্ধ করা, ফিকেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ফুড ওয়েস্ট প্ল্যান্ট, এমআরএফ প্ল্যান্ট এবং বড় আকারের বায়ো গ্যাস প্ল্যান্ট করা হবে। আরেফিন নগর ল্যান্ডফিলটি আরো সম্প্রসারণ করে পুরোটা স্যানিটারি ল্যান্ডফিল করা হবে। সেখানে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে। বর্জ্য থেকে যে দূষিত পানি বের হয় সেটা ভূগর্ভে চলে গেলে ভূগর্ভস্থ পানিকেও দূষিত করে। সে দূষণ রোধ করার জন্য ট্রিটমেন্ট করা হবে। এছাড়া ঋণ সহায়তা প্রকল্পের আওতায় বর্জ্য পরিবহনে কম্প্যাক্টর (বিশেষ যান) সরবরাহ করবে। সংগ্রহ পদ্ধতিও উন্নত করা হবে।
আমরা জানি না, এমন একটি প্রস্তাব পাওয়ার পরেও কেন মন্ত্রণালয় ধীরগতির আশ্রয় নিয়েছে। চট্টগ্রাম এমনিতেই পিছিয়ে পড়া একটি নগর। দেশের প্রধান বন্দরের মাধ্যমে ৮৫% শতাংশ আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা সচল রাখলেও চট্টগ্রামের প্রতি বরাবরই বিমাতাসুলভ আচরণ করা হয়ে থাকে। আমরা মনে করি নতুন সরকার নতুন উদ্যমে কাজ করবে এবং এ ধরনের একটি প্রয়োজনীয় ও আধুনিক প্রকল্পকে ঝুলিয়ে রাখবে না।
এ মুহূর্তের সংবাদ