নিজস্ব প্রতিবেদক »
জরায়ু মুখ ক্যান্সার চিকিৎসায় পুরো চট্টগ্রামে একটি মাত্র ব্র্যাকিথেরাপি মেশিন। গত এক বছর ধরে সেই মেশিন অচল হওয়ায় রোগীদের ঢাকা বা দেশের বাইরে যেতে হচ্ছে। পড়তে হচ্ছে নানা ভোগান্তিতে। তবে মেশিনটি শীঘ্রই সচল হচ্ছে। সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের সকল আনুষ্ঠানিকতা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কেবলমাত্র বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা আসাটা বাকি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জার্মান প্রতিষ্ঠান বিআইবিআইজির কাছ থেকে ৬ কোটি ব্যয়ে ব্র্যাকিথেরাপি মেশিন ক্রয় করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সেবা চালু হওয়ার পর ২০১৯ সালে ৫৫ জন, ২০২০ সালে ৩৫ জন, ২০২১ সালে ১৬১ জনসহ মোট ২৫১ জনকে ব্র্যাকিথেরাপির সেবা দেওয়া হয়। ব্র্যাকিথেরাপি করতে সরকারিভাবে ১৫০০ টাকা এবং বেসরকারিতে ১১-১৫ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। চমেক হাসপাতালে সপ্তাহে দুদিন এ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। গত বছরের ৬ জুন থেকে মেশিনটি অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। ওই বছর ১৫ জুন সরবরাহ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকৌশলী এসে জানায় একটি অংশ নষ্ট হয়েছে মেশিনটির। সেই অংশটি পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে চলে যায়। মেশিনটি সচল করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিএমএসডি (কেন্দ্রীয় ওষুধাগার)’র সাথে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় চিঠি চালাচালি করে। মেশিনটি সচলকরণে সিএমএসডি’র পক্ষ থেকে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কয়েক দফায় জানানো হয়। কিন্ত মেশিনটি সরবরাহ বাবদ বিল বকেয়া থাকায় প্রতিষ্ঠানটি মেশিন সচল করতে আগ্রহ দেখায় নি। বকেয়া বিল পরিশোধের কথা জানিয়ে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে গত বছরের শেষ দিকে বকেয়া বিলের সমস্যা নিরসনের হয়েছে। তবুও সচল হয়নি মেশিন। অবশেষে মেশিন সচলের এ সুখবর এলো।
মেশিন সচল হওয়া নিয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেয়িার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘ব্র্যাকিথেরাপি সরবারহ প্রতিষ্ঠানের সাথে গত সপ্তাহে কথা হয়েছে। বকেয়া বিল পরিশোধ, বিদেশ থেকে পাটর্স আনাসহ যেসকল বাধা ছিলো সব ঠিক হয়ে গেছে। এখন শুধু অপেক্ষা শুধু বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের। শীঘ্রই তারা আসবেন। বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমন ব্র্যাকিথেরাপি মেশিন একটি প্রতিষ্ঠানটি সরবাহ করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রিসিভ না করায় দীর্ঘদিন সেটি পড়ে ছিলো। অবশেষে তারা সেটি রিসিভ করে। সেখানে মেশিনটি সচল করবে। আর আমাদের হাসপাতালে পাটর্স লাগিয়ে দিয়ে যাবে সরবরাহ প্রতিষ্ঠানটি। আশা করি শীঘ্রই ব্র্যাকিথেরাপি মেশিনটি সচল হবে। এছাড়া সেটি স্ক্যান সেবা বন্ধ আছে এক সপ্তাহ ধরে। সেটি আগামী ২২ তারিখের মধ্যে সচল হবে।’
ব্র্যাকিথেরাপি মেশিনের গুরুত্ব নিয়ে চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আলী আজগর চৌধুরী বলেন, ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। বিশেষ করে জরায়ু মুখ ক্যান্সার রোগীদের বেশি দরকার এই মেশিনটি। চট্টগ্রামে শুধুমাত্র একটি মেশিন। প্রায় ১ বছর ধরে অচল রয়েছে। যার কারণে রোগীদের ঢাকা গিয়ে সেবা নিতে হচ্ছে। গত বছর প্রায় স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সারসহ মোট ২ হাজার ৯৩০ জন ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়েছেন। তার মধ্যে ৪১০ জন অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ১৪ শতাংশ জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী ছিলেন। তাদের বেশিরভাগকে ব্র্যাকিথেরাপি দিতে হয়েছে। সবাই ঢাকা গিয়ে এ সেবা নিয়েছেন। অচিরেই এ মেশিনটি ঠিক করা হোক।
জরায়ু মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত রিনা বেগম। তিনি চলতি মাসের শেষ দিকে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসক দুটি চারটি পরীক্ষা দেয়। তারমধ্যে সিটি স্ক্যান চমেক হাসপাতালে, দুটি এভারকেয়ারে, একটি ব্র্যাকিথেরাপি ঢাকা গিয়ে করতে পরামর্শ দেয় চিকিৎসক। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘স্বল্প আয়ের আমরা। চিকিৎসা সেবা নিতে কষ্ট হচ্ছে। তার থেকে বেশি ভোগান্তি পড়তে হচ্ছে। গত সপ্তাহে আমার ছেলে ঢাকা যায়। সিরিয়াল নিয়ে আসে, সিরিয়িাল পড়েছে ঈদের পর। অথচ চমেক হাসপাতালে ঠিক হলে বিনা ভোগান্তিতে করতে পারতাম।’