চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাসের হার আর জিপিএ ৫ দুটোই কমেছে। এবার পাশের হার ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গতবার পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ৩৩৯ জন।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় ২৭৯টি কলেজের ১ লাখ ৩ হাজার ২৪৮ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশ নেয়। এরমধ্যে পাস করেছে ৭৫ হাজার ৯০৩ জন। উপস্থিতির সংখ্যা ১ লাখ ১ হাজার ৯৪৯ জন। পাসের হার ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গতবার পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ।
এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ৩৩৯ জন। গতবছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১২ হাজার ৬৭০ জন। এ বছর জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরাই ভালো করেছে। ছাত্রদের পাসের হার ৭১ দশমিক ২৪ শতাংশ। এরমধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৮৮৫ জন। ছাত্রীদের পাসের হার ৭৭ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ৪৫৪ জন।
শুধু উচ্চ মাধ্যমিকে নয় মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলও তুলনামূলক খারাপ করেছিল চট্টগ্রাম বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা।
এবার ফলাফল খারাপ হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এ এম এম মুজিবুর রহমান সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, ‘২০২০ সালের পুরোটাই আমরা করোনার কবলে ছিলাম। সে সময়ে বিশেষ বিবেচনায় পাস দেয়া হয়। পরে ২০২১ সালে তিনটি পরীক্ষার পাশাপাশি জেএসসি, এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে ফলাফল নির্ধারণ করা হয়। ২০২২ সালে পুনর্বিন্যাসকৃত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হয়। এ সময়ে পরীক্ষার্থীরা যতটা সুযোগ সুবিধা পেয়েছে পরবর্তীতে তা আর তারা পায়নি। এছাড়া এবার আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চট্টগ্রাম বোর্ডের পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। সবকিছু মিলে শিক্ষার্থীদের ওপর এক ধরনের মানসিক চাপ পড়ায় এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ১৭ আগস্ট দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পিছিয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম, মাদ্রাসা ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হয় ২৭ আগস্ট।
পাহাড়ের ৩ জেলাতেও এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় গত বছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে। রাঙামাটিতে এ বছর পাসের হার ৬৪ দশমিক ৬২, যা গতবার ছিল ৭৫ দশমিক ৩৩। খাগড়াছড়িতে গতবার ছিল ৬৮.৭৮ শতাংশ যা এবার ৬২. ২৭ শতাংশ। বান্দরবানে পাসের হার ৬৬ দশমিক ৮১ যা গতবার ছিল ৮১ দশমিক ২০ শতাংশ। পাহাড়ি জেলায় ফলাফল খারাপ করার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চট্টগ্রাম বোর্ডের শিক্ষা সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, পাহাড়ে ফলাফল খারাপের যথেষ্ট কারণ আছে। পাহাড় দুর্গম এলাকায় হওয়ায় কলেজ তেমন নেই। আবার কলেজে আসতে ছাত্রকে শহর বা উপজেলায় আসতে হয়। সেখানে যেমন শিক্ষক সংকট রয়েছে, একই সাথে আর্থিক অনটনের কারণে বিভিন্ন সুবিধা পায় না শিক্ষার্থীরা। তাই খারাপ হয় তাদের ফলাফল।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মাধ্যমিক পরীক্ষায় এ বছর ২১৬টি কেন্দ্রে ১ হাজার ১০৭টি প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮১৯ জন অংশ নেয়। যা গতবারের চেয়ে ৪ হাজার ৭০৭ জন বেশি। এর মধ্যে পাস করেছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৮৬ জন। সব মিলিয়ে গত বছরের তুলনায় মাধ্যমিকে পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কম। গত বছর পাসের হার ৮৭ দশমিক ৫৩ থাকলেও এ বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশে। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৪৫০ জন শিক্ষার্থী।
প্রাকৃতিক কারণ ছাড়া ফলাফল খারাপ করার পেছনে অন্য কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত। করোনার অভিঘাতে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কয়েকবছর লেগে যাবে। কাজেই শিক্ষায় সবার আগে মনোযোগ দেওয়া উচিত। সে সঙ্গে চট্টগ্রাম বোর্ডের ফলাফল ধারাবাহিকভাবে খারাপ হচ্ছে কেন সেটাও দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ