কক্সবাজার ঘিরে সরকারের জ্বালানি উৎপাদন অঞ্চল, সাবরাং ও সোনাদিয়ায় বিশেষায়িত পর্যটন অঞ্চল এবং মহেশখালীর মাতারবাড়িতে সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা-ের ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কক্সবাজার। তাই কক্সবাজারের সঙ্গে দেশের অন্যান্য স্থানের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে দুটি ইমার্জেন্সি লেনসহ ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ছাড়াও ধীরগতি এবং স্থানীয় গাড়ি চলাচলের জন্য দুটি সার্ভিস লেন নির্মাণেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। তবে এই মহাসড়ককে নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য আরও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করছে সরকার।
ছয় বা আট লেন যা-ই হোক, কর্ণফুলী সেতুর পর থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে হবে টোল রোড। অর্থাৎ এই রোডে চলতে গেলে মাশুল দিতে হবে বলে জানা গেছে। সড়কের গতিসীমা ঠিক রাখতে বাইরে থেকে এক্সেস কন্ট্রোল বা যান প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত থাকবে। দীর্ঘ সড়কের দুই পাশে থাকবে নেট ফেন্সিং বা ঘেরা দেওয়া। সড়কের গুরুত্বপূর্ণ বাজার ও স্থানে নির্মিত হবে ওভারপাস কিংবা আন্ডারপাস। যাতে মূল সড়কের চলাচল নিরবচ্ছিন্ন থাকে। আর কম গতির গাড়ির জন্য মূল লেনের বাইরে দুই পাশে থাকবে দুটি সার্ভিস লেন। নির্ধারিত স্থান থেকে গাড়ি মূল সড়কে ওঠার সুযোগ থাকবে। দুর্ঘটনা বা বিপদের সময় বের হওয়ার জন্য দুপাশে দুটি জরুরি এক্সিট লেন বা বের হওয়ার পথ রাখা হবে।
অর্থাৎ সর্বশেষ প্রযুক্তি নিয়ে এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হবে। গতি হবে ঘণ্টায় একশ কিলোমিটার। বর্তমানে মহাসড়কের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দুই লেনের সড়ক। দোহাজারী থেকে চন্দনাইশ পর্যন্ত দেড় থেকে দুই লেনের সড়ক। পটিয়া থেকে শিকলবাহা ক্রসিং পর্যন্ত দেড় লেনের সড়কটি সবচেয়ে খারাপ, আঁকাবাঁকা ও ঝুঁকিপূর্ণ। এখন এটি নামে মহাসড়ক হলেও কার্যত এটি একটি উন্নত গ্রামীণ সড়ক মাত্র।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পের আওতায় জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) ভিত্তিতে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। প্রাথমিকভাবে জাপানের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান মারুবেনি কর্পোরেশনকে নির্মাণ কাজ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। সেটি চূড়ান্ত হতে কত সময় লাগবে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া না গেলেও ফিজিবিলিটি স্টাডির প্রতিবেদন পরবর্তী সরকারের পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করছে কবে নাগাদ নতুন পরিকল্পনায় এই সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। এদিকে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে। বন্দর চালুর আগেই তারা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক গতিশীল করতে চায়। সড়কটি চার, ছয় কিংবা আট লেনে নির্মিত হওয়ার আগেই পাঁচটি সেতু নির্মিত হচ্ছে, যেগুলো ছয় লেনের। এসব সেতু ঘিরে যাতে কোনো যানজট না হয় সেজন্য আগেভাগে অন্তত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ও যানজটপ্রবণ স্থানে ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ করবে জাইকা। বর্তমানে মহাসড়কটি ছয় লেন বা আট লেন করতে বুয়েট বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে ফিজিবিলিটি স্টাডি চালাচ্ছে সরকার। স্টাডি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে জানা যাবে মহাসড়কটি কয় লেনের হবে।
পরিকল্পনা দেখে আশাবাদী না হয়ে উপায় নেই। কক্সবাজার, মাতারবাড়ি ঘিরে ভবিষ্যতে যে কর্মযজ্ঞ শুরু হবে তার জন্য আধুনিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা খুব প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে মহাসড়কটি আট লেনে উন্নীত করাই হবে যৌক্তিক। সরকার যথাসময়ে উদ্যোগ নিয়েছে এখন যথাসময়ে কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারলে মঙ্গল।
মতামত সম্পাদকীয়