চট্টগ্রামে স্বাগতম প্রিয় নেত্রী

কামরুল হাসান বাদল »

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বন্দরনগর চট্টগ্রামে আপনাকে স্বাগতম। দীর্ঘদিনের পর আপনাকে দেখার, আপনার কথা শোনার, আপনার দিকনির্দেশনা পাওয়ার অপেক্ষার অবসান হচ্ছে আজ। চট্টগ্রামের আপামর জনতা আজ বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড মাঠে সমবেত হচ্ছে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে স্মরণকালের মহাসমাবেশের মাধ্যমে।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, চট্টগ্রামের সঙ্গে আপনার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পর্কটি ছিল অত্যন্ত নিবিড় ও আন্তরিক। ছয় দফা আন্দোলন, এক দফার আন্দোলন, স্বাধীনতার ঘোষণা ইত্যাদির সঙ্গে চট্টগ্রামের নাম ইতিহাসে সুবর্ণ অক্ষরে লিখিত হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চট্টগ্রাম এক আলাদা অধ্যায় নিয়ে স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল।

শুধু জাতির পিতা নন, আপনার পারিবারিক ও রাজনৈতিক জীবনেও চট্টগ্রাম জুড়ে আছে অনেকটা। আপনার বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আয়োজনটি করেছিলেন চট্টগ্রামের তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতারা। চট্টগ্রামের আওয়ামী পরিবারের মানুষ যে আপনাকে নিজেদের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসে তার প্রমাণ অনেকবার দিয়েছে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে। বিশেষ করে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি লালদীঘি মাঠে সমাবেশে যোগদানের পথে আপনার ওপর এরশাদের পেটোয়া বাহিনীর নির্বিচারে গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে মৃত্যুকে বরণ করার, সে ঘটনা তার উজ্জ্বল প্রমাণ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কখনো সে দিনগুলোকে ভোলেননি। আপনার বাবা, আপনার পরিবার এবং আপনার সঙ্গে চট্টগ্রামের এই বন্ধন ও সম্পর্ককে আপনি অত্যন্ত আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছেন। তাই আপনি নিজ থেকেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব আপনার। তারপর থেকে চট্টগ্রামে মানুষ দেখেছে আপনি চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে যে কোনো প্রস্তাবকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। আপনার সহযোগিতা ও সহমর্মিতার দুয়ার সর্বদা উন্মুক্ত রেখেছেন চট্টগ্রামের স্বার্থে। যে কারণে গত চৌদ্দ বছরে চট্টগ্রামের যে উন্নয়ন ঘটেছে অতীতে কখনোই ঘটেনি। আপনার কথা ও কাজের এমন সুসামঞ্জস্য দেখে চট্টগ্রামবাসী মনে করে আপনি চট্টগ্রামের প্রকৃত অভিভাবক।

প্রিয় জননেত্রী, মিরসরাইয়ে বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে এখন উৎপাদন শুরু হয়েছে। আর কয়েকদিন পরই সম্পূর্ণভাবে খুলে দেওয়া হবে দেশের প্রথম টানেল। আপনার শাসনকালের উন্নয়নের মহাসড়কে এটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই স্বল্প পরিসরে সারা দেশের উন্নয়নের চিত্র নাই-বা দিলাম।

যেহেতু আপনি চট্টগ্রামের অভিভাবক সেহেতু কিছু বিষয়ে আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আপনি জানেন জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামের একটি স্থায়ী সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে আপনি যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছেন। সে প্রকল্পের কাজ এখনো চলছে। প্রকল্পের অধীনে থাকা খালগুলো এখন পানি চলাচলের উপযোগী নয় তবে কাজের অংশ হিসেবে একসময় হয়ত উপযোগী করে তোলা হবে। তবে এর পাশাপাশি থাকা ৫০টিরও অধিক খাল দীর্ঘদিন খনন ও পরিচর্যা না করার কারণে ভরাট হয়ে গেছে। এগুলো খননের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে দ্রুত। এ খালগুলোর সঙ্গে দেশের  অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী কর্ণফুলীও দখল-দূষণে মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে চাক্তাই খালের সংযোগস্থলকে কেন্দ্র করে দুদিকে নদী ভয়াবহভাবে ভরাট হয়ে গেছে। নদীর দুই তীর অবৈধ দখলদারের হাত থেকে এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। উচ্চ আদালতের রায়, প্রশাসনের উদ্যোগ কিছুই নদীকে রক্ষা করতে পারছে না। এ বিষয়ে আপনার সরাসরি হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে। আপনি কঠোর না হলে দেশের অর্থনীতির জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ কর্ণফুলী নদী মরে যাবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যোগাযোগ ব্যবস্থায় আপনার সরকার যুগান্তকারী কাজ করেছে। দেশের আনাচে-কানাচের সড়কও এখন অনেক অনেক উন্নত হয়েছে। নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণ করে আপনি বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছেন। রেল যোগাযোগ ব্যবস্থারও অনেক উন্নয়ন সাধন করেছেন। বিএনপির আমলে সংকুচিত করা রেলকে আপনি নতুন করে সাজিয়েছেন। নতুন রেলপথ ও স্টেশন তৈরি করেছেন। পুরনো স্টেশনগুলোকে আধুনিকভাবে পুনর্নির্মাণ করেছেন। রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া ও ট্রান্স এশিয়ান নেটওয়ার্ক আওতায় ঘুমদুম পর্যন্ত নতুন ও আধুনিক রেলপথ তৈরি করেছেন।  অচিরেই সে রেলপথ চলাচলের জন্য চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এমন একটি কাজের জন্য শুধু দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষই নয়, বাংলাদেশের জনগণ আপনার প্রতি সবিশেষ কৃতজ্ঞ।

প্রাণপ্রিয় জননেত্রী, এই রেলপথ চালু হলে শুধু দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও পর্যটন শহর কক্সবাজারের মানুষ আর পর্যটকরাই উপকৃত হবে না এই রেলপথ পূর্বের দেশগুলোর সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়া- মধ্য এশিয়া হয়ে পশ্চিমের দেশগুলোর যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, সে অপার সম্ভাবনার দুয়ারে প্রতিবন্ধক হিসেবে বিরাজ করছে চরম ঝুঁকিপূর্ণ শতবর্ষী কালুরঘাট সেতুটি। নতুন করে এই সেতু নির্মাণ না হলে আপনার এত উদ্যোগ, এত কর্মপ্রচেষ্টা সবই বৃথা যাবে। সরকারপ্রধান হিসেবে আপনার কাছে এই সেতুর ইতিহাস ও নতুন সেতু নির্মিত না হওয়ার কাহিনি বর্ণনা করা বাহুল্য। কারণ শুরু থেকে সবকিছু আপনার গোচরে আছে। এই সঙ্গে উল্লেখ করতে চাই সিআরবি এলাকায় বেসরকারি ইউনাইটেড হাসাপাতাল প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে চট্টগ্রামের জনগণ দেড় বছরের মতো সময় আন্দোলন করেছে। অবশেষে আপনার নির্দেশে এই হাসপাতাল অন্যত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর জন্য আপনার প্রতি চট্টগ্রামবাসীর কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

আপনি যেহেতু চট্টগ্রামের অভিভাবক চট্টগ্রামের উন্নয়নের সব দায়িত্ব আপনি নিজেই নিয়েছেন সেহেতু এসব বিষয়ে আপনার সিদ্ধান্ত আপনি অবশ্যই জানিয়ে যাবেন।

জাতির পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণের স্বার্থে আপনি সুস্থ দেহ-মনে বেঁচে থাকুন এবং আরও অনেক বছর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দিন।

আপনার দীর্ঘ জীবন কামনা করি।

 

 

লেখক : কবি, সাংবাদিক