নিজস্ব প্রতিবেদক
যতই ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ততোই বাড়ছে উত্তাপ। এবারের নির্বাচনে প্রায় সব আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে নৌকার সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থীর। এসব আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বেশিরভাগ স্বাভাবিকভাবে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্বাচনে অংশ না নেওয়া বিএনপি-জামায়াতসহ ভিন্ন দলের ভোটাররা। এমনটি জানিয়েছেন স্বতন্ত্রপ্রার্থীদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। বিএনপি-জামায়াতের ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত করার বিষয়টি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণার লক্ষ্য হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তবে নির্বাচন পরিহার করে বিএনপি-জামায়াতের কোনো সমর্থকের কেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন দুই দলের জেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীলরা। এদিকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় বিএনপির কয়েকজন নেতাকে দলচ্যুত করেছে দলটির হাই-কমান্ড।
মাঠ পর্যায়ে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক এবং নেতাকর্মীদের সাথে কথা বললে তারা নির্বাচন এবং ভোট সেন্টারে যাওয়ার বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করে। তবে স্বতন্ত্রপ্রার্থীদের বিভিন্ন সভাসমাবেশে অবাধে দেখা মিলছে ভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের। বিশেষ করে বিএনপির অনেক কর্মীকে স্বতন্ত্রপ্রার্থীদের প্রচারণায় অংশ নিতেও দেখা যাচ্ছে। দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার ভয় এবং দলীয় শাস্তির ভয়ে নিজেদের হাইলাইটে আনছেন না বলে জানান স্বতন্ত্রপ্রার্থীদের প্রচারণায় অংশ নেওয়া ভিন্ন দলের সমর্থকেরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। এ সময় অনেকেই আমাদের ওপর জুলুম অত্যাচার করেছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা বিভিন্ন সময় আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিপরীতে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে রয়েছেন মুজিবুর রহমান সিআইপি ও আব্দুল্লাহ কবির লিটন। চট্টগ্রামের এই আসনটিতে এই তিন প্রার্থীর লড়াই হচ্ছে হাড্ডি-হাড্ডি। আসনটিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যে তিনভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। তাই প্রত্যেকপ্রার্থী প্রচারণার মাধ্যমে নিজেদের শক্তি জাহির করছে সমানতালে। পক্ষান্তরে সমাবেশ এবং গণসংযোগে আওয়ামী লীগের দলীয় ভোটার ছাড়াও ভিন্ন দলের ভোটারদের সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান স্বতন্ত্রপ্রার্থী নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
স্বতন্ত্রপ্রার্থী আব্দুল্লাহ কবির লিটন (ট্রাক) এর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ১ নম্বর সদস্য নুরুল আলম জানান, আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের ৬০ শতাংশ আমাদের পক্ষে। তাছাড়া যারা নিরপেক্ষ ভোটার তারা লিটন ভাইয়ের মতো একজন প্রার্থীকে পেয়ে খুশি। যে সব দলগুলো নির্বাচন বয়কট করেছে সেসব দলের সাধারণ ভোটাররাও লিটন ভাইয়ের পক্ষে কারণ তারা লিটন ভাইয়ের মাধ্যমে নির্যাতিত হয়নি। আমরা সবার ঘরে ঘরে গিয়ে গণসংযোগ করছি।
চট্টগ্রামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আসন আংশিক সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া আসন। যেখানে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর বিপরীতে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আব্দুল মোতালেব সিআইপি। এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অবস্থানে রয়েছে এই দুই প্রার্থী।
আসনটির স্বতন্ত্রপ্রার্থী আব্দুল মোতালেব সিআইপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ডা. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম ১৫ আসনে গত দুই সংসদ নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি, তাই নির্বাচনের প্রতি সাধারণ ভোটারদের অনীহা ছিলো। তবে আমরা প্রত্যেকের দ্বারে দ্বারে গিয়ে এটা বুঝাতে সমর্থ হয়েছি যে এবার সবাই নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন। এই আসনের নৌকা প্রার্থী গত ৪দিন ধরে মাঠে নেই অথচ আমরা সবসময় মাঠে আছি, প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছি। আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের ২-৩ জন ছাড়া বাকি সব কেন্দ্রীয়, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আমাদের সাথে। নদভী ওনার নাতিসহ পরিবারের সদস্যদের মামলা দিয়েছে, বিএনপি-জামায়াতের মানুষদের নির্যাতন করেছে। তাই নদভী এবং নদভীর পরিবারের ওপর ভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। ভিন্ন দলের যারা নির্বাচনের বিরোধিতা করছে তাদের নেতারা ভোট কেন্দ্রে আসবে না ঠিকই কিন্তু সাধারণ সমর্থকেরা ঈগল মার্কায় ভোট দিতে সেন্টারে আসবেন।
চট্টগ্রামের ১৪ আসনে নৌকা প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর বিপরীতে রয়েছেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার চৌধুরী।
স্বতন্ত্রপ্রার্থীর পারিবারিক সদস্য ও সহকারী মোজাম্মেল হক জানান, আমরা গণসংযোগ করে বুঝছি, ৯০ শতাংশ মানুষ আমাদের পক্ষে। দলীয় সাপোর্টার ও অর্ধেকের বেশি সমর্থক আমাদের। আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিএনপি, এলডিপিসহ বিভিন্ন দলের সমর্থকদের আমরা সাড়া পাচ্ছি। তারা আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা ভোট কেন্দ্রে এসে ট্রাক মার্কায় ভোট দিবেন।
এই আসনগুলো ছাড়াও চট্টগ্রামের প্রায় সব আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় ভোটার ছাড়া ভিন্ন দলীয় ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে দল-মত নির্বিশেষ সব দলের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
নির্বাচনে নিজ দলীয় সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়া না যাওয়া বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর জামায়াতে ইসলামীর এক দায়িত্বশীল বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণভাবে নির্বাচনবিরোধী অবস্থান করছি। আমরা যে যেখানে নির্বাচন বয়কট করেছি, সেখানে আমাদের নেতা-কর্মী এবং সমর্থকেরা ভোট সেন্টারে ভোট দিতে যাবে এটা কখনোই হতে পারেনা।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় বন্দরের সহ-সভাপতি আবু জহুরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দক্ষিণ জেলায়ও কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’