সুপ্রভাত ডেস্ক »
চট্টগ্রাম জেলায় করোনাভাইরাসের টিকার দুটি ডোজ যারা নিয়েছেন, তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ নিয়েছেন তাদের মাত্র ২৫ শতাংশ। সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকায় টিকাদানের এ পরিস্থিতি চিন্তায় ফেলেছে স্বাস্থ্য বিভাগকে।
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই চট্টগ্রামে করোনভাইরাস শনাক্তের হার বাড়ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বুধবার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা প্রস্তুত রাখাসহ ৮ নির্দেশনা দিয়েছেন সিভিল সার্জন। খবর বিডিনিউজের।
বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৫১১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে জেলায় ৭০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৪ শতাংশের মত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক মানুষ বুস্টার ডোজ না নিলে ‘ইমিউনিটি’ তৈরি হবে না। এতে সংক্রমণের বৃদ্ধি ঠেকানো কঠিন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, তার জেলায় বুধবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৭২ লাখ ২৯ হাজার ১৯৬ জন। তাদের ৬৭ লাখ ৮৮ হাজার জন নিয়েছেন দ্বিতীয় ডোজ। আর বুস্টার ডোজ নিয়েছেন তাদের ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ১৭৬ জন। ‘দ্বিতীয় ডোজের সাথে তুলনা করলে বুস্টার ডোজ গ্রহণের হার খুবই কম। আরও কমপক্ষে ৫০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে।
‘কিন্তু এসএমএস পাঠানোর পর অনেকে টিকা নিতে আসছেন না। প্রতিদিন যে টিকা বরাদ্দ দেয়া হয়, তার এক তৃতীয়াংশ ফেরত আসে।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রে টিকা দিতে আসা মো. ফরিদ বলেন, ‘১০দিন আগে আমার এসএমএস পেয়েছি। আজ টিকা দিতে এলাম।’
ওই কেন্দ্রে বুস্টার ডোজ নিতে কিছু নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন, তবে চলতি বছরের শুরুর মাসগুলোর তুলনায় সেই সংখ্যা একেবারেই কম।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবদুর রব বলেন, ‘স্কুলের শিশু-কিশোরদের মধ্যে বুস্টার ডোজ নেওয়ার প্রবণতা খুবই কম। এছাড়া একেবারে শুরুতে বুস্টারের বিষয়ে যে বয়স্কদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল, তাতে সম্ভবত মানুষের মনে ধারণা হয়েছে বুস্টার শুধু বয়স্কদের জন্য।
‘আবার অনেকে এখনো অপেক্ষা করেন কখন এসএমএস আসবে তারপর বুস্টার নিতে কেন্দ্রে যাবেন। অথচ এখন দ্বিতীয় ডোজের পর চার মাস পার হলেই বুস্টার ডোজ নেওয়া যায়। এটা হয়ত অনেকে জানেন না।’
এ কথার প্রমাণ মেলে জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার বুস্টার ডোজ দিতে আসা রাজু চৌধুরীর কথায়। তিনি বলেন, ‘সেকেন্ড ডোজ দিয়েছিলাম ছয় মাস আগে। কিন্তু মেসেজ আর পাইনি। আমি অপেক্ষায় ছিলাম। ২ দিন আগে মেসেজ এসেছে। আজকে টিকা দিতে এসেছি।’
ডা. আবদুর রব বলেন, ‘বুস্টার দিতে হবে। পাশাপাশি অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানায় এখন আগ্রহ খুব কম দেখা যাচ্ছে।’
সিভিল সার্জন ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘এখন লক্ষণ দেখা দিলেও মানুষের মধ্যে টেস্ট করানোর আগ্রহ নেই। আমাদের হাতে থাকা কিটের মধ্যে কিছুর মেয়াদ আগামী নভেম্বরে শেষ হয়ে যাবে।
‘এছাড়া সরকারি ব্যবস্থাপনায় অ্যান্টিজেন টেস্ট করাতেও খুব কম লোক আসে। কিন্তু লক্ষণ থাকলে অবশ্যই পরীক্ষা করানো উচিত।’
গত একদিনে জেলায় যে ৭০ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে ৫০ জন নগরীর এবং ২০ জন উপজেলাগুলোর বাসিন্দা। অথচ চলতি মাসের শুরুতেও উপজেলাগুলোতে শনাক্তের হার ছিল শূন্যের ঘরে।
সিভিল সার্জন বলেন, ‘উপজেলাগুলোতেও সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। সামনে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পশুর হাট বসবে। প্রতিটি হাটে দিনে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হবে। শুধু জেলা না, হাটগুলোতে সারাদেশ থেকে মানুষ আসবে।’
এই সমাগমে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করা না হলে আগামী মাসে সংক্রমণের হার আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা সিভিল সার্জনের।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কোভিড রোগীদের জন্য বিশেষ শয্যা প্রস্তুত, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রস্তুতি, অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা, সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার, পরীক্ষা বাড়ানো, সন্দেহভাজনদের অ্যান্টিজেন টেস্ট এবং প্রয়োজনে পিসিআর টেস্ট করাসহ আটটি নির্দেশনা দিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়।
কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য বন্দরনগরীর বিশেষায়িত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে এখন পর্যন্ত একজন রোগী ভর্তি আছেন। তবে অন্য হাসপাতালেও কিছু রোগী আছেন।
‘স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা অবশ্যই কর্তব্য। পাশাপাশি লক্ষণ দেখা গেলে পরীক্ষা করাতে হবে। আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে।’