নিজস্ব প্রতিবেদক »
নতুন মলাটের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে এলো শ্রেণিকক্ষ থেকে স্কুল আঙ্গিনায়। তবে নেই সেই চিরচেনা বই উৎসবের আনন্দ-উল্লাস। দুই বছর আগেও নতুন বছর ও শিক্ষাবর্ষের শুরুতে বই উৎসব উপলক্ষে স্কুল আঙ্গিনা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে থাকতো। তবে আনুষ্ঠানিক বই উৎসব না হলেও নতুন বই পেয়ে আনন্দিত শিক্ষার্থীরা। বছরের প্রথম দিনে খালি হাতে স্কুলে এসে ব্যাগভর্তি বই নিয়ে ঘরে ফিরেছে তারা।
গতকাল শনিবার নতুন বছরের প্রথম দিনে নগরের সকল বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়েছে। প্রথম দিনে সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই না পেলেও ক্রমান্বয়ে তা বিতরণ হবে।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে দুই বছর যাবৎ আনুষ্ঠানিক বই উৎসব করা হয়নি। সরকার নির্ধারিত নির্দিষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে নতুন বই। ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এ বই বিতরণ কার্যক্রম।
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোট ১ কোটি ৫২ লাখ বই বিতরণ করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদুল আলম হোসাইনী। তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে বই বিতরণ করা হবে। মূলত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার এমন পদক্ষেপ নিয়েছে।’
ডা. খাস্তগীর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়সহ নগরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, বছরের প্রথম দিনে নতুন স্কুল ড্রেসে অভিভাবকের সাথে বিদ্যালয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা। তাদের চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক। স্কুল গেটে প্রবেশ করতেই সহপাঠীদের দেখা পেয়ে তারা একে অপরের সাথে কুশল বিনিময় শেষে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে। শিক্ষকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষে নতুন বই বিতরণ করেন। বই পেয়ে শিক্ষার্থীরা নতুন বইয়ের মলাট, সূচিপত্র, পৃষ্ঠা নেড়েচেড়ে দেখে। খালি হাতে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে ব্যাগভর্তি বই নিয়ে খুশিমনে বেরিয়ে পড়ে। এভাবে দুপুর দুটা পর্যন্ত চলে বই বিতরণ কার্যক্রম।
‘নববর্ষে বাবা দিয়েছেন নতুন স্কুল ড্রেস, মা দিয়েছেন ব্যাগ, স্কুলে এসে পেয়েছি নতুন বই। আজকের দিনে এতগুলো নতুন জিনিস পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত’- বলছিল ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আকিল।
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নতুন বছরে প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ। নতুন বছরের প্রথম দিনে বই পাওয়ায় শিক্ষার্থীরাও পাঠে মনোযোগী হবে। কারণ বছরের প্রথম দিনেই তারা জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান উপহার বই হাতে পেয়েছে।’
ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহেদা আক্তার বলেন, ‘সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই বিতরণ করা হয়েছে। ৫ম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির ৪শ’ শিক্ষার্থী পেয়েছে নতুন বই। বই উৎসব না হলেও বই বিতরণে শিক্ষার্থীরা বই উৎসবের স্বাদ নিয়েছে। নতুন বই পেয়ে তারা খুবই উচ্ছ্বসিত।’
সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যাবিধি মেনে বই বিতরণ করা হয়েছে। নতুন বছরের প্রথম দিনে ৫ম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির ৬শ’ শিক্ষার্থীর মাঝে বই বিতরণ করা হয়। সরকার নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বই বিতরণ করা হবে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বই উৎসব না হলেও শিক্ষার্থীরা নতুন বই পেয়ে আনন্দিত।’
কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সানজিদা মোক্তার তানজিন বলেন, ‘৬ষ্ঠ শ্রেণির ২৭৫ জন শিক্ষার্থী বই পেয়েছে। নতুন বই পেয়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা অত্যন্ত আনন্দিত। ভর্তি কার্যক্রম শেষ হলেই সকল শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে যাবে। এখনও অনেক শিক্ষার্থীর ভর্তি ওয়েটিংয়ে রয়েছে। সরকারি প্রজ্ঞাপন পেলে ভর্তি কার্যক্রম নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হবে।’
অপর্ণাচরণ সিটি করপোরেশন বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জারেকা বেগম বলেন, ‘পূর্বে নতুন বছরের প্রথম দিনে বই উৎসব আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হত। করোনা সংক্রমণ রোধে গত দুই বছর ধরে বই উৎসব হচ্ছে না। তবে নতুন বছরের প্রথম দিনে বই বিতরণ করা হয়েছে। ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে মেয়রের হাত থেকে বই নিয়েছে। স্কুলে ৮ম শ্রেণির ৬টি শাখা থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীকে বই বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষার্থী পাবে নতুন বই।’
চট্টগ্রামে দেড় কোটি বই পাবে শিক্ষার্থীরা
স্কুলে নতুন বই বিতরণ