চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের হার আগের দিনের ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে গত সোমবার ২৪.৫৯ শতাংশ হয়েছে যা অতিশয় উদ্বেগজনক। অন্যদিকে উত্তর চট্টগ্রামের ৪টি উপজেলায় সংক্রমণ বেড়ে গেছে। চট্টগ্রামে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত করেছেন গবেষকরা। গবেষকদের মে মাসের শেষ সপ্তাহে ৪২ জনের নমুনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, এদের মধ্যে ২ জন ভারতীয় করোনার ‘ডেল্টা’ ধরন আক্রান্ত, ৪ জন যুক্তরাজ্যের ‘আলফা’, ৩৩ জন দক্ষিণ আফ্রিকার ‘বিটা’ ধরণে আক্রান্ত। ভারতীয় ধরন শনাক্ত হওয়ায় আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রামে গত সোমবার করোনায় মৃত্যুবরণ করেছে ৩ জন, এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৬৪৫ জন, আক্রান্তের সংখ্যা ৫৫ হাজারের বেশি, ঐদিন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২২৫জন। শনাক্তের হার বেড়ে গেছে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়ায়।
দেশব্যাপী করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু দুইই বেড়েছে। গত সোমবার শনাক্ত রোগী ৩ হাজার ছাড়িয়েছে, মারা গেছে ৫৪ জন। শনাক্ত গত ৪৯দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ, মৃত্যু গত ৩৬ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশের ১৫টি জেলায় সংক্রমণ বাড়ছে, স্থানীয় প্রশাসন ১৩টি জেলায় লকডাউন অথবা বিশেষ বিধিনিষেধ জারি করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস সংক্রমণে কোনো রকম ঝুঁকি না নিয়ে সংক্রমিত এলাকায় চলাচলসহ অন্যান্য কার্যক্রম স্থানীয়ভাবে বন্ধ (ব্লক) করে করোনা নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছেন। সারা দেশে চলা বিধিনিষেধ আগামী ১৬ জুন শেষ হচ্ছে।
আগামী ১৯ জুন থেকে ফাইজার-সিনোফার্মের টিকা দেওয়া শুরু হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা পাওয়া যাবে ১০ লাখ, বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা সংগ্রহে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। টিকাকে বৈশ্বিক পণ্য হিসেবে বিবেচনা করে সকল দেশকে বৈষম্যহীনভাবে তা সরবরাহ করা উচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মজুদ করা কিছু টিকা মেয়াদউত্তীর্ণ হয়ে গেছে। টিকা বিতরণে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা ধনী দেশগুলির মানা উচিত। যে সকল দেশের টিকা উৎপাদনে সক্ষমতা আছে, সে সব দেশে যৌথভাবে টিকা উৎপাদনের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন, টিকা প্রস্তুতকারী দেশগুলি এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে পারে করোনা মহামারি প্রতিরোধ করতে। কেননা এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, সকল দেশ নিরাপদ না থাকলে কোনো দেশই নিরাপদ নয়।
চট্টগ্রামে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। বিপদ ঘাড়ের ওপর চেপে বসলেও আমাদের হুঁশ হয় না। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় দেওয়া বরাদ্দ গত বছর পুরো টাকা খরচ করতে পারেনি। জেলা-উপজেলায় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা এবং আইসিইউ স্থাপনে ধীরগতি সংকট বাড়াচ্ছে। সীমান্তবর্তী জেলা-উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতির অবনতির কথাও পত্র-পত্রিকায় এসেছে।
করোনা মহামারি কবে শেষ হবে বলা যাচ্ছে না, বরং দেখা যাচ্ছে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে নানা কারণে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি পালন, সমাবেশ এড়িয়ে চলা, নিজের ও সকলের সুরক্ষায় সতর্ক হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। চট্টগ্রামের যে সব উপজেলায় সংক্রমণ বাড়ছে সেগুলির প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে না পারে। সেই সাথে মহানগর ও উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বাড়াতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়