করোনায় চট্টগ্রাম জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি গুরুতর রূপ নিয়েছে। ১ দিনেই শনাক্তের সংখ্যা ৫১৮ জন। পরিস্থিতির অবনতির আশংকায় চট্টগ্রাম মহানগরীতে সন্ধ্যা ৬টার পর বিপণি বিতান ও দোকান পাট বন্ধ রাখতে জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে দেশব্যাপী লকডাউনও দেয়া হতে পারে। এর আগে মুদি দোকান, কাঁচাবাজার ও ওষুধের দোকান সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এসবই প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি মোকাবেলায় কিন্তু সবচেয়ে প্রয়োজন আক্রান্ত মানুষকে চিকিৎসা সেবা প্রদানের সব ব্যবস্থা ঠিক রাখা, সে কাজটিতেই ঘাটতি প্রবল। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা প্রকাশ করে আসছে, এটি যেমন দুঃখজনক এবং আত্মঘাতী, অন্যদিকে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানায় এই পরিণতি – কেবল এই কথা বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাশ কাটানোর উপায় নেই। বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় ঢেউ অনেক আগেই শুরু হয়েছে, আমাদের দেশে গত ২/১ মাসের আলামত তাই বলে কিন্তু সকল সরকারি সংস্থা, মন্ত্রাণালয় প্রস্তুতি নেয়নি, এখন ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে কিন্তু সেসব প্রতিপালনে সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন যা চোখে পড়ছে না। আইন শৃংখলা বাহিনী প্রথম করোনা মোকাবেলায় যে ভাবে দায়িত্ব পালন করেছে, সেরকম এবার চোখে পড়ছে কই! রাজনৈতিক দলের সমাবেশে অধিকাংশ কর্মীর মাস্ক নেই সেটি কি নেতারা দেখেননি? দায়িত্বশীল মহল, সুশীল সমাজ, সামাজিক সংগঠনগুলিও তেমন এগিয়ে আসছে না বিপদ মোকাবেলায় এটি আরও বিপর্যয়কর।
চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলায় যে অপ্রতুল স্বাস্থ্যসেবা বিদ্যমান, তার প্রতিকারে চট্টগ্রামের মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের উদ্যোগ নেয়া চাই। সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে ঠাঁই নেই, এ অবস্থায় সাময়িকভাবে কিছু কোভিড হাসপাতাল চালু করা প্রয়োজন এবং তা অবিলম্বে। প্রয়োজনে সরকারি ভবন ও কমিউনিটি সেন্টারগুলিও ব্যবহার করা যেতে পারে। চট্টগ্রামে আইসিইউ প্রয়োজনের তুলনায় একবারেই কম, এ ব্যাপারে আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ছিল। নগর ও জেলার বিভিন্ন হাসপাতালগুলি কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থায় আনার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়নি, এটি দুর্ভাগ্যজনক। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের ব্যাপক বিস্তারের কারণে আইসিইউ কিংবা সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
করোনার এই বিপজ্জনক সময়ে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত করণীয়গুলি ব্যাপকভাবে প্রচার করা প্রয়োজন। জরুরি বিপদ মোকাবেলায় কাউন্সিলরের নেতৃত্বে ওয়ার্ডভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী ব্রিগেড গঠন করা প্রয়োজন। জাতীয় এই বিদপ মোকাবেলায় দলমত নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনসাধারণের এই দুঃসময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও ওষুধের দাম যাতে সহনীয় থাকে সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে। জীবন ও জীবিকা পাশাপাশি রাখতে হলে সচেতনতা প্রয়োজন, প্রয়োজন স্বাস্ত্যবিধি মেনে চলা, এছাড়া কোন বিকল্প নেই।
মতামত