জুলাই মাসে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা-উপজেলায় করোনা পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। গত রোববার চট্টগ্রামে ১ দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ১৪ জনের। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭০৯ জন। এর আগে শুক্রবারে শনাক্ত ৭৮৩ জন। মৃতদের মধ্যে ৭জন মহানগরের, ৭ জন উপজেলার। দেশেও গত রোববার সর্বোচ্চ মৃত্যু ২৩০ জন, সোমবার ২২০জন, ঐদিন শনাক্ত সর্বোচ্চ ১৩৭৬৮ জন। জুলাই মাসে চট্টগ্রাম জেলায় সংক্রমণের হার ৩২ থেকে ৩৮ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী করোনায় বেশি মানুষের মৃত্যুর তালিকায় এখন বাংলাদেশের স্থান দশম। নতুন রোগী শনাক্তের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বাদশ স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে চলেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যেও তা এসেছে। বিষয়টি আমাদের সরকার ও জনগণের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। করোনা প্রতিরোধে জাতীয় প্রচেষ্টার সমন্বয় না ঘটলে, জনগণ স্বাস্থ্যবিধি পালনে উদাসীন হলে, স্বাস্থ্যসেবা ও ব্যবস্থাপনার উন্নতি না ঘটলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে স্বাস্থ্যবিদগণের অভিমত।
চিকিৎসকরা বলছেন, ভয়ংকরভাবে শুরু হয়েছে জুলাই মাস। সামনে কুরবানের পশুর হাট, ঈদুল-আজহার সময় গাদাগাদি করে মানুষের শহর থেকে গ্রামে যাওয়া ও ফিরে আসাÑসবমিলিয়ে জুলাই মাসে সংক্রমণ পরিস্থিতি গ্রামে-শহরে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। এখন গ্রামে শনাক্ত বেড়ে যাচ্ছে অথচ স্বাস্থ্যসেবা একেবারেই অপ্রতুল। দেশের হাসপাতালগুলিতে সকল ধরণের স্বাস্থ্যসেবায় সংকট ও অব্যবস্থাপনা চলছে। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, টেকনোলজিস্টের ব্যাপক ঘাটতি সকল সরকারি হাসপাতালে। আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই, থাকলেও দক্ষ কর্মীর অভাবে তা অব্যবহৃত পড়ে আছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর ৬০ লাখের বেশি মানুষের জন্য মাত্র ২টি হাসপাতাল। তাও নানা অব্যবস্থাপনায় পরিপূর্ণ। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, চমেক হাসপাতালে ২০০ শয্যার কোভিড ওয়ার্ডে গত রোববার রোগী ভর্তি ছিলেন ২৮১ জন। গ্রামের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ, সংকটাপন্ন রোগীরা চিকিৎসার জন্য ছুটে আসছে নগরে, কিন্তু এখানেও আইসিইউ, উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহে সংকট রয়েছে। করোনা সংক্রমণের দেড় বছরেও স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি ঘটেনি চাহিদামতো। রোগীদের সেবা দিতেই হবে-এটি সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। গ্রামের গরিব কৃষক, শহরের শ্রমজীবী মানুষ দেশের মানুষের জন্য অন্ন, সকল প্রকার পণ্য, সেবা সরবরাহ করে চলেছে অথচ তারা রোগে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত।
আজ থেকে গণ টিকাদান কার্যক্রম পুনরায় শুরু হচ্ছে। চীনের সিনোম্যাক্স ও মডার্নার টিকা দিয়ে শুরু হচ্ছে এই কার্যক্রম, ফাইজার টিকা দেওয়া হচ্ছে প্রবাস থেকে আসা কর্মজীবীদের। ১৫ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত চলমান বিধিনিষেধ শিথিল করা হতে পারে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। এই করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ সময়ে টিকা নেওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালনের বিকল্প নেই। করোনার যে ভায়োলেন্ট ধরণ এখন দেখা দিচ্ছে তাতে নিজের, পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশির সুরক্ষায় সচেতন, সজাগ না হলে বিপদ অনিবার্য।
মতামত সম্পাদকীয়