নিজস্ব প্রতিবেদক »
গ্যাস সংকটের প্রভাব পড়েছে গণপরিবহন এবং এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাসের দোকানে। গত দুদিন ধরে গ্যাসনির্ভর যানবাহন না চলায় নগরী ও তার আশপাশের উপজেলাগুলোতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। পাশাপাশি বাড়তি ভাড়ায় পৌঁছাতে হয়েছে গন্তব্যে। অন্যদিকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার ও রান্নার চুলা।
শনিবার দুপুরে নগরীর কর্ণফুলী, বহদ্দারহাট ও নিউমার্কেট মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গণপরিবহনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনেক মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অনেককেই বাধ্য হয়ে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে পায়ে হেঁটে কিংবা রিকশায় করে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে।
ইপিজেড যেতে গাড়ির জন্য নিউমার্কেট এলাকায় অপেক্ষারত শামসুন্নাহার নামে এক এনজিও কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিদিন গ্যাসচালিত আগ্রাবাদের যেসব গাড়ি পাওয়া যেত, আজ সেগুলো একেবারেই চলছে না। তেলচালিত গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি অনেকক্ষণ ধরে।’
বহদ্দারহাট এলাকায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করা মো. জাফর উদ্দিন বলেন, ‘নিউমার্কেট থেকে আসা তিন নম্বর গাড়ি করে প্রতিদিন কালুরঘাট যাই। আজ এ গাড়ি পাওয়ায় যাচ্ছে না। অনেক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি।’
অন্যদিকে একই চিত্র দেখা যায় নগরীর পাশাপাশি উপজেলাতেও। কর্ণফুলী, আনোয়ারা, পটিয়া, কালুরঘাট এলাকা থেকে আসা সিএনজি চালিত অধিকাংশ গাড়ি চলাচল গতকাল বন্ধ ছিল। এতে জ্বালানি তেলে চালিত গাড়িগুলোতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। পটিয়া থেকে আসা কর্ণফুলী আসা মো. ছাবের আহমেদ বলেন, ‘প্রতিদিন ব্যবসায়ের কাজে সকালে আসতে হয়। আজ দেখলাম পটিয়া রোডে তেমন যানবাহন নেই।’
ভাড়া বাড়তি নেওয়ার অভিযোগ
অন্যদিকে গ্যাস সংকটের কারণে গ্যাসচালিত গাড়ি বন্ধ থাকাতেই সাধারণ যাত্রীরা অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তেলবাহী যানবাহনের ওপর। সেই সুযোগে যাত্রীদের থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও করেন যাত্রীরা।
মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, ‘আজ গ্যাসচালিত গাড়ি তেমন চলছেই না। তেলে চালিত গাড়ি দুয়েকটা আসলেও যাত্রীদের অনেক ভিড়। এর মধ্যে গাড়ির হেলপার বলছে ওঠানামা ভাড়া ১৫ টাকা।’
একই চিত্র উপজেলাগুলোতেও
কর্ণফুলী বড়উঠান থেকে চট্টগ্রামে আসা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিদিন সিএনজি করে মইজ্জারটেক আসি। এরপর আবার গাড়িতে উঠি। আজ দুয়েকটা সিএনজি চললেও তা ভাড়া নিচ্ছে অন্যান্যদিনের তুলনায় ডাবল। প্রতিদিন মইজ্জারটেক আসি ১৫ টাকা দিয়ে। আজ নিয়েছে ৩০ টাকা। আর মইজ্জারটেক থেকে কর্ণফুলী ব্রিজ ১০ টাকার ভাড়ার স্থলে নিয়েছে ২০ টাকা।’
সরবরাহ স্বাভাবিক হলে ভাড়া কমবে
এদিকে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলে যানবাহনের ভাড়া কমবে বলে দাবি যানবাহন মালিক সমিতি কর্তৃপক্ষের। এ বিষয়ে মহানগর সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্যাসের সংকটের কারণে অর্ধেকেরও বেশি সিএনজি অটোরিকশা, হিউম্যান হলার ও প্রায় মিনিবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এলপিজি বোতলজাত এবং অন্যান্য জ্বালানি দিয়ে চলা বিভিন্ন হাল্কা যানবাহন ও রিকশা দ্বিগুণের বেশি ভাড়া নিচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলে এ সংকট কমবে।
সিলিন্ডার ও চুলার দাম বাড়তি
গ্যাস সংকটের কারণে খাবার তৈরিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে ছুটেছেন এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাসের দোকানগুলোতে। সে সুযোগে বাড়তি দরে বিক্রি করেছে সিলিন্ডার ব্যবসায়ীরা।
বাকলিয়া কোরবানিগঞ্জ এলাকার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গ্যাসের সংকটে নির্ধারিত দরের চেয়ে চড়া দরে বিক্রি করছে সিলিন্ডার। ১২ কেজি ওজনের যে সিলিন্ডার ১ হাজার ৪০০ টাকা বিক্রি করতো তা আজকে নিয়েছে ১ হাজার ৫৫০ টাকা।’
সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের দাবি, চাহিদার তুলনায় সরবরাহের ঘাটতির কারণে এজেন্ট ও পাইকাররা তাদেরকে চড়া দরে সিলিন্ডার বিক্রি করছে। ফলে খরচের সাথে সমন্বয় করে কিছুটা বাড়তি ধরে বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে গ্যাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চুলার দামও। বাজারে এলপিজি গ্যাসের যেসব মানের লোকাল ব্র্যান্ডের এক বার্নারের চুলা ১ হাজার থেকে দেড় হাজারের মধ্যে যেত তা শনিবার বিক্রি হয়েছে ২ হাজার টাকা থেকে আড়াই হাজারের ওপরে। তাছাড়া রয়েছে নানা কোম্পানির ব্যান্ডের বৈদ্যুতিক চুলা। যা মানভেদে ৬ হাজার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে।
শাহ আমানত মার্কেটে চুলা কিনতে আসা মো. আলী নামে এক ব্যাংকার বলেন, ‘এমনিতে নিত্যপণ্যের সবকিছুর দাম চড়া। তার মধ্যে গত দেড় মাস ধরে গ্যাসের সংকট। শুক্রবার থেকে আরও বেশি সংকট। যার জন্য চুলা কিনতে আসলাম। কিন্তু দাম শুনে অনেকটা হতাশ। বাজেটের মধ্যে চুলা কিনতে পারছি না।’
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) গৌতম চন্দ্র কুণ্ডু বলেন, শুক্রবার রাতে কর্ণফুলী প্রকৌশলীরা ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের কারিগরি ত্রুটি সমাধান হয়েছে। আজ (শনিবার) সকাল থেকে টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে।’