জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী দিন দিন আরও উষ্ণ হচ্ছে। ২০১৬ সালে বিশ্বে গড় সবচেয়ে উষ্ণ তাপমাত্রার যে রেকর্ড ছিল, এ বছরের তাপমাত্রা তাকে ছাড়িয়ে গেছে। এ বছর ৬ জুলাই ছিল এযাবৎ পৃথিবীতে সবচেয়ে গরম দিনের রেকর্ড।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের কর্মকা-ের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হওয়ায় প্রায়ই দাবদাহ দেখা যাচ্ছে। তীব্র গরমের কারণে মানুষের শরীরের ওপর প্রচ- চাপ তৈরি হয়। এতে পানিশূন্যতা, হিটস্ট্রোক, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
অতিরিক্ত গরমের কারণে যখন মানুষের শরীরের তাপমাত্রা-নিয়ন্ত্রকগুলোর কার্যক্ষমতা কমে যায়, তখন ক্লান্তি, মাথাব্যথা, জ্বর দেখা দেয় এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মানুষের জন্য শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ধরে রাখাটা কঠিন হয়ে পড়ে।
আরেকটি লক্ষণ হলো পানিশূন্যতা। মানুষের শরীর থেকে যদি বেশি পরিমাণ তরল বেরিয়ে যায়, অর্থাৎ গ্রহণ করা তরলের চেয়ে বের হয়ে যাওয়া তরলের পরিমাণ বেশি হয়, তখন পানিশূন্যতা দেখা দেয়।
শরীরের তাপমাত্রা যখন ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) চেয়ে বেশি হয়, তখন হিটস্ট্রোক হতে পারে। একে গরমজনিত গুরুতর অসুস্থতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
বিশ্বে যে চরম আবহাওয়া বিরাজ করছে বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। চরম গরম আবহাওয়ার সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের মানুষের জীবন, জীবিকা ও স্বাস্থ্যের ওপরে পড়ছে।
যুক্তরাজ্যের গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের একটি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা বলছে, প্রচ- গরমের কারণে বাংলাদেশে শ্রমিকদের কর্মক্ষমতা কমছে। তাঁদের মধ্যে দুই খাতের শ্রমিক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
প্রথমত, তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিক। দ্বিতীয়ত, কৃষিশ্রমিক। গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, গরমের কারণে এই দুই খাতের শ্রমিকেরা আগের চেয়ে কম কাজ করতে পারছেন। তাঁদের স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হচ্ছে। আর সামগ্রিকভাবে জাতীয় উৎপাদন কমে আসছে। বাংলাদেশের শ্রমশক্তির ৩৭ শতাংশ কৃষিতে ও ২২ শতাংশ শিল্পকারখানায়।
গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, উষ্ণতা যে হারে বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে ২০৮০ সালের মধ্যে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। আর তাতে এখানকার শ্রমিকদের কর্মক্ষমতা ৪৬ শতাংশ কমে আসতে পারে। জরুরি পদক্ষেপ না নিলে শিল্প ও কৃষি খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। গবেষণাটিতে পরামর্শ হিসেবে শ্রমিকদের জন্য দিনের বেলা কাজ না করে রাতের বেলা কর্মসময় ঠিক করার জন্য বলা হয়। প্রতি ঘণ্টায় ১৫ মিনিট করে কাজের বিরতি দিলে একজন মানুষের কর্মশক্তি বাড়ে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বিশ্বের অনেক দেশে এভাবে বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া হয়। এতে তাঁদের শরীর সুস্থ থাকে। গরমের কারণে কর্মদক্ষতা কমে না। একই সঙ্গে কাজের জায়গা বা কারখানাগুলোতে বাতাস প্রবাহের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি তা যাতে অতিরিক্ত উষ্ণ না হয়, সে জন্য ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে।
দেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে ভরা বর্ষায় অর্থাৎ জুন-জুলাই মাসেও বৃষ্টি কমছে। ফলে ওই সময়ে গরম বাড়ছে। আর আবহাওয়ার পরিবর্তন ও প্রকৃতি ধ্বংস করায় গ্রীষ্মকাল আরও উষ্ণ হয়ে উঠছে। গত বছরও জুলাই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৮ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। আর এপ্রিল ও মে মাস ছিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম। ফলে আমাদের এই অতি উষ্ণ গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালের সঙ্গে কীভাবে খাপ খাইয়ে চলা যায়, সেই উদ্যোগ নিতে হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ