গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের ৪ ধাপ অগ্রগতি হয়েছে গত বছরের তুলনায়। ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইইউ) এর তথ্যমতে, করোনা মহামারিতে বিশ্বের নানা দেশে গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে অবনমন হলেও বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। ১০ পয়েন্টের মধ্যে স্কোর ৫.৯৯। ১৬৫ দেশ ও দুটি অঞ্চলের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬তম। ২ বছর আগে ছিল ৮৮ অর্থাৎ বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নতি করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভাল অবস্থানে আছে ভারত, স্কোর ৬.৬১ নম্বর। এরপরে রয়েছে শ্রীলঙ্কা স্কোর ৬.১৪, সর্বনি¤œ অবস্থানে আছে আফগানিস্তান ও মিয়ানমার। তালিকার শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে, স্কোর ৯ দশমিক ৮১। ৫টি বিষয় নিয়ে সূচক তৈরি করা হয়। এগুলি হল নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, সরকারের সক্রিয়তা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নাগরিক অধিকার।
বাংলাদেশের অবস্থান মিশ্র শাসনে। মহামারির সময় প্রথম ২/৩ মাস মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হলেও দ্রুতই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও মানুষের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় সরকার, এর মধ্যে প্রায় সোয়া লক্ষ কোটি টাকার প্রণোদনাও রয়েছে। অনেক উন্নত দেশে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে সময় লেগেছে দীর্ঘদিন, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নতি দেখিয়েছে যা দেশি বিদেশি বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করেছেন।
নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বহুদলীয় রাজনৈতিক দলের অবস্থান গণতন্ত্র বিকাশে জরুরি। নিয়মিত বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচন হলেও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা, সংকট রয়েছে। বিরোধীদল অধিকাংশ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে নানা কারণে অনীহা প্রকাশ করে, সাইনবোর্ড সর্বস্ব অনেক দল রয়েছে যে গুলির কোন কার্যকলাপ নেই, আবার বিরোধীদলের যে গঠনমূলক ও ইতিবাচক কর্মকা- চালানো প্রয়োজন, সে ক্ষেত্রেও ঘাটতি রয়েছে। বিরোধীদলের অভিযোগ, সরকার বিরোধী দলের রাজনৈতিক প্রচারÑপ্রচারণায় বাধা দেয়, শর্তারোপ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি সংসদে বলেছেন গণতন্ত্রের জন্য দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা প্রয়োজন। গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্বার্থেই বিরোধী দলের যথাযথ বিকাশ, নির্বাচন, রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। সংসদে বিরোধীদলের সক্রিয় ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। সংখ্যায় অল্প হলেও সরকারের নানা কাজের সমালোচনা, জনগণকে দেশের প্রকৃত অবস্থা জানতে সাহায্য করে, তাদের সচেতন করে। বিরোধী দলের ভূমিকা জনমত গঠনেও প্রয়োজন। সংসদীয় কমিটিগুলিকে আরও ক্ষমতা দেয়া প্রয়োজন যাতে তারা নির্বাহী বিভাগকে সংসদে নেয়া সিদ্ধান্তগুলি কার্যকর করতে নজরদারি করতে পারে।
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় দুর্নীতি প্রতিরোধ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জনপ্রতিনিধিদের কাছে নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহিতা রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিচায়ক, এ ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে। জনগণের নাগরিক অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করা এবং এতে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানো প্রয়োজন। দুর্নীতিমুক্ত শাসনব্যবস্থা ও আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার অবসান, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের সক্রিয়তা গণতন্ত্রের বিকাশ ও জনগণের অধিকার সুরক্ষায় রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে।
মতামত সম্পাদকীয়