মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি
নিজস্ব প্রতিবেদক »
সারাদিন রোজা রেখে ইফতারে মুখরোচক খাবার না হলে যেন রোজার তৃপ্তি মেটে না। পরিবার পরিজনের সাথে প্রথম ইফতার আয়োজনে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবার কিনতে এসেছেন আলী ইয়াছিন। কিন্তু তিনি যেসব খাবার কিনছেন তা কি স্বাস্থ্যকর খাবার?
এমন প্রশ্নে আলী ইয়াসিন বলেন, ‘রমজানে ইফতারের জন্য বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ প্রসিদ্ধ। সেসব হোটেল বা রেস্তোরাঁ থেকে ইফতার কিনে ইফতার করার মধ্যে এক সুখানুভূতি আছে। তাই আমার মত অনেক মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে ইফতারের বাজার করছে। স্বাস্থ্যকর বা অস্বাস্থ্যকর খাবার আমরা ইফতারের গ্রহণ করছি। এখানে এ বিষয়টি মুখ্য নয়। বরং প্রসিদ্ধ খাবারে ইফতার করাটাই মূল লক্ষ্য।’
গতকাল রোববার প্রথম রোজায় নগরীর নিউমার্কেট, বহদ্দারহাট, চকবাজার, রেয়াজউদ্দিন বাজার, আগ্রাবাদ, ইপিজেডসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে- হোটেল, রেস্তোরাঁ ছাড়াও প্রতিটি অলিগলিতে বিক্রয় করা হচ্ছে ইফতারসামগ্রী। দুপুর থেকে ইফতারসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন তারা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতেই বিকিকিনির হিড়িক পড়ে। ইফতারসামগ্রী কিনতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিড় করছে এসব দোকানে। কোন কোন ইফতারসামগ্রী বিক্রয় কেন্দ্রে দেখা গেছে, দুপুর থেকে ক্রেতার লাইন।
নগরের রেস্তোরাঁগুলোতে ইফতারের জন্য রাখা হয়েছে বাহারি আয়োজন। এতে হরেক রকম মানসম্মত মুখরোচক খাবারসহ রাখা হয়েছে রাতের খাবারের ব্যবস্থা। এসব রেস্তোরাঁয় দেখা গেছে, তারা স¦াস্থ্যসম্মত পরিবেশে খাবার রেখে বিক্রয় করছে। তাছাড়া করোনা ভাইরাসের প্রকোপ না থাকায় রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণেরও ব্যবস্থা রেখেছে।
এসময় দেখা যায়, রেস্তোরাঁগুলোতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় থাকলেও এলাকাভিত্তিক দোকানগুলোতে মানা হচ্ছে না কোন স্বাস্থ্যবিধি। আবার এসব খোলামেলা দোকানগুলো নিম্ন আয়ের মানুষের ইফতারের দোকান হিসেবে সুপরিচিত । এসব দোকানেই অপরিচিত লোকদের সাথে নিয়ে ইফতারের স্বাদ নিচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষ। তবে এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ না করতে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বিভিন্ন স্পটে রাস্তা কাটার কারণে ধুলোবালিতে পরিপূর্ণ নগর। সেসব রাস্তাকাটা স্থানে খোলামেলা পরিবেশে বিক্রি করা হচ্ছে ইফতারসামগ্রী। গ্লাসে তৈরি শোকেজে রাখা হয়েছে খাদ্যসামগ্রী। আবার কিছু কিছু দোকানে দেখা গেছে আলতো এক পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে খাবার। তাছাড়া এসব খাবার পরিবেশনের বা প্যাকেজিংয়ের দায়িত্বে যারা রয়েছে তাদের হাতে ছিল না কোন স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী।
খোলা পরিবেশে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রাখা খাবারগুলো কতটা স্বাস্থ্যসম্মত থাকছে তা জানতে কথা হয় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিপ্লব বড়ুয়া সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কখনো খোলা পরিবেশে বিক্রয় করা যাবে না। যদিও বিক্রি করা হয় এতে যথাযথ আবরণ বা ঢাকনা ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখতে হবে। নির্দিষ্ট তাপমাত্রা কেমন হতে পারে সে বিষয়ে তিনি বলেন, ৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় রাখা হবে। এতে কোন ব্যাকটেরিয়া থাকলে তা নষ্ট হয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব খোলামেলা রাখা খাবার থেকে বায়ুবাহিত রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। যেহেতু আমরা এখনও কোভিড থেকে মুক্তি পাইনি। সেহেতু খাবার গ্রহণের বিষয়ে নিজেদের প্রতি যত্নবান হওয়া অবশ্যক। তাছাড়া খাবারের মান যাচাইয়ে অবশ্যই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা দরকার।’
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে ডাইরিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। তাই খাবার গ্রহণে আমাদের অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। তাই খোলামেলা স্থানের খাবার গ্রহণ না করে ঘরোয়া পরিবেশে তৈরি খাবারের দিকে মনোনিবেশ করাটা উচিত।’