নিজস্ব প্রতিবেদক»
নগরীর ২ নম্বর গেট চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের বিপরীতে ষোলশহর ভূমি অফিস এলাকায় সোমবার বিকেলে চশমা খালে খেলনা কুড়াতে গিয়ে মো. কামাল উদ্দীন (১২) নামে এক শিশু নিখোঁজ হয়েছে।
২৩ ঘণ্টা পর গতকাল মঙ্গলবার দুপুর তিনটায় খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে। আবর্জনার কারণে কাজে বিঘ্নিত হলে আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এরপরও শিশুটির খোঁজ মেলেনি। গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় অভিযান সমাপ্ত করে ফায়ার সার্ভিস।
জানা গেছে, নগরীর ষোলশহর জংশনসহ আশপাশের এলাকা থেকে নানা ফেলনা জিনিসপত্র কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করে দু’বন্ধু মো. কামাল উদ্দীন ও মো. রাকিব।
রাকিব জানায়, প্রতিদিনের মত সোমবার বিকেলে দুই বন্ধু একসঙ্গে বেরিয়েছি। ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে হেঁটে আসার সময় ড্রেনে (চশমা খালে) বড় খেলনা দেখে ঝাঁপ দিয়েছি। বৃষ্টির কারণে খালে পানি ও স্রোত ছিল। স্রোতের টানে গা ভাসিয়ে খেলনাটার জন্য মরিয়া হয়ে দুইজন খুব দ্রুত যাচ্ছিলাম। ষোলশহর ভূমি অফিসের সামনে যেতেই ময়লার স্তূপের নিচে চলে যায়। খালে বাঁধ থাকায় আটকে গিয়ে ভেসে উঠে দেখি কামাল নেই। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে জংশনে চলে যাই। পরে অন্য মানুষের মাধ্যমে বিষয়টি আব্বাকে (কামালের বাবা) জানিয়েছি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চশমা খালের ষোলশহর ভূমি অফিস অংশে একটি বাঁধ রয়েছে। বাঁধে আটকে খালে প্রচুর পরিমাণে আবর্জনা জমেছে। এসব আবর্জনা ঠেলে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযানে নামে। অতিরিক্ত আবর্জনার কারণে বেশ কয়েকবার নেমেও বিফল হয়ে উঠে আসতে দেখা গেছে ডুবুরি মোহাম্মদ জাহিদকে। তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘অতিরিক্ত ময়লা ও অন্ধকার হওয়ায় উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। ময়লা পরিষ্কার করা হলে আশা করি কিছু একটা করা যাবে।’ পরে চসিকের সহায়তায় স্কেভেটর দিয়ে খাল পরিষ্কার করে আবারো উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়।
নিখোঁজ কামালের বাবা মো. আলী কাউছার কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সোমবার বিকেলে কামাল তার বন্ধু রাকিবের সাথে বেরিয়েছিল। ৬টার দিকে একজন এসে জানায় খালে নেমে কামাল নিখোঁজ রয়েছে। দ্রুত গিয়ে খালে নেমে ভোর ৫টা পর্যন্ত ছেলের খোঁজ করি। কিন্তু পাইনি। ওই সময় খালে প্রচুর পানি ও স্রোত ছিল। আমি ডুবে যাচ্ছিলাম। সকালে ছেলের বন্ধু জাকির, বাদশা, সোনালী, গুরু, রাকিবসহ আবারো তন্ন তন্ন করে খুঁজি। তাও খুঁজে পেলাম না। আমাদের দিশেহারা অবস্থা দেখে একজন লোক এসে জিজ্ঞেস করায় তাকে ঘটনা বলেছি।’
চার সন্তানের মধ্যে কামাল সবার ছোট বলে জানান বাবা কাউছার। তিনি বলেন, ‘সে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সন্তানদের নিয়ে ষোলশহর জংশন এলাকায় থাকি। যদিও আমার বাড়ি দেওয়ান বাজার মাছুয়া ঝর্না এলাকায়।’
স্থানীয় বাসিন্দা সামির হোসেন মোহন সুপ্রভাতকে বলেন, ‘অনেকক্ষণ ধরে খালের মধ্যে বেশ কিছু ছোট বাচ্চা কি যেন খুঁজছিল। কৌতূহল বশত জানতে চাইলে তারা জানান, সোমবার বিকেলে খালে নেমে এক শিশু নিখোঁজ রয়েছে। পরে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছি।’
বায়েজিদ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. তানভীর আহমেদ সুপ্রভাতকে বলেন, ‘বিকেল ৩টা নাগাদ সংবাদ পেয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেছি। বায়েজিদ ও আগ্রাবাদের তিনটি ইউনিট উদ্ধার কাজ পরিচালনা করেছে। ডুবুরি দল বেশ কয়েকবার খালে নেমেছে। ময়লা এবং মশা বেশি হওয়াতে উদ্ধার কাজে বেগ পেতে হয়েছে।’
উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া তানভীর আহমেদ আরো বলেন, ‘খালে বাঁধ থাকায় পাশের সংযোগ খাল দিয়ে ভেসে যাওয়ার ধারণা করা হচ্ছে। অন্যথায় ময়লার স্তূপেও আটকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ময়লা পরিষ্কার হলে আবারো উদ্ধার অভিযান চালাবো।’
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রায় ফুটপাতের নালায় স্লেপ দেওয়া হয়ে গেছে। জানুয়ারির মধ্যে মেগা প্রকল্পের আওতাধীন ছাড়া সকল নালায় স্লেপের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যেসকল নালায় স্লেপ দেওয়া যাবে না এতে বেরিয়ার দেওয়া হবে।’
এর আগে ২৫ আগস্ট মুরাদপুর এলাকার এ খালে পড়ে সালেহ আহমদ (৫৫) নামে একজন নিখোঁজ হলে এখনও তার খোঁজ মেলেনি।