নিজস্ব প্রতিবেদক »
বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে বৃহত্তর পাইকারি ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নেমে এসেছে স্থবিরতা। গতকাল সোমবার নগরীর খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, অনান্য স্বাভাবিক দিনের তুলনায় গত সপ্তাহ (১ আগস্ট) থেকে কমেছে সকল বেচাকেনা। স্বাভাবিক অবস্থায় যেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত ট্রাকে ভোগ্যপণ্য আসতো। শ্রমিকরাও ট্রাক থেকে মালামাল নামাতে গিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতেন। কিন্তু এখন একেবারেই অলস সময় পার করছেন দিনমজুর ও ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়িক লেনদেনের পরিমাণও কমে এসেছে অর্ধেকেরও নিচে।
চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত এক সপ্তাহ ধরে বেচাকেনা একেবারেই নেই। নগরী ও তার আশেপাশের বিভিন্নস্থান থেকে ক্রেতারা তেমন বাজারে আসেনি। তবে চাল, ডাল, লবণ, মরিচ, মসলা, ময়দা, ভোজ্যতেল ও আটাসহ নানা নিত্যপণ্যের মজুদ এখনও যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। কিন্তু জলাবদ্ধতা ও বৃষ্টির কারণে বাজার হয়ে পড়েছে ক্রেতাশূন্য। এ অবস্থায় গুদামজাত ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অনান্য নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীরাও লোকসানের আশঙ্কা প্রকাশ করছে।
গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে আমির মার্কেট, হামিদউল্লাহ মার্কেট, মোল্লা বাণিজ্য বিতান এলাকা, আছাদগঞ্জ, রাজাখালি রোড়, চাউলপট্টি, ময়দার মিল, খালের পাড় এলাকার বেশকিছু গুদামে পানি প্রবেশ করেছে। এতে বেশ কিছু ব্যবসায়ীর গুদামের মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মধ্যম চাক্তাইয়ের পেঁয়াজ, আদা, রসুনের পাইকারি ব্যবসায়ী মের্সাস আবুল বাসার এন্ড সন্স এর স্বত্বাধিকারী হাজী মো. আবুল বাসার বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে এক বস্তা পেঁয়াজও বিক্রি হয়নি। গ্রামগঞ্জ থেকে কোন ক্রেতা আসছে না। এভাবে চলতে থাকলে পচনশীল পণ্য বিশেষ করে পেঁয়াজ, আদা, রসুন গুদামে নষ্ট হয়ে যাবে। এতে পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের বড় লোকসান হবে।
চাক্তাইয়ের ফোরকান ট্রের্ডাসের স্বত্বাধিকারী মো. ফোরকান বলেন, ‘বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে দেশের বিভিন্ন উপজেলা ও নগরের খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনতে আসতে পারছেন না। আমরাও পণ্য নিয়ে বসে আছি, অথচ বিক্রি করতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে অনেক পচনশীল পণ্য নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে ব্যবসায়িক সরবরাহ চেইন ভেঙে যাবে। এতে বাজার অস্থির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
খাতুনগঞ্জ হামিদউল্লাহ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘বাজারে পণ্যের মজুদে কোন ঘাটতি নেই। কিন্তু গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে ক্রেতারা বাজারে আসতে পারছেন না। ফলে পাইকারি ব্যবসা-বাণিজ্যে এক প্রকার ধস নেমেছে। যদি এভাবে আরো কয়েকদিন বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতা চলতে থাকে তাহলে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মধ্যে পড়তে হবে।’
খাতুনগঞ্জের মোল্লা বাণিজ্য এলাকায় রোববার দুপুরে কথা হয়ে দিনমজুর শাহাদাত হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে কোন মালামাল লোড-আনলোড করতে হয়নি। ব্যবসায়ীদের কেনাবেচা ভালো হলে আমাদের মালামাল ট্রাকে লোড করতে হয়। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে বসে আছি।’
হামিদউল্লাহ মার্কেট এলাকার দিনমজুর আবদুল হালিম বলেন, ‘রাজাখালির একটি বস্তিতে ভাড়া বাসায় থাকি। বাসায় পানি ডুকছে। এ কয়েকদিন বাসার মালামাল সরাতে ব্যস্ত ছিলাম। তার মধ্যে আড়তে কোন কাজ না থাকায় এক টাকাও আয় নেই। গ্রামের বাড়িতে এক সপ্তাহ ধরে কোন টাকা পাঠাতে পারিনি।’
মধ্যম চাক্তাই এলাকার দিনমজুর রমজান আলী বলেন, ‘আমার সপ্তাহে তিনটি এনজিওর কিস্তি চালাতে হয়। কিন্তু এ এক সপ্তাহ ধরে ট্রাকে কোন মালামাল লোড করতে হয়নি। ফলে কোন আয় হয়নি। এক ব্যবসায়ী থেকে আগাম ঋণ নিয়ে বাড়িতে কিছু টাকা পাঠিয়েছি।’



















































