নিজস্ব প্রতিবেদক »
বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. আমিনুর রহমান বলেছেন, ‘রমজান মাসকে ঘিরে অনেকে অতি মুনাফা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যের মাধ্যমে বাজার অস্থিতিশীল করতে চায়। যারা এ ধরনের কার্যক্রমে লিপ্ত হবে কিংবা কৃত্রিম সংকট তৈরি করবে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে প্রশাসন। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের তদবির বা ছাড় দেয়া হবে না।’
গতকাল সোমবার সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে মতবিনিময়কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।
সভায় তিনি আরও বলেন, ‘একটি দেশ ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও আমলা এই তিন চাকার সমন্বয়ে চলে। কিন্তু এ তিনের সমন্বয় না হলে আমরা বিপদে পড়ে যাব। তাই এ তিন চাকার মধ্যে সমন্বয় জরুরি।’
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম’র সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জ’র ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল মো. আনোয়ার হোসেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ড. বদিউল আলম ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর’র উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘রমজান ও ঈদকে ঘিরে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নির্বিঘœ রাখতে আমরা মনিটরিং বাড়িয়ে দিব। পাশাপাশি প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনে সাধারণ জনগণের স্বার্থে সর্বদা প্রস্তুত থাকবে আইন-শৃংখলা বাহিনী।’
ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় উল্লেখ করে চট্টগ্রাম রেঞ্জ’র ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রমজান পবিত্র মাস। তাই নৈতিকতার দিক বিবেচনা করে সীমিত লাভ করে পণ্য বিক্রি, ভেজালরোধ এবং কৃত্রিম সংকট না করে জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ড. বদিউল আলম বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয় ও মনিটরিং না থাকায় আমরা এ ধরনের সভা করছি। ব্যবসায়ীরা যদি সচেতন হয় তাহলে প্রশাসনের কঠোরতার প্রয়োজন হয় না। তবে যারা অসাধু উপায় অবলম্বন করবে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সাপ্লাইচেইন ব্যাপকভাবে বিঘিœত হয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র দৃঢ়তায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য হ্রাসকৃত মূল্যে ভোগ্যপণ্য বিতরণ কর্মসূচি এবং আমদানিতে শুল্ক হ্রাস ও অব্যাহতিসহ নানামুখী কারণে রমজান ও ঈদকেন্দ্রিক সাপ্লাইচেইন নির্বিঘœ রয়েছে।’
বাজার মনিটরিংয়ে চেম্বার সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করে এসেছে এবং ভবিষ্যতে তা অব্যাহত থাকবে বলে অঙ্গীকার করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ব্যবসা করবো তবে অবশ্যই সাপ্লাইচেইন ঠিক রাখবো যাতে ভোক্তাদের কোন অসুবিধা না হয়। কৃত্রিম সংকট তৈরি না করে, সকল ব্যবসায়ীদের পণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন এবং মানবিক দিক বিবেচনা করে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের উৎসব কেন্দ্রিক ছাড় দেয়ার নজির স্থাপন করতে হবে।’
সভায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা কোন ভাউচার দেখাতে পারে না। ফলে ইচ্ছামত দাম বৃদ্ধি করে তারা। তাই ক্রয়-বিক্রয়ের ভাউচার ছাড়া যারা অতি মুনাফার লোভে ব্যবসা পরিচালনা করবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।’
চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের সহযোগিতায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সাপ্লাইচেইন মনিটরিংয়ের একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে চেম্বার। যার মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্যের কারসাজিরোধ হবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, প্রশাসন ও নীতিনির্ধারকরা মুহূর্তেই জানতে পারবেন পণ্যের মজুদ, দাম ও সরবরাহ।’
সভায় ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক সমিতির প্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু, ক্যাব’র সাধারণ সম্পাদক ইকবাল বাহার সাবেরী, মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সালামত আলী, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান, পাহাড়তলী ব্যবসায়ী সমিতির জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর দোকান মালিক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল আলম, মেট্রোপলিটন শপ ওনার্স এসোসিয়েশন’র আবুল কাশেম, চট্টগ্রাম ফ্রেশ ফরোয়ার্টস ভেজিট্যাবলস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব রানা, মিমি সুপার মার্কেট’র সভাপতি জয়নাল আবেদিন কাঞ্চন, চাকতাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম মহিউদ্দিন (মুহিম)।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের জয়েন্ট কমিশনার মোহাম্মদ তফছির উদ্দিন ভূঁঞা, এ. কে. এম. আক্তার হোসেন, মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী প্রমুখ।