সৈয়দ মোহাম্মদ জাহেদুল হক »
কিডনিÑবিকল একটি মরণঘাতি রোগ। পরিসংখ্যান মতে দেশের মোট জনশক্তির ১৬-১৮ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় পৌনে ৩ কোটি মানুষ কোনো না কোনো ভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। প্রতিবছর এ রোগের মিছিলে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ৪০-৫০ হাজার মানুষ। এ রোগ দীর্ঘস্থায়ী, চিকিৎসাও (মৃত্যুর দিনক্ষণ পর্যন্ত) দীর্ঘমেয়াদি এবং চিকিৎসা খরচ অসম্ভব ব্যয়বহুল। দেশে মোট শিশু রোগীর ৫-৭ শতাংশই কিডনি রোগে আক্রান্ত। মূলত কিডনি বিকল একটি মাত্র রোগ নয়, প্রাণঘাতি নানা রোগের প্রজনন কেন্দ্র। প্রতিবছর মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত, দরিদ্র-হতদরিদ্র শ্রেণির অসংখ্য রোগী ব্যয়বহুল চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করছে। উচ্চবিত্ত ও ধনাঢ্য রোগীরাও চিকিৎসার পেছনে দৌড়াতে গিয়ে একসময় নিঃস্ব হয়ে পড়ে। প্রবাদ আছে “কিডনি রোগী মরেও যায়-মেরেও যায়”। একসময় উন্নত চিকিৎসার অভাবে সামর্থ থাকলেও জীবন বাঁচানো যায়নি আর বর্তমান দুনিয়ায় সর্বত্র উন্নত চিকিৎসা বিদ্যমান। মানুষ মরছে শুধু সামর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে। বিনা চিকিৎসায় নিরবে নিঃশব্দে কিডনি রোগে অসংখ্য মানুষের অকাল মৃত্যুর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা আশংকাজনক মৃত্যুর হার সম্পর্কে অবগত নয়। কিডনি রোগে মৃত্যুর মিছিল থামাতে মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্রকে জাগিয়ে তোলার প্রত্যয়ে “কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থার” পথ চলা শুরু। উল্লেখ্য যে, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা একজন মানুষের মৃত্যু পরবর্তী শোকের মাতন, মেজবান এবং সামাজিক নানা আনুষ্ঠানিকতার পেছনে যে অর্থ ব্যয় করে থাকেন রোগীর জীবদ্দশায় কিঞ্চিৎ পরিমান অর্থও যদি চিকিৎসা খাতে ব্যয় করা হলে হয়তো রোগীর অকাল মৃত্যু হত না। ‘বর্তমান সমাজ বেঁচে থাকতে বুঝে না, বুঝে হারিয়ে’। জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়ার আগেই সমাজকে জাগাতে “কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা’র” দৃঢ় প্রত্যয় “আমরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি”।
আর এটি সম্ভব শুধুমাত্র মানবিক সমাজের আন্তরিক সহযোগিতা এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে দুস্থ, অসহায় ও গরিব রোগীদের প্রতি অধিকতর সহানুভূতিশীল চিকিৎসা ব্যয় নির্ধারণ। চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নসহ স্বাস্থ্যখাতে পরিপূর্ণ শৃংখলা প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস্ এক মারাত্মক মহামারি রূপে প্রকাশ পেয়েছে। মূলত কিডনি বিকলের অন্যতম উপসর্গ হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস্। কিডনি বিকল হওয়ার ফলে রক্তে সংক্রমণজনিত কারণে লিভার, ফুসফুস, হৃদরোগসহ শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ভবিষ্যতে কিডনি, ফুসফুস, লিভার ও হার্ট এর উপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে মর্মে আশংকা ব্যক্ত করেছেন। এমনিতেই কিডনি চিকিৎসা অসম্ভব ব্যয়বহুল। তার ওপর বহুমাত্রিক রোগব্যাধির চিকিৎসা কোনো একক ব্যক্তি বা পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মারাত্মক কিডনি আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে থেকে হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র ডায়ালাইসিস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলেও অবশিষ্ট কিডনি রোগীরা সামর্থের অভাবে চিকিৎসা শুরুর আগেই বা চিকিৎসার মাঝপথে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে।
শুধুমাত্র কিডনি উপসর্গের ক্ষেত্রে প্রতিমাসে ডায়ালাইসিস, ডাক্তার ভিজিট, পরীক্ষা নিরীক্ষা, ওষুধপত্র মিলে একজন রোগীর ন্যূনতম খরচ ৫০-৬০ হাজার টাকা প্রায়। একই রোগীর মধ্যে অন্যান্য জটিল রোগের উপসর্গ ও সংক্রমন বিদ্যমান থাকলে তার চিকিৎসা ব্যয়ের পরিমান সম্পর্কে বলার অপেক্ষা রাখে না।কিডনি রোগে আক্রান্ত বিপদগ্রস্ত রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে মানবিক সমাজকে জাগ্রত করে চিকিৎসা প্রাপ্তি নিশ্চিতে একটি সংস্থা অতিব জরুরি। এই কষ্টবোধ থেকে “কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা”-“করফহবু চধঃরবহঃ ডবষভধৎব অংংড়পরধঃরড়হ”Ñ প্রাথমিক পর্যায়ে ১) কিডনি রোগ প্রতিকারে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি ২) দুঃস্থ অসহায় কিডনি রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা এবং ৩) কিডনি রোগীর বিপর্যস্ত পরিবারের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কর্মদক্ষতা সহায়ক প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা নিয়ে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করেছে। এ কঠিন কাজে রাষ্ট্র ও মানবিক সমাজের আন্তরিক সহযোগিতার কোন বিকল্প নেই।
লেখক : সভাপতি
কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা