মূল গেইট বন্ধ, ভেতরে খোলা
নিজস্ব প্রতিবেদক <<
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নগরের মার্কেটগুলোতে চলছে বিকিকিনি। সরকারি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে মার্কেট খোলা রাখা যাবে না। কিন্তু জীবন জীবিকার স্বার্থে ও বড় ক্ষতি থেকে বাঁচতে বেশিরভাগ মার্কেটের মূল গেইট স্বল্প পরিসরে খোলা রেখে ভেতরে চলছে বিকিকিনি। দিনের বেশিরভাগ সময় ক্রেতা না থাকলেও কিছুটা সময় পাইকারি বিকিকিনির উদ্দেশ্যে খোলা রাখা হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। যাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাস্তার পাশে তারা প্রতিষ্ঠান খুলতে না পারায় নিজ দোকানের সামনে হকারের মত বসে পড়েছেন ফুটপাতে।
সরেজমিনে রেয়াজউদ্দিন বাজার ও টেরিবাজারে দেখা যায়, সাধারণ সময়ের চেয়ে কম হলেও মার্কেট এলাকাগুলোতে রয়েছে জনসমাগম। কিছু কিছু অংশে রয়েছে ভিড়ও। প্রতিটি মার্কেটের মূল ফটক এমনভাবে রাখা হয়েছে। দেখে মনে হবে মার্কেট পুরো বন্ধও নয়, আবার খোলাও নয়। মার্কেটের গেইটের সামনে যেতেই ডাক আসে। কি লাগবে ভাই? ভেতরে খোলা আছে। ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। বেশিরভাগ দোকান খোলা। সাজানো রয়েছে দামি কাপড় চোপড়। এতে কোন কোন দোকানের মূল ফটক অল্প খোলা, আবার কোনো দোকানের ফটক পুরোপুরিভাবে খোলা রয়েছে। বাইর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ভেতরে কি চলছে। মার্কেট বন্ধ মনে হলেও ভেতরে মার্কেট খোলা রয়েছে।
দোকানগুলো খোলা থাকলেও নেই আশানুরূপ ক্রেতা। দোকানের সামনে হাঁটলেই প্রতি দোকান থেকে ডাক আসে। ভাল কাপড়ের কালেকশন আছে। ভেতরে বসে দেখে নিতে পারবেন। কিছু বিক্রির জন্য তারা গলা ফাটালেও ক্রেতা খুব একটা মিলছে না।
কিছু কিছু দোকানে কয়েকজন ক্রেতা থাকলেও ভিড় নেই অন্যগুলোতে। তবে ক্রেতাদের স্বাচ্ছন্দ্যে জিনিসপত্র ক্রয় করতে দেখা যায়। কিছু কিছু দোকানের সামনে হকারের মত জামা কাপড় বিক্রি করতে দেখা যায়। তবে তারা হকার নন। দোকান রাস্তার সাথে থাকার কারণে প্রশাসনের জরিমানার ভয়ে খুলতে পারছেন না। রঙ পছন্দ না হলে ভিন্ন রঙয়ের কাপড় বের করে দিচ্ছে দোকানের ফটক খুলে।
টেরিবাজারের একজন ক্রেতা ইয়াসমির জান্নাত বলেন, ‘ঘরের কিছু টুকিটাকি বাজার করতে মার্কেটে এসেছিলাম। কিন্তু মার্কেট ফাঁকা থাকায় কিছু জামা কাপড় কিনে নিচ্ছি। রমজান মাসে টেরিবাজার এমন খালি থাকে না। তবে নতুন কাপড় ভিড় ছাড়া কেনা যাচ্ছে এতে ভাল লাগছে।’
রেয়াজউদ্দিন বাজারের দোকান কর্মচারী রাহাত বলেন, ‘লকডাউনের কারণে বেচা বিক্রি না হলে মালিক আমাদের বেতন কি করে দিবে? সরকার তো এসে আমাদের ঘরের চাল দিয়ে যাবে না। সরকারি ত্রাণের চালডাল তো সবাই পায় না। লকডাউনের নামে গরিবের পেটে লাথি মেরে বড় লোকদের দিচ্ছে প্রণোদনা।’
দোকান মালিক হারুন সওদাগর বলেন, ‘বসতভিটা বন্ধক দিয়ে রমজান উপলক্ষে ৩০ লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়েছি দোকানে। কিন্তু এখন ৩০ টাকাও বিক্রয় করতে পারিনি। এসব টাকা তুলে আনতে না পারলে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। কলকারখানা খোলা রাখতে নিষেধ নেই শুধু দোকানে ও গণপরিবহনে যত দোষ? সরকারের উচিত ব্যবসায়ীদের দিকে একটু নজর দেওয়া।’
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান সুপ্রভাতকে বলেন, ‘টেরিবাজার মূলত পাইকারি মার্কেট। মফস্বল এলাকায় রমজানে যাকাতের কিছু কাপড় চোপড় বিক্রয়ের জন্য পাইকারেরা দোকান খুলেছে। এজন্য আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারকে অবগত করেছি। তবে নগরের প্রবেশ মুখ বন্ধ থাকায় মাল বাইরেও যেতে পারছে না। তাই বেচাকেনাও তেমন হচ্ছে না। জোহরের পরে দোকান খোলা হয়। এসময় কিছু বেচাবিক্রি চলে।’