নিজস্ব প্রতিবেদক »
নানা জল্পনা-কল্পনার পর কালুরঘাট সেতুতে সংস্কারকাজের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রেলওয়ে বুয়েটের পরামর্শে এ সেতুর সংস্কার কাজ করবে। এদিকে, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল সেতু পরিদর্শনে বড় ধরনের ৬টি ত্রুটি পেয়েছে। তাই তারা দ্রুত যান চলাচল বন্ধ করে সংস্কার কাজ শুরু করতে ১৯টি প্রস্তাবনা পেশ করে। রেলওয়ের এ কাজ শুরু করতে ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
রেলওয়ের বিশ্বস্ত সূূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের আমন্ত্রণ পেয়ে গত বছরের মে মাসে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পর্যবেক্ষক দলের প্রধান ড. এ এফ এম সাইফুল আমিন, অধ্যাপক ড. খান মাহমুদ আমানত ও ড. আব্দুল জব্বার খান কালুরঘাট সেতু পরিদর্শন করেছিলেন। এরপর তারা তিন দফায় ৬৩৮ মিটারের কালুরঘাট সেতুর ত্রুটি নির্বাচন করে দ্রুত সেতু সংস্কারে আহ্বান জানান। ১৮ এপ্রিল বিশেষজ্ঞ দল মানুষ হাঁটাচলার জন্য একটি ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ ১৯টি প্রস্তাবনা নিয়ে ১০৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেন।
পর্যবেক্ষণে তারা কালুরঘাট সেতুর জানালিহাট অংশে আবৃত প্রাচীর এবং সুরক্ষা দেয়ালে ফাটলসহ সেতুর স্প্যানের নড়বড়ে অবস্থার কথা উপস্থাপন করেন। ফলে সেতুর ১ ও ১৫ নম্বর পিয়ার (মাটির নিচে বা পানির মধ্যে প্রসারিত থাকা কাঠামো) ইটের গাঁথুনিতে তৈরি করা ও সেতুর গার্ডার, ডেক, অ্যাঙ্গেল, গ্যাসেট প্লেট, রিভেট ও অন্যান্য অংশ দ্রুত সংস্কারের আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে পর্যবেক্ষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. এ এফ এম সাইফুল আমিন সুপ্রভাতকে বলেন, ‘সেতুর ওপরের অংশের অ্যাপ্রোচ (সেতুর সঙ্গে সংযোগ সড়ক) লাইনচ্যুত হয়েছে। এছাড়া সেতুতে গার্ডারের ভার বহনকারী ইস্পাতগুলো অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেহেতু নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণে অনেক সময় লাগতে পারে। তাই এই পুরোনো সেতুকে সর্বোচ্চ ১৫ টন এক্সেল লোডের উপযোগী করে আগামী বছর নতুন ট্রেন চালানোর কথা ভাবছে সরকার। বর্তমানে এই সেতু দিয়ে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলছে। সংস্কারের পর রেলওয়ে ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটারে উন্নীত করতে চাইলেও তা সম্ভব নয়। এটি সংস্কারের পর ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।’
সেতুর ত্রুটি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল টপোগ্রাফিক জরিপ পরিচালনা, ফাউন্ডেশন ঠিক আছে কিনা দেখতে নদীর তলদেশ পরীক্ষা, সেতুর অবকাঠামোগত ভিত্তির অবস্থা এবং স্কোয়ারিং পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার জন্য উপমৃত্তিকা ডেটা বিশ্লেষণ এবং সড়কে পথচারী, যানবাহন এবং রেল পরিচালনা খতিয়ে দেখা হয়েছে। সেতুর অবকাঠামো শক্তিশালী করতে আমরা ৬টি বড় ধরনের ত্রুটি চিহ্নিত করে রেলওয়েকে আমাদের রিপোর্ট (প্রতিবেদন) জমা দিয়েছি। যতদ্রুত সম্ভব সেতু সংস্কারের কাজ হবে, ততই ভালো। ত্রুটি ও প্রস্তাবনার বিষয়ে ডিটেইল (বিস্তারিত) রেল কর্তৃপক্ষ জানাবে।’
এ নিয়ে কথা হয় পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মো. আবু জাফর মিঞার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল পরিদর্শন করে সেতুর বিভিন্ন ত্রুটি চিহ্নিত করেছে। নতুন ট্রেন চালাতে হলে কী কী করতে হবে, এই ধরনের বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। প্রতিবেদনে তারা বলেছেন কালুরঘাট সেতুর অবস্থা খুব খারাপ। এরমধ্যে কালুরঘাট সেতুর ১৬ নম্বর স্প্যান থেকে ২৩ নম্বর স্প্যানের অবস্থা খুবই খারাপ। এছাড়া সেতুর সবকটি স্প্যানের কোনটির আপস্ট্রিমে, কোনোটির ডাউনস্ট্রিমে মরিচা ধরেছে।
সেতু সংস্কারের কর্মপরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঠিকাদার নিয়োগ কার্যক্রম জুনের আগে শেষ করে আমরা ২০ জুন থেকে কাজ শুরু করবো। প্রথমে ম্যাটারিয়ালস মোবিলাইজেশন, প্লেট সংস্কার ও বিটুমিন ঢালাই কাজ হবে। এ কাজ এক মাস চলবে। তবে প্লেট সংযোজন বা সংস্কারের কাজে অগাস্ট পর্যন্ত চলবে। এরমধ্যে অর্থাৎ জুলাই থেকে রেল ট্রাফিক লিংকিংয়ের কাজ শুরু হবে। এ কাজটি সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। এরপর মানুষ হেঁটে চলাচল করার জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে রেলওয়ে ট্রাফিক খুলে দেওয়া হবে। অক্টোবরে সেতুর ওপরের সড়ক কাজ সংস্কারের কাজ করা হবে। এজন্য আমরা ইতোমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের জন্য টেন্ডার (দরপত্র) অহ্বান করেছি।’
এতো অল্প সময়ে কিভাবে কাজ শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টেন্ডার এ মাসের (মে) ১৮ তারিখ খোলা হবে। এক মাসের মধ্যে টেন্ডার যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। নির্বাচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১৮ জুনের মধ্যে কন্ট্রাক সাইনিং করা হবে। ২০ জুন থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু হবে। পুরো কাজ বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমের পরামর্শ অনুযায়ী হবে।’